Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রক্তসরোবর জিজ্ঞাসা―কী পেলাম? কতটুকু পেলাম? এই কি চেয়েছিলাম?


২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:৩২

বায়ান্ন সমাগত। কিন্তু রক্তসরোবর জিজ্ঞাসা―‘কী পেলাম? কতটুকু পেলাম? এই কি চেয়েছিলাম?’ জানি না এ উত্তর কে দিবে। উত্তর দেওয়ার হিম্মত কী আছে কারো? মহান ভাষা দিবসের প্রথম প্রহরের আগে উত্তরগুলো রক্তঝরানো এক তরুণপ্রাণে সকরুণ হতে হয়েছে।

‘সত্যবচন’ আর ‘দাপটে’র রাজনীতিতে, অপরাজনীতিতে বলি হতে হলো নোয়াখালীর তৃণমূল পর্যায়ে এক সংবাদকর্মীকে, ২৫ বছরের তরুণ মুজাক্কিরকে। সে কি এ রাজনীতি চেয়েছিল? সে কি এ বাংলাদেশ চেয়েছিল? নাকি এ নোয়াখালী চেয়েছিল? কোনো উত্তর না জেনেই চিরবিদায় নিতে হয়েছে। মুজাক্কিরের অকাল মৃত্যুতে আমি স্তম্ভিত হইনি, কিন্তু লজ্জিত হয়েছি। মুজাক্কিরের এ অকাল মৃত্যু এখানে শেষ নয়, আরও কিছু হয়তো অবশিষ্ট আছে।

বিজ্ঞাপন

‘শান্ত নোয়াখালী’ নামে যে অঞ্চলের সন্তান হিসেবে তার অসংখ্য ব্যক্তি গর্বিত হয়েছে, গর্ববোধ করে সে অঞ্চলটি বেশ কিছুদিন ধরে আজ অশান্ত হয়েছে। তাও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্তদ্বন্ধে। ছিঃ এ রাজনীতি। ছিঃ এ অঞ্চলের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রতি। একটি শোক প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ দায় এড়ানো সম্ভব না। আমি অন্তত মানি না। আশাকরি সচেতন মানুষও মানবে না। মুজাক্কির মাত্র একদিন আগে সামাজিক প্রচারমাধ্যমে জানিয়েছিল, চলমান ঘটনার লাগাম টেনে ধরার জন্য, নাহলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবে। সে নিজেই জীবনপাত করে তার শঙ্কা সত্য প্রমাণিত করে দিলো। এ ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ হয়তো চেয়েছে এই রকমই একটি প্রাণঘাতী সংঘাতময় ঘটনা।

রাজার নীতি নয়, নীতির রাজার নাম রাজনীতি। এমন নীতি আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুব একটা মানে বলে মনে হয় না। রাজনীতি পরিণত হয়েছে অনেকটা নীতিহীনতায়, যাকে অপরাজনীতি বলে। এই অপরাজনীতির কারণে দুর্বৃত্তায়ণ ঘটছে। বেড়ে উঠছে দুর্বৃত্তরা। রাজনীতিকে তারা ব্যবহার করছে। নানা বাহিনী গড়ে লুটতরাজ, টেন্ডারবাজি এমনকি ধর্ষণ-গণধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। রাজনৈতিক নামে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নানা স্বার্থে এসব দুর্বৃত্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কিছুদিন পর পরই নানা ঘটনায় ইস্যু হয়ে আসে অপরাজনীতির বলি হওয়া এই মানব সন্তানরা। যারা এ রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে, তারা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

খুনোখুনির রাজনীতিতে বাঙালিরা যে বেশ পারঙ্গম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুনোখুনির ওপর আদর্শের একটা চাদর চড়িয়ে দিয়ে তা জায়েজ করার চেষ্টা থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বীকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়ার নামে চলে খুনখারাবি। কিছু কিছু ঘটনা রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজে বিরাট প্রভাব ফেলে।
খুনোখুনির রাজনীতি-সংঘাতের রাজনীতি থেকে আমরা কি সহসা মুক্তি পাব? ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ যে কত নিচে নামতে পারে, মুজাক্কিরের হত্যাকান্ডই তার প্রমাণ। শুধু তাই নয়, এখন ফায়দা লুটার রাজনীতিও চলছে। প্রশ্ন হলো, এ অপরাজনীতির শেষ কোথায়? রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের এই ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা কখন থামবে?

নৈতিকতাবোধ কেন হারিয়ে যাচ্ছে? দেশপ্রেমের কেন এই দুর্দশা? কেন গড়ে উঠছে না ন্যায়ভিত্তিক ন্যায্য সমাজ? কারণ খুঁজতে গেলে সামনে আসে সমাজব্যবস্থা ও রাজনীতির প্রশ্ন। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে এগুলোর শিকড় চিহ্নিত করে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। বছরের পর বছর বা যুগ যুগ ধরে পুঞ্জীভূত সমস্যা বহন করে চলার পরিণতি ভয়াবহ হয়। একপেশে রাজনীতি ও রাজনীতিকদের স্বার্থবাদী নীতি চলতে থাকলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তখন যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন, সব অর্থহীন হয়ে পড়বে। কাজেই সময় থাকতে দেশে সুরাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে মুজাক্কিরদের বার বার মৃত্যু হবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর