Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি


২১ মার্চ ২০২১ ১৪:৪৮

বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে বর্ণবাদ বা বর্ণবৈষম্য। কালো এবং সাদায় বৈষম্যমূলক আচরণ। বর্ণবৈষম্য এখন শুধু বর্ণেই (গায়ের রঙ) সীমাবদ্ধ নয়। এটি ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের আচার-আচরণ, সমাজ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ইস্যু, ধর্মীয় মনোভাব, গোত্রীয় প্রভাব, পদ পদবী ইত্যাদি জায়গায়। দিনেদিনে এই বর্ণ বৈষম্যের সূচক বেড়েই চলেছে। এই বৈষম্য একে অপরের প্রতি ঘৃণা আর হিংসাকে ত্বরান্বিত করে তুলছে। আর এই বর্ণবৈষম্য রোধ করার লক্ষ্যে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বর্ণবাদকে যদি সংজ্ঞায়িত করা হয় তাহলে দাঁড়ায়, গাত্রবর্ণের ভিন্নতার কারণে কোনো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যদি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় তখন তাকে বর্ণবাদ বলে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এই বর্ণবৈষম্য থেকে মুক্ত নেই। কোথায় নেই বর্ণবাদ। মানুষের কর্মক্ষেত্র অফিস-আদালত, হোটেল-মোটেল, হাট-বাজারে, বিমান, বিমানবন্দর ছাড়াও বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই বর্ণবৈষম্য। দেশের সর্বোচ্চ স্তম্ভ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাগুলোও মুক্ত নেই এর হাত থেকে। খাবার টেবিল, ক্লাসরুম, ক্যাফেটেরিয়া, পাঠাগার, সহপাঠীদের আড্ডামহলে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় বিষয়টি। এমনকি বিশ্বের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার মাধ্যম যে ক্রীড়াঙ্গন, সে প্রিয় ক্রীড়াঙ্গনের সবুজ চত্বরে পর্যন্ত বিষাক্ত বর্ণবাদী ছোঁয়া লেগেছে।

বিজ্ঞাপন

১৯৬০ সালের ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিলে রাষ্ট্রের বর্ণবাদী আইন পাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন অগণিত মানুষ। সেদিন ৬৯ জন মানুষ নিহিত হয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে। তারপরে ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেটারও অর্ধশতাব্দী বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু বিশ্ব থেকে এখনও বর্ণবৈষম্য দূর হয়নি। বরং কিছু সংখ্যক মানুষ রাজনৈতিক সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এটাকে।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২১ মার্চে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে দিনটি। দিবস পালন করা হয় ঠিকই—কিন্তু সকলের মনে যে প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার, তা সবসময় থাকে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সবসময় জাগ্রতবোধ থাকতে হবে যে, সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, তাতে ভেদাভেদ কিসের। সকলের মনে মানসিকতার পরিচায়ক হিসেবে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণকে পোষণ করতে হবে। তবেই এই অভিশপ্ত মুকুট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের মুখ্য প্রতীক হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকার সদ্যপ্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। তার নেতৃত্বে অনেক মানুষ তখনকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। যোগ দিয়েছেন তার সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলনে। অনেকে প্রাণও নিবেদিত করেছিলেন তখন। এছাড়াও যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে আন্দোলন হয়েছে। আইন হয়েছে। অসংখ্য নীতিমালাও হয়েছে। এমনটি গঠিত হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তবুও কেন থামছে না এই বৈষম্যপনা? কেন মানুষ মেনে নিচ্ছে না জন্মগত ভিন্নতার এই আবরণকে? এতো আইন, এতো আন্দোলন, এতো নীতিমালা হওয়ার পরেও কেন মুক্তি পাচ্ছে না জনগণ? এখন সকলেই এমন অভিশপ্ত মুকুট থেকে মুক্তি চায়।

ভারতীয় উপমহাদেশ বিখ্যাত গণসংগীত শিল্পী ভূপেন হাজারিকা তার জনপ্রিয় একটি গানে বলেছেন— ‘আমায় একটি সাদা মানুষ দাও যার রক্ত সাদা, আমায় একটি কালো মানুষ দাও যার রক্ত কালো’। এ গানের অন্তঃমূলে নিহিত আছে, মূলত জন্মগতভাবেই মানুষে-মানুষে কোনো পার্থক্য নেই, ভেদাভেদ নেই। মানুষের বহিঃদৃশ্যের দিকে অবলোকন না করে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে; সবাই মানুষ, সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সেরা জীব। তবেই একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ কমে জাগ্রতবোধ হবে মানবতার। আর মানবতার প্রসার ঘটাতে পারলেই বিশ্বে ফিরে আসবে শান্তি, শৃঙ্খলা, প্রগতি।

বর্ণবাদের মূলে রয়েছে একে অপরের প্রতি ঘৃণা ও অবিশ্বাস। যতদিন না এই ঘৃণা আর অবিশ্বাস সকলের মধ্য থেকে দূর না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আলোর ছায়া দেখা যাবে না। এখন সবার এটাই চাওয়া; যে বিশ্ব মানুষের জন্য, সে বিশ্বে মানুষের দ্বারা তৈরি হোক বর্ণবাদহীন মানবতার সমাজ ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যেখানে সকল মানুষ নিরাপদে, সুখে, শান্তিতে বাস করবে। সবশেষে মধ্যযুগের কবি বড়ু চণ্ডীদাসের মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণীটি- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ মনে পড়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর