নতুন সরকারকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে
১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০০
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও প্রায় দুই বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব যখন টালমাটাল অবস্থা এবং এই যুদ্ধ এখনো চলমান। এদিকে প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিক্রম হতে চলা ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, আবার সে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের দিকে লেবাননেও যুদ্ধের উত্তেজনা চলছে। ইতিমধ্যে লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা মার্কিন এক যুদ্ধ জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় প্রতিদিন কত শত শত মানুষ এই সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে তার কোনো সঠিক হিসেব নেই। এই সব ক’টি যুদ্ধের নাটেরগুরু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাত রয়েছে বলে বিশ্বব্যাপী পরিস্কার হয়েগেছে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধকে কিভাবে বন্ধ করা যায় সেদিকে নজর না দিয়ে উপরন্তু যুদ্ধে কোনো না কোন একটি দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকার কারনে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় জনগণ এক অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছে। এই একটিমাত্র দেশের কারণে বিশ্বব্যাপী এখন মানবিকতার সংকট, খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। মানবতা যে কি পরিমান ধ্বংস হয়েছে তা ভাষায় বর্ণনাতীত। মানবতার সংকট থেকে উদ্ধারে যে সংস্থাটি তৎপর থাকার কথা সেই জাতিসংঘের ভূমিকাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁর এখন খুঁটির জোর নেই।
এমন এক কঠিন সময়ে গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশে সৃষ্টি হয় অরাজক পরিস্থিতি আগুন নিয়ে খেলা। আগুনের লেলিহান শিখায় মানুষের জীবন মুহুর্তের মধ্যে নিভে গেছে। পরিবারের স্বপ্ন বিলীন হয়েগেছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়েগেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী এখনো আকাশ ছোঁয়া। সরকার সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেও সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো লক্ষণ নেই। মানুষ এখন ঠিকমত খেতে পারছেন। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছেনা। মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেনা। নুন থেকে তেল কোথাও স্বস্তির খবর নেই। আয়ের সাথে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক। শিক্ষাসামগ্রীতেও এখন আগুন লেগেছে। একথা স্বীকার্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে সামগ্রিকভাবে দেশে বহু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে চাইলে দেশে কয়েকবছর উন্নয়ন প্রজেক্ট বাতিল করা জরুরি। দূর্নীতি ও লুঠেরাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দেশে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় দেখে দিয়েছে তা ওপর তলার মানুষগুলোর কানে মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কষ্ট ও বেদনার কথা কানে স্পর্শ করছেনা। প্রতিদিন বাজার ঘুরে, উর্ধ্বগামী দর দাম দেখে ফিরে যেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। আবার দু’য়েকটি বাজার সদাই করতে গিয়ে যে হারে পকেট খালি হয় সেভাবে থলে পুরাতে পারছেনা। শীতের এই ভরা মৌসুমেও স্বব্জির বাজার চড়া। মুদির দোকানের শুকনো বাজারেও দরদামের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, এ যেন কার আগে কে লুট করে নেবে এরকম ভাবসাব। তেল, চাল, ডাল, আটা, আলু, পিয়াজ, নানা প্রকার বিস্কুটসহ ইত্যাদি পণ্যসামগ্রী কিনতে গেলে দিনের সকাল সন্ধ্যার মধ্যে দরদামে তফাৎ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাসামগ্রী বই, খাতা, কলম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষ সন্তানদের ঠিকমতো যোগান দিতে না পেরে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাড়তি খরচ যুক্ত হয়েছে নতুন শিক্ষা ক্যারিকুলামের উপকরণ কেনার। প্রতিদিন শিক্ষকদের কোনো না কোনো ফরমায়েশ মানতে গিয়ে অভিভাবকদের পকেট খালি করতে হচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রায় বছর ধরে দেশে কোনো কিছুতেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিলনা। এবার একটু নজর দিন। দেশ এভাবে চলতে পারেনা। মানুষদের শান্তিতে থাকার সুযোগ করে দিন। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা অন্তত দু’বেলা-দু’মুঠো পেট ভরে ভাত খেয়ে শান্তি থাকতে চায়। তারা এত অট্টালিকা চায় না। রাজপ্রসাদ চায় না। বাড়ি-গাড়ি চায় না। ব্যয় সংকোচনের জন্য সকল মন্ত্রণালয়কে নিদের্শনা প্রদান করুন। প্রতিদিন বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশনা প্রদান করুন। আমদানি-রপ্তানি খাত উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যেগ-পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। পোষক খাতকে যেকোন উপায়ে সচল ও বাজার বাড়াতে বাইরের দেশগুলোর সাথে কনসালটেন্ট নিয়োগ করুন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখন মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে বাইরের দেশের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে জনশক্তি রপ্তানীতে আগের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বারোপ করুন।
মানুষ সুস্থ ও শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরকে এ আশা থেকে বঞ্চিত করবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অতি দয়ালু। আপনি পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়ে এখন শক্ত হয়েছেন। শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে দেশের সেবাই আত্মনিয়োগ করেছেন। আপনি এই পর্যন্ত যেহেতু পেরেছেন। আগামীতেও পারবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি যে ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের জনগণ আনন্দিত হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তীতে যেভাবে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছেন এরকম মন্ত্রী পরিষদ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কোনো সরকার দেখাতে পারেনি। আপনি দেশের একেবার অখ্যাত মুখকে মন্ত্রীসভায় স্থান করে দিয়ে তাগ লাগিয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে বিগত সময়ে যেসব মন্ত্রীদের গায়ে এক-আধটু দূর্নীতির ছোঁয়া লেগেছে তাদেরকে যেভাবে ছাঁটাই করেছেন রাষ্ট্র পরিচালনা কিভাবে করতে হয় তা বিশ্ববাসীকে আরেকবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। যদিও বা নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ ও সুন্দর-স্বচ্ছ, এবং অভাবনীয় মন্ত্রী পরিষদ উপহার দিয়ে বিদেশীদের মুখে একেবারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এই বিস্ময়কর কৃতিত্বের জন্য দেশে-বিদেশে আপনি আজ নন্দিত-অভিনন্দিত হচ্ছেন। এই গৌরবে গড়িয়ান দেশের ১৮ কোটি জনগণ।
এবার যেভাবেই হোক নিত্যপণ্য দ্রব্য সমাগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি খাতে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংক খাত এখন অনেকটা সেই ইন্সুর্যান্স কোম্পানির মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাট পর্যায়ে গিয়ে মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করা ব্যতীত চাকরি থাকছে না। প্রতিদিন ব্যাংকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাটাই অব্যাহত আছে। যথাসাধ্য জনবল নিয়ে এখন ব্যাংকগুলো কোনোরকমে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে। ব্যাংকের কয়েকটি শাখা ব্যতীত তাদের অধিকাংশ বড় বড় অফিস গুটিয়ে মাত্র দু’য়েকজন কর্মচারী দিয়ে বুথের মাধ্যমে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ। আপনার হাতে যাদুর কাঠি আছে সড়ক সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের মহোদয় আপনাকে দেখেছেন ‘ম্যাজিক লিডারশীপ’ এর ভূমিকায়, সত্যিই আপনি তাই। আপনি ১৮ কোটির এই দেশের মানুষকে যেভাবে দেখেন এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনার যে অদম্য ইচ্ছা, বাংলার জনগণ তা ইতিমধ্যে বুঝেগেছে। এই সোনার বাংলাদেশকে আপনি মায়ের মতো ভালোবাসেন যা আপনাকে দেখলে অনায়সে বুঝা যায়। দেশের প্রতি এমন মায়া-দরদ আপনার পিতা ব্যতীত আর কোনো সরকার প্রধানের কাছে দেখিনি। আপনার অদম্য মনোবল, শক্তি, অটুট, সততায় আপনি এখন বিশ্ব নেতাদের মধ্যে একজন। আপনি হচ্ছেন লৌহ মানবী। একজন নারী হয়ে এই অল্প ক’বছরে দেশের গতি প্রকৃতিকে পাল্টিয়ে দিয়েছেন। বিশ্ব নেতাদের চোখে আপনি এখন একজন আইডল, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। “সাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়” আপনি হারতে পারেন না। আপনি হারলে মানবতা ভুলন্ঠিত হবে, বিশ্ব হারিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে কৃষক, কামার, কুমার, দ্বীন-দরিদ্র আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা। ভালো মানুষের শত্রু আছে, ভালো কাজের শত্রু আছে, হিংসা আছে, বিদ্বেষ আছে এইসব কিছু আপনার পিছনে পিছেনে লেগে থাকবে। কারণ আপনি জনপ্রিয়, ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়, তাই আপনাকে এই শত্রুদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগুতে হবে। আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যু বরণ করলে ও তার সন্তান হিসেবে জাতির অগ্রগামীতার প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন সেই নৌকার মাঝি আপনি একজনই। আপনার অদম্য ইচ্ছা ও ভালোবাসায় নৌকা আজ দেশের সামগ্রীক উন্নয়নের প্রতীকে রুপান্তর ঘটেছে। এই যাদুকরি ইচ্ছার অন্যতম জননীর নাম হচ্ছে শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
নতুন সরকারকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত