হাজার বছরের অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধু
১৭ মার্চ ২০২১ ০১:৫৭
কালের গর্ভে যেমন হিটলার, মুসোলিনিরা ত্রাসের ভয়াল গ্রাস হয়ে এসেছে, ইয়াহিয়া ভুট্টোরা যখন শোষণ বঞ্চনার যাঁতাকলে পিষ্ট করতে করতে ক্লান্ত ক্লেশে আয়েশ করেছে, সে সময়ে দুখী বঞ্চিত শোষিত নিষ্পেষিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাতা হয়ে শেকল ভাঙার অঙ্গিকার নিয়ে মঙ্গল প্রদীপ হাতে বাঙালিদের সাহস যুগিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন, উদ্বেলিত করেছেন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
গ্রিক পুরাণের যুদ্ধ দেবতা এরিস যেভাবে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু মুজিব বাঙালির মধ্যে অদম্য সাহস ফুঁকে দিয়ে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন সেই একই সূরের মূর্ছনায়। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শেকলটাকে ভাঙার স্বপ্নচারী হয়ে দেবদূত হয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রকাশ্যে বা গোপনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ ও স্বাধীন বাংলাদেশ রূপায়নের যে সুপ্ত বাসনা তিলে তিলে স্ফুলিঙ্গের আকার ধারণ করছিল, সেই অভিযাত্রায় ছাত্রনেতাদের পারিপার্শ্বিক কিছু ভূমিকা ছিল।তবে সে ভূমিকা প্রচ্ছন্ন আকারেই ছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রকট ভূমিকায়। তিনি স্ব সাহসে পিদিম জ্বালিয়ে শোষকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীনতার দামামা বাজিয়েছেন। চোখে চোখ রেখে শোষকের নাকের ডগায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ ঘটিয়েছেন।
বর্তমান সময়ের অনেকেই তৎকালীন গোপন কিছু ছাত্র তৎপরতা ও ইতিহাসের কিছু বেনামি পত্রকে ঠাওর করে অপব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। যেমন ষাটের দশকে সিরাজুল আলম খানের নিউক্লিয়াস, পরবর্তীতে বিএলফ। এসব তৎপরতার সাফাই গেয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশালতা আর ব্যাপ্তিকে যারা হেয় করে তাদের ইতিহাসবেত্তাদের থেকে শিক্ষা নেওয়াই সমীচীন। বিপথগামী এ মানুষগুলোর জন্য এর চেয়ে বিনয়ের ভাষা আমার জানা নেই। নিউক্লিয়াস স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য গোপনে কাজ করেছিল কিন্তু সর্বসম্মুখে সবাইকে জানান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো কোটি মানুষকে একত্রে উজ্জীবিত করতে কিন্তু এসব গোপন তৎপরতা ব্যাপকভাবে ব্যর্থ। বঙ্গবন্ধু নিজে কাউকে পরোয়া না করে ঝুঁকি নিয়ে সব্যসাচীর মতো লড়ে গিয়েছেন বাঙালিকে একটি মুক্ত আকাশ উপহার দেওয়ার জন্য।
বঙ্গবন্ধুর মননে যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল তার প্রমাণ মেলেছে তার যাপিত জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয়দফা’র মাধ্যমেও অন্তর্নিহিত একদফার পারিপার্শ্বিক সাধনাকে লালন করেছেন। আর সেই একদফা ছিল বাঙালির স্বাধীনতা। প্রকারান্তরে বঙ্গবন্ধুর যাপিত রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় যখন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিমজ্জিত ছিল ঠিক সেসময়েও তিনি মুক্তির গানে মাতোয়ারা ছিলেন।
ছাত্ররাজনীতির বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিত ও বাস্তবতা যদি বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবনের বাস্তবতার সাথে আলোকপাত করে পর্যালোচনা করা হয় তাহলে আক্ষরিক অর্থেই বলা যায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শত যুগ এগিয়ে থাকা মহামানব। প্রগতির মাপকাঠির পারিপার্শ্বিকতা বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবনের উপর আদর্শ রেখেই বর্তমান সময়ের তরুণ রাজনীতিবিদদের ভাবাদর্শ চর্চা করা সার্বিক দিক দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে আরও সাবলীল ও দ্যুতি ছড়ায়ে স্বকীয়ভাবে উদ্ভাসিত করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়