মওদুদ আহমদ স্মরণে: তিনি ছিলেন সৃজনশীল এক রাজনীতিবিদ
১৯ মার্চ ২০২১ ১৭:২৮
একটি কথা স্মরণে রেখেই স্মৃতিচারণ। বিএনপি চেয়ারপার্সন গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং-এ কাজের বদৌলতে মওদুদ আহমদ স্যারের সঙ্গে মূলত দেখা হতো, কথা হতো। কোনো কোনো সময়ে চা খাওয়ার কথা বলে অনেক আন্তরিকভাবে বসতে বলতেন। এই পর্যায়ের একজন রাজনীতিকের সামনে বসে চা খাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। চা খাওয়ার সূত্র ধরে তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আলোচনা করতেন।
আমি মনোমুগ্ধকর ভাবে কথা শুনতাম মাঝে মধ্যে কোনো একটি বিষয় আরও সহজ করে বুঝবার আগ্রহ নিয়ে ঐ বিষয়টার প্রতি মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলে তিনি আরও চমৎকারভাবে বুঝাতেন। অনেক যুক্তি দিয়ে একই বিষয় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তুলে ধরতেন।
একদিন বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত আমার একটি লেখা দিয়েছিলাম, তিনি লেখা হাতে নিয়ে একঝলক দেখে শিরোনামটা উচ্চারণ করে আমাকে পড়তে বলেন। উনার সামনে বসে নিজের লেখা ভয়ে ভয়ে পড়ছি দেখে আমাকে বললেন তোমার লেখার বিষয়বস্তু আমার পছন্দ হয়েছে আমি সময়ে করে পড়ে নেব। লেখাটি ছিল ‘পরিবর্তনের জন্য চাই চিন্তা শক্তির পরিবর্তন’। তিনি বললেন, আরও মনোযোগ দিয়ে লেখতে চেষ্টা করো ভালো করবে।
গুলশান চেয়ারপার্সন অফিসে বিএনপি’র কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীতে কিংবা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসার পূর্বে ফোন করে বলতেন। অফিস থেকে অথবা বাসা থেকে যেখান থেকে রওনা করতেন বের হয়ে বলতেন, আশাকরি সময় মতো পৌঁছে যাবো।
যদি কোনো সময়ে কাজের ব্যস্ততার কারণে ফোন করতে ভুলে যেতেন তখন অফিসের গেইটের সামনেই গাড়ি থেকে নেমে দেখা হলে আমার গায়ে হাত দিয়ে বলতেন, আজ ফোন করিনি তোমার কি মনে হয়েছিল আমি আসবো না? আমি উত্তর তৈরি করছি, না স্যার তা মনে হয়নি, বলার আগেই তিনি আবার বলতেন দেশের খবর কী?
আমি বলতাম, স্যার এই খবর তো আমরা আপনাদের কাছে থেকে জানব, আমরা কিভাবে বলব। তখন তিনি একটা কথা স্পষ্ট করে বলতেন, ‘দেশের যে নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে তা সহজে পূর্ণ হবে না। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল থেকে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে, আমার জীবদ্দশায় হয়তো দেখে যেতে পারবো না তার গুণগত পরিবর্তন। তোমরা এই প্রজন্মের চেষ্টা করো শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে সংগ্রামটা করতে। পারলে হয়তো তোমাদের সময়ে তার সুফল আসতে পারে’।
আরও একটি কথা প্রায় সময়ই বলতেন, যে জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবা সেই জায়গাটা যেন দুর্বল না হয় সব সময় সর্তক থেকো। দীর্ঘদিন এক জায়গায় একটি নীতি নিয়ে বসবাস করতে পারলে দেখবে এমনিতেই তার ভীত মজবুত হয়’।
স্যারকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আগে এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উনার একান্ত সচিবের সঙ্গে আমার প্রতিদিন যোগাযোগ হতো। তিনিও তার মাধ্যমে আমার খোঁজ রাখতেন। দুই দিন বলেছেন তিনি সুস্থ হবার সাথে সাথে যেন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুর্ভাগ্য আমাদের, তিনি সুস্থ হয়ে আর আসতে পারলেন না, আর দেখাও হয়ে উঠেনি।
মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি উনাকে বেহেশত নসিব করুন।
লেখক: প্রেস উইং সদস্য, বিএনপি চেয়ারপার্সন