ভ্যাকসিন প্রাপ্তি ও একজন দূরদর্শী শেখ হাসিনা
৬ মার্চ ২০২১ ১৫:১৫
স্বাভাবিকতার মাঝে হঠাৎ নেমে এলো আঁধারের কালো ছায়া। করোনা নামক ভাইরাস জেঁকে বসলো পৃথিবীর বুকে। সামাজিক দূরত্ব, পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটাইজিং, ঘরের বন্দীদশার মতো অনেক অকল্পনীয় বিষয় সামনে এসে অবস্থান করে মানুষকে করে তোলে মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত। দুরবস্থায় যখন দিশেহারা গোটা বাংলাদেশ, নিন্দুকেরা যখন অট্টহাসিতে মাতোয়ারা তখনি স্বপ্ন দেখার মতো একজন উঠলেন জেগে। দূরদর্শী, সময়োপযোগী নেতৃত্ব দিয়ে সামাল দিলেন পরিস্থিতি। রক্ষা করলেন অর্থনৈতিক সংকটসহ সামাজিক নানা বিরূপ পরিস্থিতি থেকে। আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের সুষ্ঠু আমদানি ও প্রাপ্তিতেও তিনি দেখালেন ঝলক। তিনি জনগণের জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আশা ভরসার একমাত্র বাতিঘর।
মার্চের শুরুতে করোনা শনাক্ত হলো বাংলাদেশে। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বিশেষজ্ঞ কিংবা সাধারণ মানুষ সবার আশঙ্কা ছিল ভয়াবহ দুরবস্থায় বাংলাদেশ আক্রান্ত হবে। সৃষ্টি হতে পারে দুর্ভিক্ষ। অঙ্কে সংস্থা আশঙ্কা করল প্রায় ৩ কোটি মানুষ শুরুর ধাক্কায় আক্রান্ত হবে এবং ৫০ লাখ মারা যাবে। মানুষের অসচেতনতা ছিল সেই ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পাশাপাশি চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট লোকজনও অবগত ছিলেন না করোনা সম্পর্কে। বাধ্য হয়ে দেওয়া হলো লকডাউন, তাও মানুষের মাঝে দেখা গেল অসচেতনতা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, কতিপয় ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ ব্যতীত তখন সেভাবে কেউ আক্রান্ত হ নি বা হলেও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে উতরে গেছেন এ যাত্রায়।
সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব দূরদর্শিতা ছিলো বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় কৃষকদের সহায়তা বিষয়টি পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ৫৭ লাখ কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা। এছাড়া, অন্যান্য সংকটপূর্ণ খাতেও দেওয়া হয়েছে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ৷ তৈরি পোশাক খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
পরিস্থিতি যখন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পথে, তখনই একপ্রকার নিজ দৃঢ়তা থেকে শিল্পকারখানা এবং পোশাক কারখানা খোলার ব্যবস্থা করলেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে নির্ধারণ করা হলো মানদণ্ড এবং সকল মালিক এ বিষয়ে সহমত পোষণ করলেন। ফলে বড় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বিষয়টা। এরপরের গল্পটা শুধুই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখনই শেখ হাসিনার হাত ধরে নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ। জীবনযাত্রার মান, মাথাপিছু আয়সহ অন্যান্য সকল অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ এই করোনাকালে ছাড়িয়ে গেছে বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তি প্রতিবেশী ভারত এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থায় নানাভাবে পর্যবসিত হওয়া পাকিস্তানকে। সবচাইতে চোখ জুড়ানো অর্জন আসতে চলেছে সাম্প্রতিক সময়ে। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, এলডিসি গ্রাজুয়েশনে দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ বাংলাদেশ।
এবার আসা যাক ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে। যেখানে বিশ্বের বুকে ১৩০টি দেশ ভ্যাকসিন বঞ্চিত, সেখানে অনায়াসে ভ্যাকসিন গ্রহণ করছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, একদম বিনামূল্যে। ঘরে বসেই করা যাচ্ছে রেজিস্ট্রেশন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করা কার্যক্রমের আওতায় অল্প সময়ের ব্যবধানেই বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। করোনাকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দক্ষতা এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শেখ হাসিনাকে কো-চেয়ারম্যান নির্বাচন করে, যা ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি বলেছে, বাংলাদেশ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে একটি, যারা টিকাদান অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করছে।
একজন মানুষ দিনরাত অবিরাম পরিশ্রম করে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে দিচ্ছে অকুণ্ঠ সমর্থন। তবুও একদল দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে সদা তৎপর। দেশের বাইরে থেকে যারা চেষ্টা চালাচ্ছে অবিরাম।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়