সংসদের ৫০ বছর পূর্তি
৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১৯
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে আড়ম্বরের সাথে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। আর প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ৭ এপ্রিল ১৯৭৩। সে হিসেবে গতকাল ছিল জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন চলছে। সেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণও দিয়েছেন। জাতীয় সংসদ ভবন ও আশেপাশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে মহাসমারোহ চলছে। কিন্তু সংসদে বিরোধীদল বলে কিছু নেই এখন। এখন সবাই সরকারি দল করে। তর্ক-বিতর্ক-যুক্তি সেখানে অনুপস্থিত। এমনকি রসিকতাও সেখানে হয় না। কোন রাজনৈতিক মতপার্থক্য নেই। দ্বন্দ্ব নেই। গত পঞ্চাশ বছরে ক্ষমতাসীন তথাকথিত বড় দলগুলোর অর্থনীতি ও দর্শনগত মতপার্থক্য অনেক আগেই বিলীন হয়েছে। ফলে নামে ভিন্নতা থাকলেও তারা একদলে পরিণত হয়েছে বেশ আগেই। এসব অপরাজনীতির ধারাবাহিকতায় সংসদ আজ আর প্রতিনিধিত্বশীল নয়। আসলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত রাজনীতি অনুপস্থিত। তাহলে এ রাজনীতি কি রুচির দুর্ভিক্ষ প্রকাশ করে না?
করোনাকালে স্বাধীন বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়েছে ২০২১-২২ সালে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ও খরচে নানা অনুষ্ঠানমালা হয়েছে। জাতির পিতার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করা হয়েছে। বীর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এককথায় শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয়েছে। গান-বাজনা-নৃত্য-আলোক প্রজ্জ্বলন হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ ও যুদ্ধ পরিচালনাকারী নেতৃবৃন্দ আলোচনায় আসেননি। নেপথ্য নায়কদের স্মরণ করা হয়নি। জাতীয় চারনেতা ও উপদেষ্টাদের ছবি কোথাও প্রদর্শিত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে তাদের অবদান, ত্যাগ, দুরদর্শিতা, আদর্শ, নেতৃত্ব, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তাদের ভূমিকা, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় প্রভৃতি বিষয় আজ উপেক্ষিত, অনুচ্চারিত। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে দারিদ্র রয়েছে, এক-তৃতীয়াংশ মানুষের খাবারের নিশ্চয়তা নেই, বেকারত্ব বাড়ছে, ন্যায্য মজুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, শ্রমশোষণ বন্ধ হয়নি, খেলাপী ঋণ বাড়ছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, সিন্ডিকেট বাণিজ্য চলছে। বড়লোকের সংখ্যা গাণিতিক হারে বাড়লেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। আসল কথা হলো সুসম বন্টন হয়নি, হচ্ছেও না।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী আর জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর মাঝামাঝি সময়ে অনেকটা নিভৃতে কেটে গেছে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান যা `৭২-এর সংবিধান নামে সমধিক পরিচিত সে সংবিধানের সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদে (১৯৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত) প্রথম সংবিধান গৃহীত হয়, আর তা কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে। ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস। কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর জুড়ে পালিত হয়নি সংবিধানের সুবর্ণজয়ন্তী। `৭২ এর সংবিধানে চার মূলনীতি ছিলে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্রপরিচালনায় এ মূলনীতিগুলো আজ উপেক্ষিত, অকার্যকর। তাই বোধ হয় সংবিধানের সুবর্ণজয়ন্তী পালনে কারো কোনো তাগিদ নেই। কাগজপত্রে এসব নীতির কথা লেখা থাকলেও তার সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়বস্তুগুলোও সজীব আর জীবন্ত রাখা হয়েছে নানা সমীকরণে, চিন্তায়।
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় বড় হবে?
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী
সারাবাংলা/এজেডএস