Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ

অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক
২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪২

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রায় লক্ষ কোটি মা ও বোন অদম্য গতিতে তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান করছে। এসবই সম্ভব হয়েছে সরকারের নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি, যার অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা।

বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ ও সফলতার হার বাড়ায় কর্মক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সমানভাবে অংশীদার হতে পারছে নারী ও পুরুষ।

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি পারিবার বা কর্মক্ষেত্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট হওয়ায় সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য ক্রমান্বয়ে কমছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অর্জনে নারীর অবদান অনস্বীকার্য।

বিগত কিছুদিনে নারীরা শিক্ষায় যেভাবে এগিয়েছে, তার প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই প্রতিদিনকার বিদ্যালয়ে যাওয়ার দৃশ্যে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন-২০২১ অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েশিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং মাধ্যমিকে ছেলে ও মেয়েদের সমতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশের ওপরে স্থান পেয়েছে।

এসডিজি-৪ ও ৫ এর মতে, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং লিঙ্গ সমতার সবচেয়ে কার্যকরী চাবিকাঠি হল নারীদের শিক্ষা। সুশিক্ষা সকল অন্ধকার দূর করতে সক্ষম এ সূত্র মেনেই বর্তমান সরকার নারী শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।

২০০৪ সালের ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী নারীদের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৩১% এবং ২০০৮ সালে ছিল ৫১%। সেখানে বর্তমানে মেয়েদের স্বাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৩% আর গত ১০ বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে স্নাতক ডিগ্রিধারী।

বিজ্ঞাপন

মেয়েদের জন্য উপবৃত্তিসহ নানা প্রণোদনা আর সর্বোপরি অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে অনেকটা।

বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ ছাত্রী। প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হারেও ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। এতে গড় ভর্তি হার মেয়েদের ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ আর ছেলেদের ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

শুধু প্রাথমিকেই নয়, মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রী ও ছাত্রের অনুপাত ৫৩:৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ ছাত্রী অংশ নিচ্ছে।

গত কয়েক বছরের এসএসসি ও এইচএসসির ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এক দশক আগে প্রতি ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জনের মধ্যে। এখন তা ৭৩ ছাড়িয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, দেশের ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ শতাংশ নারী শিক্ষক। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ১৯৭৩ সালে মোট শিক্ষক ছিলেন ২ হাজার ৩১৭ জন। সে সময় নারী শিক্ষক ছিলেন ২০৩ জন, অর্থাৎ ৮ শতাংশ।

৫৩ বছরে এই হার বেড়েছে ২১ শতাংশ। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই নয়, প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও নারী শিক্ষক বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশে এবং দেশের বাইরেও বাংলাদেশের মেয়েরা প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, গবেষণা, চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নারী শিক্ষকদের যে হারে এগিয়ে রয়েছে উচ্চশিক্ষায় সেভাবে এগিয়ে যেতে না পারলেও এই অগ্রগতিই একসময় নারীদের এগিয়ে রাখবে। নারীর কাজের ক্ষেত্র এখন সীমাবদ্ধ নেই।

আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় ক্ষেত্র পোশাক শিল্পে বিপুল সংখ্যক নারী কাজ করছে। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে নারীর উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রয়োজন হবে শারীরিকভাবে সক্ষম ও মানসিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ত মানবসম্পদ। গড়তে হবে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হবে।

লেখক:  চেয়ারম্যান, শিক্ষা বিভাগ এবং ডিন, শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর