Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতা আন্দোলনে শেখ হাসিনার অবদান


২৩ মার্চ ২০২১ ১৭:৩৫

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পরতে পরতে মিশে আছে জাতির পিতার অসামান্য অবদান। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রাম ছিল বাঙালির মুক্তি আর গৌরবময় পরিচয় প্রতিষ্ঠা। সে সংগ্রামে অদম্য তিনি। অধিকার আদায়ে আপসহীন ছিলেন সবসময়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। নিজ যোগ্যতা দিয়ে তিনি যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন তা আজ প্রশংসিত সর্বমহলে। বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম।

বিজ্ঞাপন

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা এক মহীয়সী নারী। এই মহীয়সী নারী ১৯৪৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রাপ্তিতে অসামান্য অবদান। তার বর্ণাঢ্য ছাত্র রাজনীতি এটি প্রমাণ করে।

গ্রাম বাংলার ধুলোমাটি, সবুজ প্রকৃতি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। শৈশবে শেখ হাসিনার শিক্ষা জীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার একটি পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন শেখ হাসিনা।

স্কুলে পড়াকালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। শেখ হাসিনা যখন আজিমপুর গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, তখন তিনি এক পরীক্ষায় সকল বিষয়ে ভালো নম্বর পেলেও পৌরনীতি বিষয়ে খারাপ করেন। পৌরনীতিতে খারাপ করার কারণ জানতে তার মা রত্নগর্ভা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তাদের গৃহশিক্ষক পি কে সাহাকে স্কুলে পাঠান। পি কে সাহা  স্কুলে খোঁজ নিয়ে এসে জানালেন তার খাতায় শাস্তিমূলক একটি মন্তব্য ছিল। সেটি এমন, এই মেয়ে বড় বড় নেতাদের বক্তৃতা অনুসরণ করে, বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না। পৌরনীতি পরীক্ষায় তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের ক্ষমতার কথা লিখতে গিয়ে বইতে যেসব প্রশংসাসূচক কথা লেখা ছিল, সেসব তিনি লেখেননি বরং সেগুলো বাদ দিয়ে আইয়ুব খান প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এক বক্তৃতার কথাগুলো লিখে আসেন। এর ফলাফল স্বরূপ খাতার নম্বর বাতিল হয়। এটি প্রমাণ করে কৈশোরেই তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিজের মধ্যে আঁকতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক আবহে। পিতার রাজনৈতিক জীবনের প্রভাব তার উপর পড়েছিল সেই কিশোরী বয়সেই। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে আজিমপুর গার্লস স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি ১০ সেপ্টেম্বর স্কুলে ধর্মঘট করে ছাত্রী মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে রওনা হন যা তার নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ এবং শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের সূচনা বলা যায়। তিনি সবসময় অনুভব করতেন রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়। রাজনৈতিক জীবন তাকে দূর্বারভাবে টানত। ১৯৬৬ সালে ইডেন গার্লস কলেজের ছাত্রী থাকাকালে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে কাজ করেন। নিজের কলেজে তিনি ছাত্রলীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়ে তিনি তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেন।ছয় দফা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেন। তিনি রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদিকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও মিছিলে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। শেখ মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হলে তাকে বাইরের খবরাখবর এবং রাজনৈতিক অবস্থা খুব কৌশলে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করে অবগত করতেন। পিতার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ শেখ হাসিনা নিয়ে এসে ছাত্রনেতাদের জানাতেন। বাবা এবং ছাত্রনেতাদের বার্তা দেওয়া নেওয়ার কাজটি শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিয়ে করতেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তখন শেখ হাসিনা অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রচারাভিযান চালান নিয়মিত। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন নির্বাচনে। তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেন স্বাধীনতার সুফল। পূর্ব-পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য তুলে ধরেন যা ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে টানতে সক্ষম হয়।

মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ এদেশের জনগণকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে এবং মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। শেখ হাসিনা সন্তানসম্ভবা হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে তিনি অন্যদের সংগঠিত এবং অনুপ্রাণিত করেন।

বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে চেনে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক ও অর্থনৈতিক সাম্যের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার আপসহীন নেতৃত্ব সর্বমহলে আজ প্রশংসিত।এদেশের গণমানুষের মুক্তির জন্য শেখ হাসিনার রয়েছে সাফল্যগাথা ইতিহাস। তিনি জনগণের আস্থার প্রতীক। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাধীনতা আন্দোলনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে তিনি যেমন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে রাজপথে সোচ্চার ছিলেন তেমনি তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক। বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি থাকাকালীন সময়ে বার্তাবাহক হিসেবে তার অবদান অপরিসীম। ফলে স্বাধীনতা আন্দোলনে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে রবে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রাপ্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান প্রশংসনীয়। একইসাথে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর