পতাকাই বাংলার প্রাণশক্তি
২ মার্চ ২০২১ ১৩:৫৭
লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটি নাম হলো বাংলাদেশ। আর সেই নামেরই প্রাণশক্তি জাতীয় পতাকা। সবুজ জমিনের উপর রক্ত রঙ লাল, এর মাঝখানে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা ১৯৭১ সালের২ মার্চ প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২ মার্চ জাতীয় পতাকা দিবস পালন করা হয়। একাত্তরের ২ মার্চ ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আব্দুর রব উত্তোলন করেছিলেন পতাকাটি। তার পরের দিন ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মোহাম্মদ শাজাহান সিরাজ। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডিতে তার নিজস্ব বাসভবনে সর্বপ্রথম নিজ হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই বাংলাদেশের পতাকা নকশা করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৬ জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে পতাকাটির প্রাথমিক নকশা করা হয়। মূলত বাংলাদেশের পতাকার প্রধান ডিজাইনার শিব নারায়ণ দাস। তখন তিনি পতাকার মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত করেই পতাকা নকশা করেন। যেহেতু, দেশের মানচিত্র সবসময় এক থাকে না, পারিপার্শ্বিক কারণে পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। আর সেই মানচিত্রহীন পতাকার নকশাকার হলেন, কামরুল হাসান। তাই বর্তমান ব্যবহৃত পতাকার ডিজাইনার ধরা হয় কামরুল হাসানকে। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকার ডিজাইনার হলেন শিব নারায়ণ দাস।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ছিল ঢাকা হরতালের নগরী, মিছিলের নগরী। পুরো দিনটি হাইলাইট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে। বাঙালির মনে অনেক প্রেরণা জুগিয়েছে এই পতাকা উত্তোলন। তখন পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, অবিচারের বিরুদ্ধে ডাকসুর নেতাকর্মীদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন আমজনতা। প্রকৃতপক্ষে সেদিনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এর পরই স্বাধীনতা অর্জনের পথে অগ্রসর হয় বাঙালি। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। বাংলার বুকে মুক্ত আকাশে খোলা বাতাসে উড়েছে পতাকা।
প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ পতাকা। যথাযথ সম্মানে রাখা হয়ে থাকে এটি। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। রাষ্ট্রের প্রতিটি অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজসহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উত্তোলিত থাকে পতাকা। বাংলাদেশ পতাকার সম্মানার্থে প্রতি বছর ২ মার্চ জাতীয় পতাকা দিবস পালন করা হয়। পতাকাকেই বাংলার প্রাণশক্তি ধরে দেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। এখন যেভাবে পতাকার সম্মান দেখানো হয় ভবিষ্যতে তা যেন আরও বৃদ্ধি পেয়ে অব্যাহত থাকে এবং প্রতিটি বাঙালির অন্তর জুড়ে যেন থাকে আমাদের রাষ্ট্রীয় পতাকার সম্মান। এটাই রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিক হিসেবে কাম্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়