করোনার দ্বিতীয় ঢেউই শেষ নয়, দরকার দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতা
১৬ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৪৩
“সচেতনতা”— এই সময় সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু আমরা ব্যক্তিজীবনে কতজন সচেতন? আমরা কতজন গত ১৩ মাসের যুদ্ধে প্রতিটি দিন নিজেকে সচেতন রেখেছিলাম? আমরা কতজন এখনও ঠিকভাবে মাস্ক পরি, করোনা প্রতিরোধে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি?
যেখানে খুব সাধারণ কিছু পরিচ্ছন্নতা আর স্বাস্থ্যবিধি আমাদের এই মহামারি থেকে রক্ষা করতে পারে, সেখানে আমরা তা না করে সরকার আমাদের বাঁচাতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তার মুখাপেক্ষী হয়ে আছি।
গতবছর করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর শুনেছিলাম এবার নাকি মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন হবে। এখন থেকে নাকি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবে। এসব মানুষের অভ্যাস হয়ে যাবে। নিউ নরমালে মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন হবে। নতুন এক স্বাস্থ্যকর পৃথিবী গড়ার জন্য এসব জরুরি। কিন্তু কিসের কী। গত কয়েক মাসে যখনই করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমলো, তখন মানুষ যেন আরও বেপরোয়া হয়ে গেল। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, সচেতনতার কোনো লেশ মাত্র নেই।
“লকডাউন”— এটি গত ১ বছর থেকে খুবই পরিচিত একটা শব্দ। যদিও এই বছরই প্রথম পুরো দেশে একসাথে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এই লকডাউন কি পুরোপুরি কার্যকর? না, এই লকডাউন কোনোভাবেই কার্যকর নয়। এই লকডাউনে যথেষ্ট পরিমাণ পরিকল্পনার অভাব দেখতে পাচ্ছি। শুধুমাত্র গণপরিবহন আর শপিং মল বন্ধ রেখে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে। যদিও এই “কঠোর লকডাউনেও” শিল্প কলকারখানা খোলাই থাকছে। যাইহোক, প্রথম দিন মোটামুটি লকডাউন মানুষ মেনেছে বলে মনে হলেও, সেটাকে কঠোর লকডাউন বলা যায় না। দ্বিতীয় দিন থেকে আবার রাস্তায় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে, কেউ কেউ তো উৎসবের আমেজে উত্তরা থেকে মালিবাগ চলে আসছে মাছ কিনতে! এরই মধ্যে কিছু অফিসও খোলা হয়ে গেছে।
এই লকডাউনে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছে দিন আনে দিন খায় মানুষগুলা। লকডাউনের আগে তাদের কথা চিন্তা করে নেওয়া উচিত ছিল। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলররা যদি এমন মানুষদের তালিকা করে সপ্তাহ খানেক চলার মতো খাবার পৌঁছে দিত তাহলে হয়তো এই লকডাউনেও ঢাকার রাস্তা রিকশার দখলে চলে যেত না। জিগাতলার এক ঘোল ব্যবসায়ী প্রতিদিন ঘোল বিক্রি করে পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে যেত, এই লকডাউনে তার ক্রেতাও নাই, ঘরে খাবারও নাই। তাই সমাজের বিত্তবান, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের প্রতিনিধি সবার উচিত মানুষের ঘরে খাবার আছে কি না সেই খুঁজ নেওয়া। যাদের সঞ্চয় নেই, যাদের স্থায়ী আয়ের উৎস নেই তারা ৬ দিন কিভাবে অন্নসংস্থান করবে এটা ভাবতে হবে।
গ্রামের বাড়িতে মাকে (উনি বর্তমান মেয়র) ফোন করে জেনেছি, ওদিকে মানুষ চেষ্টা করছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। ডিসির সাথেও কথা বলে শুনেছি উনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।
গত বছরের মতো এবছরও শিল্প কলকারখানা খোলা। মালিকরা যদিও বলেছিল স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করবে। কিন্তু কথা আর কাজে কোন মিল নেই। একসাথে অনেক শ্রমিক আগের মতোই কাজ করছে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নেই চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ। এই সেক্টরে জড়িত বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়েই বলছি।
মহামারিকালে মসজিদে নামাজ না পড়ে বাড়িতে নামাজ পড়ার পরামর্শ দেন ইসলামি স্কলাররা। গত বছর থেকেই সৌদি আরব, আরব আমিরাত এমনটা বলে আসছে। সেসব দেশের মসজিদে সীমিত সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত হতে পারেন। আমাদের দেশেও সরকার এমন নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু তা যে এবার বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা বলা যায়। আজ শুক্রবার জুমার নামাজে অনেক মসজিদে মুসল্লিরা গিয়েছেন এবং ভিতরে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তায় পর্যন্ত নামাজ পড়েছেন। স্পষ্টতই বুঝা যায়, করোনা মহামারি নিয়ে কোনো ভাবনা নেই তাদের। আমাদের এরকম নিরুদ্বেগ মানসিকতার জন্য বলি হচ্ছেন সমাজের সিনিয়র সিটিজেনরা। প্রায় ১০ হাজার মানুষ মারা গেছেন করোনায়। ১০ হাজার মানে প্রায় ১০ হাজার পরিবার আর সরাসরি ভুক্তভোগী। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগ বয়স্ক নাগরিক। তাদের করোনায় সংক্রমিত করেছেন তার পরিবারের ওই ডেম কেয়ার কোনো এক তরুণ সদস্য।
এভাবে কি করোনার প্রকোপ কমানো যাবে? দ্বিতীয় ঢেউ-ই কি শেষ? নাকি করোনা বার বার নতুন শক্তিতে আসতেই থাকবে? কী আছে আমাদের সামনে?
এক অনিশ্চিত জীবন।
লেখক: সদস্য, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ