Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার ঠেকাতে হবে

অলোক আচার্য
৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:০৩

আমাদের দেশে অপপ্রচার বা গুজব শব্দটি নানা কারণে একটি আলোচিত বিষয়। আমরা মনে হয় গুজব ছড়াতে এবং তা বিশ্বাস করতে বেশ পছন্দ করি! আগে পিছে ভাবি না। সত্য মিথ্যার ধার ধারি না। মোটামোটিভাবে একটা কথা ছড়িয়ে দিতে পারলেই হলো! ইচ্ছাকৃতভাবেই বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই কাজটি করেন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি বা মহল। সম্প্রতি কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণের ভিডিও বলে আপলোড হওয়ার পর নানা রকম বিরুপ মন্তব্য করা হয়েছে। কে কিভাবে এটা ছড়িয়েছে জানি না কিন্তু এটা যে একটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেটা বোঝা যায়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে কিছু নতুনত্ব আসবে এটাই স্বাভাবিক। মুখস্ত বিদ্যা থেকে বেরিয়ে যাওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন একটি বিষয় নিয়ে সমালোচনা থাকতেই পারে কিন্তু সমালোচনা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেটি নিয়ে সাধারণের মনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার মধ্যে পার্থক্য আছে। এটি অপরাধ। এভাবে অপপ্রচার চালানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যা বিরুপ মনোভাব তৈরি করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীও কথা বলেছেন এবং এনসিটিবিও ভিডিওগুলো যে ভ্রান্ত এবং মিথ্যা সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটি একটি অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু না। তাছাড়া একটি বিষয়ের আগে বা পরে না জেনে একটি খন্ডিত অংশ ফেসবুকে দিয়ে কি বোঝানো যেতে পারে? যারা প্রশিক্ষণ সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না তারা বিষয়টি বুঝবেন না। যেমন— গণিত একটি মজার বিষয়। গণিত অলিম্পিয়াড হলো মজার মাধ্যমে বা আনন্দের মাধ্যমে গণিত শেখার একটি প্রক্রিয়া। এখানে প্রশিক্ষণে বিভিন্ন উপায় থাকে। এর সাথে নতুন শিক্ষাক্রম গুলিয়ে ফেলার কিছু হয়নি। যেহেতু গুজবে কান দেওয়া বা মন্তব্য করা আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফলে সহজেই এটি নিয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই। এর সত্যতা যাচাই করারও প্রয়োজন মনে করি না অথবা সেই সুযোগও কম থাকে। এমনকি করোনার মধ্যেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। দেশে পদ্মা সেতু হয়েছে, মধুমতি সেতু হয়েছে আবার একশ সেতু একদিনে উদ্বোধন করা হয়েছে। এতকিছু অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করতে কতই না অবান্তর কথা ছড়ানো হচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে এসব গুজব ছড়ানো হয়।

বিজ্ঞাপন

আমরাও যেমন! কে কি বললো, কেন বললো, তা যে অসম্ভব ব্যাপার এসব বিবেচনা না করেই আমরা ছুটতে থাকি। রসিয়ে রসিয়ে গল্প করি। গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটতেও আমরা ওস্তাত। নানা ধরনের গুজব বাতাসে ভেসে বেড়ায়। যা রীতিমতো বিশ্বাস করাও কষ্টকর সেই গুজবে নানা অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড ঘটছে। মানুষের প্রাণ যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। সেসব গুজবে কান দিয়ে মানুষ ও দেশের ক্ষতি হচ্ছে। গুজব বলতে সাধারণত বোঝায় কোন ব্যক্তি, কোন গোষ্ঠি বা কোন দলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যমূলক কোন অপপ্রচার যার পেছনে বেশিরভাগ সময়ই কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকে। কোন অসত্য তথ্য বা প্রচার যা কারও ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায়ও বিঘ্œ হতে পারে। আমরা খুব সহজেই গুজবে কান দেই। আমাদের শিক্ষা দীক্ষার কোনোকিছুর প্রয়োগ না করেই বিশ্বাস করে নিচ্ছি। কোনোকিছু শুনলেই বিশ্বাস করতে হবে? যেখানে চোখে দেখেও আজকাল বিশ্বাস করাটা বেশ কষ্টকর। সেখানে কারও কাছ থেকে কিছু শুনেই সেটা বিশ্বাস করা এবং তা নিজের মতো প্রচারের কাজে লেগে পরা! চিলে কান নিয়েছে শুনে কান উদ্ধারের জন্য সবাই চিলের পেছনে ছুটি। একবারও নিজের কানে হাত দিয়ে পরীক্ষা করার কথা মনে করি না।

বিজ্ঞাপন

যার পেছনে ছোটা কেবল সময়ের অপচয়ই নয় বরং থাকে জীবনের ঝঁুকি। আজকাল ডিজিটাল মাধ্যমেই গুজব সৃষ্টি হচ্ছে খুব বেশি। যেহেতু আমাদের সবার হাতে হাতে এন্ড্রয়েট চালিত মোবাইল ফোন রয়েছে এবং শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট রয়েছে তাই কোন মিথ্যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য ছড়িয়ে দিতে বেশি সময় প্রয়োজন হয় না। খুব দ্রুত একজন থেকে অন্য জনে ছড়িয়ে পরে। তাই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া একটু সময়ের ব্যাপার। ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীরা প্রযুক্তির ব্যাবহারে দক্ষ হয়। অপপ্রচার ত্যাগ করে সত্যের পথ ধরি। আর আমরা যারা গুজবে সত্যে পরিণত করে আরও ছড়িয়ে দেই তারাও সচেতন হই। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা একটি জাতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে নিয়ে এভাবে অপপ্রচার কাম্য নয়।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার ঠেকাতে হবে মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর