বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অগ্রগতি প্রয়োজন
৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৩৩
বিনোদনের পাশাপাশি চলচ্চিত্র একটি সমাজের দর্পণ স্বরূপ। একটি দেশের সংস্কৃতি, নাগরিকদের আচার, ব্যবহার, পছন্দ, রুচি, অভ্যাস জানা যায় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্র কালের সাক্ষীও বটে। চলচ্চিত্র বিভিন্ন সময় সামাজিক, রাজনৈতিক অসঙ্গতি, শোষণ-নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে। যেমন কিংবদন্তি জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তৎকালীন স্বৈরশাসনের তীব্র সমালোচনা। ২০০২ সালে তারেক মাসুদ ‘মাটির ময়না’ ছবিটি নির্মাণের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনা তুলে ধরেছেন এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকা সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে যুক্তির সাথে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গ্রামীণ বাংলার সহজ সরল জীবনধারার চিত্রও উঠে আসে যা মনকে পুলকিত করে।
আজ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প, বাণিজ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ কল্যাণমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই সূত্রে ২০১২ সাল থেকে এই বিশেষ দিনটিকে সরকারিভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)-এর প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
চলচ্চিত্র হতে পারে বিনোদনের সুষ্ঠু মাধ্যম, বহন করতে পারে জাতীয় পরিচয়, তৈরি করতে পারে মনস্তত্ব এবং জনপরিসরে পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের গল্পে দেশীয় চিন্তা, দেশীয় সংস্কৃতি, ও মৌলিকত্ব না থাকলে এ সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের চলচ্চিত্রের সুন্দর অতীত থাকলেও গত দুই দশক ধরে চলচ্চিত্রে ভিন্নধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পূর্বে আলোর মিছিল, হাঙর নদী গ্রেনেড, ওরা ১১ জন, আগুনের পরশমণি ইত্যাদি সিনেমার মতো জীবনধর্মী সিনেমা নির্মিত হলেও বর্তমানে বাস্তবধর্মী সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা খুবই কম। বাংলা চলচ্চিত্র আ0জ অনেকটাই ভিনদেশি সংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। জীবনবোধের চিত্র, নিজস্ব সংস্কৃতি, বাস্তবধর্মী প্রেক্ষাপট এসব কমই খুঁজে পাওয়া যায় সম্প্রতি নির্মিত সিনেমাগুলোতে। আজকাল নির্মিত সিনেমার অধিকাংশই বাবা মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বসে উপভোগ করার মতো নয়। আধুনিকতার নামে যেন অশ্লীলতাই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
মহামারি কোভিড-১৯ ঢাকাই চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করতে ১৫ জুলাই ২০২০ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনাসহ সুনির্দিষ্টভাবে ৪টি প্রস্তাব পেশ করা হয়। এদিকে দেশের সিনেমা হলগুলোকে বাঁচানোর জন্য অন্য দেশ থেকে সিনেমা আমদানি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিনেমা হল মালিকেরা। তাদের এই মতামত গ্রহণ করলে সিনেমা হলগুলোতে দেশীয় সিনেমার থেকে ভিনদেশি সিনেমার প্রাধান্য বাড়বে যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভিনদেশি সিনেমার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিবে। এতে করে তাদের উপর ভিনদেশি সংস্কৃতিরও প্রভাব পড়বে। দেশের সিনেমা হলগুলোকে বাঁচানোর জন্য হল মালিককে সিনেমা হলের পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এর উন্নয়নের দিকেও নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন আধুনিকায়ন করতে হবে। জাতীয়ভাবে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের প্রশাসক প্রযোজক সমিতি-এর বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্পকে বিশ্বের সাথে সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই একটা বা টুকটাক ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেই হবে না, বছরজুড়ে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। সিনেমার গল্পে মৌলিকত্ব আনতে হবে। সেই গল্পের মাধ্যমে নিজের দেশ, নিজের মাটি, নিজের মানুষকে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। তবেই মানুষ প্রাণভরে সিনেমা উপভোগ করতে পারবে এবং ঢাকাই চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়