সুন্দরবন আজ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৪
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পালন করা হচ্ছে দিবসটি।
২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস।
সুন্দরবন বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনের থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ বনে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মেলে। এখানকার উল্লেখ্যযোগ্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- সুন্দরী, গেওয়া, গরান, গোলপাতা, বাইন, কাঁকড়া, হারগোজা, হেতাল প্রভৃতি।
সুন্দরবন অসংখ্য বৈচিত্র্যপূর্ণ বন্যপ্রাণির অন্যতম আবাসভূমি। এ সকল বন্যপ্রাণি বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ। বনের সার্বিক পরিবেশ সংরক্ষণে এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। এখানে ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণিসহ মোট ৪০৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণি রয়েছে। পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাস এখানেই। আরো উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণি হচ্ছে হরিণ, বানর, শুকর, কুমির, ডলপিন, গুইসাপ, অজগর, বালিহাঁস, হরিয়াল, গাংচিল, বক, মদনটাক, চখা, চিল ইত্যাদি। সুন্দরবনের নদী-নালায় রয়েছে ৫৩ প্রজাতির সমুদ্রচর মাছ, ১২৪ প্রজাতির সাদা মাছ, ২০ প্রজাতির চিংড়ি, ৭ প্রজাতির কাঁকড়া, ৮ প্রজাতির লবষ্টার ইত্যাদি। সবমিলিয়ে সুন্দরবন বিশ্বের মধ্যে জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ম্যানগ্রোভ বন।
একদিকে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সুন্দরবন। আইলা থেকে বুলবুল এমনকি ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ও সুন্দরবনের ওপর দিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে উপকূল অতিক্রম করে। মূলত সুন্দরবনের গাছপালায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েই দুর্বল হতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। ‘আম্পান’ যে গতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল সুন্দরবন তার বুক পেতে ঢাল হয়ে ঝড়ের সেই গতিকে কমিয়ে তান্ডবলীলা থেকে আগলে রেখেছে। সুন্দরবনের পরিবেশগত গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিশাল আয়তনের ম্যানগ্রোভ বন বাতাস থেকে অধিক মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিজ দেহে মজুদ রাখতে সক্ষম। এর মধ্যে কেওড়া গাছ সর্বাধিক কার্বন এর শিকড়, কাণ্ড, ডালপালা ও পাতায় মজুদ রাখতে পারে। এক হেক্টর কেওড়া বন বছরে ১৭০ টন পর্যন্ত কার্বন মজুদ রাখতে পারে। বাইনের ক্ষেত্রে তা ১১৫ টন, গেওয়ায় ২৩ টন। এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে মোটামুটি ৬৬২ কোটি টন কার্বন মজুদ আছে।
জীববৈচিত্র্যের এমন প্রাচুর্যতার জন্য সুন্দরবন ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে।
পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন আজ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানি দূষণ, দুর্ঘটনা, তেলদূষণ, শব্দদূষণ, নদীতে পলি পড়া, আগুন লাগা, অবৈধভাবে গাছপালা কর্তন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, আর সুন্দরবনের আশেপাশে শিল্পকারখানা স্থাপনের কারণে সুন্দরবন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সুন্দরবন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এতে বাংলাদেশ বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেলেও আঘাত ঠেকাতে গিয়ে সুন্দরবন হয়ে গেছে বিধ্বস্ত। বর্তমানে পৃথিবীতে এখন যে সীমিত সংখ্যক জীব বৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য আছে তার মধ্যে আমাদের সুন্দরবন উল্লেখযোগ্য।দেশের ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য সচেতন হতে হবে সাধারণ জনগণ এবং সরকারসহ সবাইকে সঠিক উদ্যােগ গ্রহণ করতে একযোগে কাজ করতে হবে।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই