Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসুন আন্দোলন করি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে


২ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৪১

সারাদেশ আজ উত্তাল। হরতাল, বিক্ষোভ এসবে অস্থির বাংলাদেশ। তবে এসব নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। এর দু’টি কারণ আছে। একটি সরকারের বিরুদ্ধে হলে মামলার ভয়, অন্যটি যারা আন্দোলন করছে তাদের বিপক্ষে গেলে হামলার ভয়। এই মামলা এবং হামলা থেকে বাঁচতে চায় দেশের শান্তি প্রিয় মানুষ। বাস করতে চায় শান্তিতে। দু-বেলা দু-মুঠো ভাত খেয়ে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে চাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এখনকার তরুণ-সমাজ রক্তের খেলা পছন্দ করে না। তবুও এই রক্তের খেলা চলে। সন্তান হারাচ্ছে বাবা-মা আর ভাই হারাচ্ছে ভাই।

বিজ্ঞাপন

অথচ যেসকল বিষয় নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে তার চেয়ে বেশি সমস্যা আমাদের রয়েছে। কিন্তু সেসব সমস্যা সমাধানে আমাদের নেই কোনো মাথাব্যথা। আরেকটু পরিষ্কার করে বলি, এই যে ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা নিয়ে কি কারও কোনো মাথাব্যথা আছে? আমরা নেতার কথা শুনে রাস্তায় নামছি, আর ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে ভাত খাচ্ছি। এই চালের মূল্য কত কি খোঁজ রাখছি? তেলের মূল্য কত কি জানতে চেষ্টা করেছি? আসলে এসব নিয়ে কারও কোনো ভাবনাও নেই।

বিজ্ঞাপন

অথচ দেশের মানুষের উপর প্রতিবছরই এমন অন্যায় করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর রমজান শুরুর আগেই অভিনব কারসাজি নিয়ে কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে নামে। মাস পনের দিন আগে থেকেই অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা।

পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মুদির দোকানে দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের। অস্ট্রেলিয়ান উন্নতমানের ছোলা কেজি প্রতি ৮০ টাকায়, চিনি ৬৪ টাকায়, মসুর ডাল (ছোট জাত) ১১৫ টাকা ও বড় জাতের মসুর ডাল ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মটর ডাল ৪৫ টাকা ও খেসারি ডালের দাম ১৩৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের কেজি ১৪০ টাকা ও পলিব্যাগ কোম্পানি ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। আদা ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকায় ও দেশি রসুন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চিনির দাম মনপ্রতি বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, কেজিতে ৬৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর আরিচা ৪০০, বড়ই ৩৪০, জিয়াদা ২৪০ এবং সর্বনিম্ন ইরাকী খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই দশা চালের বাজারে। মিনিকেট চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬০, মিনিকেট আতপ ৬০, মালা ৫৫, জিরা সিদ্ধ ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে।

একটি জাতীয় পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোজার মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ১১টি কারণ খুঁজে পেয়েছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। কারণগুলো হচ্ছে— প্রথাগত সরবরাহ প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত মজুদের মাধ্যমে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, রমজানে পণ্যের বাড়তি চাহিদা, পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি, যানজট ও অতিরিক্ত পরিবহণ ব্যয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের হার, ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা এবং ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়া।

সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দাম বৃদ্ধির এসব কারণ উদ্ঘাটন করেছে গোয়েন্দারা। সংস্থাটির আশঙ্কা, রমজান ঘিরে চালের বাজারে আরেক দফায় অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এভাবে আর কত? আসুন এই অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরোদ্ধে রাস্তায় নামি। চালের মূল্য দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ক’দিন পর নিম্নবিত্তরা ভাতের বদল পানি খেয়ে দিন পার করবে। অথচ আমাদের সম্মানিত নেতাগণ এসব নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয় না। এই ভোগ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনার জন্য যদি রাস্তায় নামতে হয় তবে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নামবে। এটা কোনো দলের জন্য নয়, এটা দেশের মানুষের জন্য। আর এখন আমরা যা করছি তা দলের জন্য করছি। আসুন না, এসব রাজনীতি বাদ দিয়ে একটু মানুষের কথা ভাবি।

সরকারের কাছে অনুরোধ, দয়া করে রমজান মাসে বাজারের এই অস্থিরতা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দেশের মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়া সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ। সরকার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনবে সেই প্রত্যাশা রাখছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর