Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মশার অত্যাচার থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করুন


৩ মার্চ ২০২১ ১৬:২৭

মশার অত্যাচার থেকে চট্টগ্রামের মানুষ কোনো কালেই রেহাই পায়নি। এ অঞ্চলের মানুষ সহ্য করতে শিখেছে তাই এই অত্যাচার সহ্য করে আসছে বিগত এক দশক থেকে। প্রতিবারই চসিকের মেয়রগণ মশা নিধনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশ্বাস দেন কিন্তু চেয়ারে বসে ভুলে যান সেই কথাটি।

মশার অত্যাচার সহ্যসীমার মধ্যে থাকলে হয়তো এই লেখাটি লিখতাম না। কিন্তু দিন দিন যেভাবে মশার অত্যাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবার বোধহয় রক্ষা নেই। অথচ এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনে যাবতীয় সমস্যাগুলোর মধ্যে এটিও একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে যেভাবে মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে, তা বিগত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের এমন কোনো স্থান নেই যে কোনো মশার অত্যাচার নেই। অবাক করার বিষয়, যেখানে কখনও মশা খুঁজে পাওয়া যেতো না এখন সেখানেও মশার মারাত্মক অত্যাচার চলছে। চট্টগ্রামের একটি সেবামূলক ফেসবুক গ্রুপ ‘ডিএসসি’তে আফরাইম সাঈদ নামক এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে বলেন, চকবাজার, দিদার মার্কেট, আন্দরকিল্লা এরিয়াতে মশার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায় বেড়েছে। ইউসুফ নামক এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে জানতে চান, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট কি চট্টগ্রামে আছে কি না! ওই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এজন্য অনেকেই সিটি কর্পোরেশনকেই দায়ী করছেন।

মারুফ আল মাহমুদ নামক এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেয় জানান, সিটিগেট, কর্নেল হাট এবং কাট্টলী এলাকায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এছাড়াও হালিশহর, বড়পোল, আগ্রাবাদ, অলংকার, ওয়ারলেস, ফয়েসলেক, মুরাদপুর, ২নং গেট, কদমতলি, ওয়াসা, আকবরশাহ, মনসুরাবাদ, ফিরোজ শাহ, অক্সিজেন, জামাল খানসহ সব এলাকায় মশা নিয়ে অভিযোগ আছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু মশার এমন উপদ্রবের জন্য দায়ী কে? প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশনকে মশা নিধনের জন্য বিরাট অংকের টাকা দেওয়া হয়। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে মশা নিধনের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারীও রয়েছে অনেক। এরপরেও যদি নাগরিকরা মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা না পায়, তবে এটা দুঃখজনক তো বটেই সঙ্গে লজ্জারও বিষয়। উন্নত বিশ্বে এমনটা ভাবাই যায় না। বিগত সালগুলোতে মশাবাহীত রোগ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন রোগে ভুগেছে। নতুন করে আবার মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মনে সেই চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এই মশার মাধ্যমে মানুষ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং জিকা ভাইরাসের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সকাল বিকেল মশার ওষুধ ছিটানোর কথা হলেও তা হয় না। এগুলো যথাযথ ভাবে হওয়া দরকার। এছাড়াও সিটি-কর্পোরেশন মশার যে ওষুধ ছিটায় তা আদৌ কাজ করে কিনা দেখার কেউ নেই। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক মনিটরিং। আশা-করছি বর্তমান মেয়র এই দিকটিও নজরে আনবেন।

শুধু তাই নয়, মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যেও বড় অনিয়ম ছিল বিগত বছরগুলোতে। এই ওষুধ দিতে হয় বিশেষ করে প্রজনন স্থলে। বছরের উপযুক্ত সময়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ওষুধ ছিটাতে হয়। মশার ওষুধ একই দিনে দু’বার প্রয়োগ করার নিয়ম। একবার ভোরে দিতে হয় মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। আবার বিকেল বা সন্ধ্যায় দিতে হবে প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারার জন্য। সর্বোপরী মশার ওষুধের গুণগত মান অবশ্যই হতে হবে যথাযথ।

বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতি নগরবাসীর বর্তমান চাওয়া, মশার এই অত্যাচার থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে রক্ষা করা। আমি বিশ্বাস করি চট্টগ্রামবাসী তার প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে তিনি সেটার যথাযথ মর্যাদা রাখবেন। এই অঞ্চলের মানুষকে একটি মশামুক্ত অঞ্চলে পরিণত করবেন।

তাই মাননীয় মেয়রকে বলতে চাই, আপনার দিকে তাকিয়ে আছে চট্টগ্রামবাসী, দয়া করে আপনি একটা পদক্ষেপ নিন। চট্টগ্রামের মানুষদের এমন অসহনীয় অবস্থায় পাশে দাঁড়ান। একজন নগরপিতার কাছে সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই ক্ষুদ্র চাওয়া নিশ্চয়ই পূরণ হবে।

এবার আসা যাক নিজেদের দিকে। চসিকের পাশাপাশি দায়িত্ব কিছু আমার আপনার আমাদেরও নিতে হবে। আমরা জানি, কচুরিপানা, ডোবা, নালা এবং অপরিষ্কার ড্রেন মশার জন্মস্থল। এগুলো পরিষ্কার রাখা জরুরি। যদি আমরা পারি তবে আমরা নিজেরাই করবো। যদি চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীর প্রয়োজন হয়, তবে স্থানীয় কাউনসিলরের নিকট এলাকাবাসীরা যাবো। এছাড়াও রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা থেকেও মশার সৃষ্টি হয়। আমাদের উচিৎ নিজের এলাকা নিজেদের পরিষ্কার রাখা। মনে রাখতে হবে জনসচেতনতাই সকল সমস্যার সমাধান।

এভাবেই আমরা সকলেই চাইলে মিলেমিশে মশামুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে পারি। এজন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে মশা যেন জন্মাতে না পারে। কারণ মশা জন্মাতে না দিলে আমাদের আর মশা নিধন করার জন্য ওষুধ ছিটাতে হবে না। সব ধরনের মশা নিধনের ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। যাদের হাপানী ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধা এসব ওষুধে। তাই মশার ক্ষেত্র যেমন ধ্বংস করতে হবে, তেমনি মশা যেন আর না জন্মাতে পারে সেই ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ সকলের কাম্য। তাই আসুন মশার হাত থেকে নিজে সুরক্ষা থাকি এবং অন্যদেরকেও সুরক্ষা রাখি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

ইত্যাদি এবার মোংলায়
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর