Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের লুকোচুরি, করোনার সেঞ্চুরি

গোপাল অধিকারী
২০ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৩৭

করোনাভাইরাস কেভিড-১৯ সংক্রমণে গত ১৬  এপ্রিল থেকে মৃত্যুসংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই হচ্ছে মৃত্যুর রেকর্ড। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যা বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়েছে।

যদিও দেশের অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা প্রয়োজন তবে আর্থিক সুবিধা পেলে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকবে কি-না তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। লকডাউন যেভাবে মনে হয়েছিল সেভাবে কার্যকর হয় নি। প্রথম দিনে কোনরকম হলে পরে তা ঢিলেঢালা হয়েছে। করোনার প্রথম দিকে যেমন লকডাউন হয়েছিল বর্তমানে তার চেয়ে কঠোর হওয়া দরকার। কারণ করোনার সংক্রমন ও মৃত্যু উভয়ই এখন বেশি। কিন্তু চেনা করোনা যেন মানুষের মনে ভয় কেড়ে নিয়েছে। ফলে অনেকে মানতে নারাজ করোনা প্রতিরোধে বিধি-নিষেধগুলো। কিন্তু করোনার এই প্রকোপ রোধ করতে সরকারি বিধি ও স্বাস্থ্যবিধি উভয়ই মেনে চলা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ৬৬ দিন করা হয়েছিল। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়, সেটি কার্যত কোনো ফল দেয়নি। এই কঠোর বিধি-নিষেধ নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যে কারণে দুই দফায় সেই বিধি-নিষেধ শিথিল করে সরকার। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। কিন্তু কার্যত দেখা যায় পুলিশ আসলে দোকান-পাট বন্ধ হয় আর তারা চলে গেলেই সব স্বাভাবিক। দোকান-পাট খোলার কারণে ভিড় বাড়ছে দোকানগুলোতে। ফলে মূলত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দিনমজুর। লকডাউনের সময়সীমা বাড়ালেও তা কার্যকর হবে না যদি সেটি কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমাদের লুকোচুরি খেলাতে করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই পরিসংখ্যানকে কমিয়ে জয়ী হতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

যেকোন বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা সর্তকতা ও পূর্ব প্রস্তুতি বিপর্যয় কমিয়ে দেয়। সেই আলোকে বাংলাদেশ করোনার সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করবে বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কারণ যেখানে বিশ্বের ৩৬টি দেশ এখনও টিকা পায় নি সেখানে বাংলাদেশে করোনার টিকা নিয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। তারপরও আমাদের সচেতন হতে হবে।

করোনাকালীন সঙ্কটের সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে ও আশেপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । একবছর আগে পরামর্শ দিলেও বর্তমানে সেগুলো আবারও প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে বলা হয়েছে ডব্লিউএইচওর নির্দেশনায়। এছাড়া মাংস ও ডিম অবশ্যই যথাযথ তাপে ও ভালোমত রান্না করে খেতে বলা হয়েছে। হাঁচি ও কাশির সময় অবশ্যই হাত বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এরপর টিস্যু ফেলে দিতে হবে এবং অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর হাত ধুতে হবে। কোনো প্রাণির যত্ন নিলে বা স্পর্শ করলে ও প্রাণিবর্জ্য ধরার পর হাতে ধুতে হবে। শরীরে যে কোনো সংক্রমণ এড়াতে রান্না ও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

নিজের পাশাপাশি অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও। ব্যবহার করা টিস্যু খোলা ঝুড়ি বা ডাস্টবিনে না ফেলে ঢাকনা রয়েছে এমন ঝুড়িতে ফেলতে হবে। হাতে গ্লাভস না পরে বা নিজে সুরক্ষিত না থেকে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির মুখ ও দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একইভাবে গবাদিপশু ও বন্যপশুকে ধরার আগেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। রান্নাঘরের কাজেও বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলছে। কাঁচা মাংস, সবজি, রান্না করা খাবার কাটার জন্য ভিন্ন চপিং বোর্ড ও ছুরি ব্যবহার করতে হবে। কাঁচা মাংস, সবজি ও রান্না করা খাবার হাতে ধরার আগে অবশ্যই প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। রোগে ভুগে মারা যাওয়া বা অসুস্থ প্রাণীর মাংস একেবারেই খাওয়া চলবে না। তবে রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকাতেও উপযুক্ত তাপে ও ভালোভাবে সিদ্ধ করা মাংস খেলে ঝুঁকি নেই। কাঁচা বাজারে গিয়ে কোনো প্রাণী ও প্রাণীর মাংস হাতে ধরলে দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কাঁচা বাজারে অবস্থানের সময় অযথা মুখে-চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের জায়গাটি দিনে অন্তত একবার হলেও পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিধেয়টি অবশ্যই প্রতিদিন বদল করতে হবে এবং ধুতে হবে।

সংক্রমণ এড়াতে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা ভালো। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কের মধ্যে ভ্রমণ বিষয়েও সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদি জ্বর-সর্দি অনুভূত হয়, তাহলে যে কোনো ভ্রমণ বাতিল করাই ভালো। পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ওষুধ খেতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি মাস্ক ব্যবহার করা হয়, তবে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। একবার মাস্ক পরলে তা বার বার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একবার মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। মাস্ক ধরার পর হাতে ধুয়ে নিতে হবে। যদি ভ্রমণের সময় অসুস্থ বোধ হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। এর আগে রোগের ইতিহাস থাকলে সেটাও চিকিৎসককে জানাতে হবে।

করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর কারণেই শীতকালে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি হয় নি। কিন্তু সম্প্রতি করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ সেগুলোকে না মানার কারণ হতে পারে। নিজে বাঁচতে হলে ও পরিবার-পরিজনকে বাঁচাতে হলে উপরোক্ত নিয়মের সাথে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া নির্দেশনা আমাদের মানতে হবে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সরকারি বিধি ও স্বাস্থ্যবিধি উভয়ই কার্যকর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

সারাবাংলা/এসবিডিই/আরএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর