Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকাবাসীর স্বপ্নবাহন মেট্রোরেল

অনন্য প্রতীক রাউত
২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৩৯

বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে পুরো দেশের চাপ স্বাভাবিকভাবেই বহন করতে হয়। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ এখানে অত্যাধিক। প্রতিনিয়ত জীবিকার অন্বেষণে, ভাগ্যকে বদলে দিতে শত শত লোক ঢাকায় পাড়ি জমায়। ফলশ্রুতিতে, সঠিক নগরব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা সময়ের দাবী ছিল। বিগত কয়েক দশকে সমস্যাগুলো যেমন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে তেমনী সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থাপনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মেট্রোরেল এর বাস্তবায়ন সে যাত্রায় বিরাট এক মাইলমাইলফলক।

বিজ্ঞাপন

সময় সাশ্রয়, দূষণ রোধ, জ্বালানি সাশ্রয়ের মত বহু কার্যকরী দিক রয়েছে মেট্রোরেলের। যানজট সমস্যার মত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে মেট্রোরেল সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। যা খুবই ইতিবাচক একটি পরিবর্তন। ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একটি বাসে যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা এবং ভিড়ের সময়ে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। মেট্রো রেলে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। মিরপুর কিংবা উত্তরার দিকে যেতে প্রতিবারই ট্রাফিক সিগন্যাল আর যানজটের কারণে নাকাল হতে হয়। এখন মেট্রোরেলে অল্প সময়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া যাবে। মেট্রোরেল ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করবে। মেট্রোরেল নগরবাসীর যানজটের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব করবে।

বিজ্ঞাপন

২৮ ডিসেম্বর, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন মেট্রোরেলের। প্রথম যাত্রী হিসেবে ভ্রমন করেন বাঙালির আশা ভরসার একমাত্র বাতিঘর। উত্তরা-আঁগারগাও পৌঁছাতে ট্রেনটি সময় নেয় মাত্র ২১ মিনিট। প্রথম পর্যায়ে অনেকটা ক্ষুদ্র পরিসরে চালু হবে এটা সত্যি তবে নিঃসন্দেহে পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে অচীরেই পূর্ণাঙ্গ ভাবে সার্ভিস পাবে নগরবাসী। মেট্রোরেলের প্রজেক্টটির অফিসিয়াল নাম দেয়া হয় ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট৷ সেই প্রজেক্ট অনুসারে, চোখের পলকে ছুটবে ট্রেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭মিনিট। পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর ছাড়বে এসি ট্রেন। সম্পূর্ণ এলিভেটেড মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহণের সক্ষমতা থাকছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ১৬টি স্টেশন। সাড়ে তিন মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন থামবে। থাকবে আধুনিক রেল স্টেশন। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে। ‘প্রিপেড কার্ড’ দিয়ে ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। আবার টিকিট কেটে ভ্রমণেরও সুযোগ থাকবে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলবে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশদ্বার। বিদ্যুতে চলবে দ্রুত গতিসম্পন্ন এই ট্রেন। জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিল রেখে মেট্টোরেলে থাকবে লাল সবুজের সমাহার।

মেট্রোরেল আধুনিক নগর পরিকল্পনায় এক বিস্ময়কর সংযোজন। যা মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনে বা গতি আনয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। অনেকে মনে করেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ করেও নাকি যানজট কমানো সম্ভব হয়নি সেখানে মেট্রোরেল কেমন ভূমিকা রাখবে? তাদেরকে গুজবের বশবর্তী হয়ে আগাম ভাবনা না ভেবে বাস্তবতা উপলব্ধি করবার অনুরোধ জানাই। মেট্রোরেল একদিকে যেমন যানজট কমাবে অন্যদিকে ঢাকাকে করে তুলবে দৃষ্টিনন্দন এক নগরী। সেই অগ্রযাত্রায় যেকোন যুক্তিতেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ বিজয়ী বেশে বুক ফুলানোর স্বপ্নকে সত্যি করলেন৷ মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় ভাবে হয়েছে তাই কোন প্রকার অসাধু উপায় অবলম্বন করার বিন্দুমাত্র সুযোগ এখানে থাকবে না।

মেট্রোরেল চালু হতে না হতেই একটি কুচক্রী মহলকে মেট্রোরেল বিষয়ে অপ-প্রচারে শামিল হতে দেখা যাচ্ছে। যেমনটা দেখা গিয়েছে দেশের সর্ববৃহত্তম প্রকল্প পদ্মাসেতুর সময়েও। এমনকি অবৈজ্ঞানিক নানা তথ্যর সাহায্য নিতেও দেখা গিয়েছে দেশদ্রোহী কুচক্রী এই মহলটিকে। এবার মেট্রোরেল বিষয়ে তারা বলছে অতিরিক্ত ভাড়া ধার্য করা হয়েছে। বিষয়টি যেমন হাস্যকর তেমনী গাণিতিক ভুল বৈকি কিছুই নয়। গাণিতিক ভাবে হিসাব করলেই যেটার অসত্য রূপটি দেখা যাবে সহজভাবে। সরকার নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে সিটিবাসের ভাড়া ২.৪৫ টাকা, সিএনজি ১২ টাকা, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ১৫ টাকা আর সেখানে মেট্রোরেলের কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। অত্যাধুনিক সংযোজন, দ্রুততা বিবেচনায় ৫ টাকা নিশ্চয়ই খুব বেশী নয়। যেহেতু সিএনজি, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের চেয়ে অনেক কম সুতরাং এটিকে নেতিবাচক ভাবে ব্যাখা করার সুযোগ নেই। সিটি বাসের তুলনায় মেট্রোরেল সবদিক থেকেই উন্নত মানের ও দ্রুতগতির সুতরাং একটু বেশী হওয়া নিশ্চয়ই যৌক্তিক। তাছাড়া দ্রুততা, যানজট না থাকার ফলে কর্মঘন্টা, অর্থনৈতিক অবস্থা সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটবে স্বাভাবিক ভাবেই। সে প্রেক্ষিতে বিষয়টির সম্ববয় ঘটবে বলে আশা করাটা কোনভাবেই অবান্তর হবে না।

জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাবাসীর জন্য যে দীর্ঘস্থায়ী উপহার দিয়েছেন তা নিসন্দেহে অমূল্য। এই উপহার দেওয়ার বা আজকের অবস্থান সৃষ্টি করার পথটা নিশ্চয়ই সহজ ছিলো না, ছিল বন্ধুর। স্বপ্ন ধূলিঝড় করার দেশে, ইনডেমনিটির মত লজ্জাজনক আইনের দেশে, নিজ পিতাকে হত্যাকারীদের দেশে উন্নত স্বপ্ন বা মানসিকতা ধারণ করাও হয়তো একসময় পাপ ছিল। সে যাত্রাপথকে অসীম সাহসিকতায় জনগণ বান্ধব করে তুলছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের মহড়া এবং মানুষের আস্থা লাভের প্রক্রিয়াটা সহজ ছিলো না তা আগেই উল্লেখ করেছি। প্রথমত, এদশের মানুষ যা কল্পনা করেনি তা নির্মাণ এবং বিশ্বাসের জায়গা অর্জন। দ্বিতীয়ত, ঘরের শত্রু বিভীষণদের সামলানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। গুজব, অসত্য বুলি শক্তহাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে প্রকল্প নির্মাণকারী সরকার। যার নেতৃত্বে শৈল্পিক বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা।

একসময়কার তলাবিহীন ঝুড়ি প্রবাদটি অসত্য প্রমাণ হয়েছে বহু আগেই। এখন বাংলাদেশের পায়ের তলা কংক্রিটের মতোই শক্ত তাই বক্ষ গহ্বরটাও নরম নয় আর বরং দৃঢ়। এমতবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবাতে বাধ্য হচ্ছে বিশ্বের পরাক্রমশীল রাষ্ট্রগুলো। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি অসংখ্য ইতিবাচক দিক, জননেত্রী শেখ হাসিনার ইতিবাচক নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে। মেট্রোরেলের মত বৃহৎ প্রকল্পগুলো সে যাত্রায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে কয়েকধাপ। যার পিছনে রয়েছে জনগণের স্বপ্ন ও শ্রম এবং জনগণের জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে। কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী, আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি সর্বদা।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

অনন্য প্রতীক রাউত ঢাকাবাসীর স্বপ্নবাহন মেট্রোরেল মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর