Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জ্ঞানের আলো ছড়ায় বইমেলা ও বই পড়ায়

তৌফিক সুলতান
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৩

বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান অর্জন হয় চিন্তা চেতনার বিস্তার ঘটে। জ্ঞান কে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য মাধ্যম হলো লেখনী আর এই লেখা সংরক্ষণের এক অন্যতম মাধ্যম হলো বই। আজকের এই উন্নত আধুনিক বিশ্বের পিছনে বইয়ের ভূমিকা যে অন্যতম তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

অচেনাকে চেনার এবং অজানাকে জানার যে চিরন্তন আগ্রহ, তা বই পড়ে কিছুটা কাটিয়ে উঠা যায়। বই মানুষের পরম বন্ধু বইয়ের থেকে আপন কিছু নাই। একটি ভালো বই একটি জাতিকে আলোকিত করতে পারে।বই মানুষের চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি করে হৃদয় শান্ত করে মানের ভাব প্রকাশ করে ভালোমানুষ হতে সাহায্য করে। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে। একটি ভালো বই ঘুমন্ত বিবেক কে জাগ্রত করতে পারে। জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে হলে, সুবাসিত করতে হলে জ্ঞানার্জন করতে হয়। আর জ্ঞানার্জন করতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞানের কথা যেন বইয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে। তাই জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নিজেকে জানতে হলে,বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সম্পর্কে জানতে হলে বই পড়তেই হবে। বই হচ্ছে সমুদ্রের মতো, একেকটা বই হচ্ছে জ্ঞানের এক ফোঁটা সমুদ্রের জল। বই পড়া এমন এক তৃষ্ণা, যা সহজে মেটে না, ভালো বই শুধু পড়তেই ইচ্ছে করে।

বিজ্ঞাপন

কবি, সাহিত্যিক ও লেখকরা বলে থাকেন, সত্যিকারভাবে বই হচ্ছে সভ্যতার সূতিকরিগর, স্বপ্নের কারিগর, জ্ঞানের আধার ও মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। একজন মানুষ যে পেশায় যত দক্ষই হোক না কেন, যত বড় পন্ডিত বা জ্ঞানীই হোক না কেন, তার দক্ষতা ও পেশাদারি উৎকর্ষ অর্জনের জন্য তাকে বারবার বইয়ের কাছেই ফিরে আসতে হয়। কারণ জ্ঞানের সূচনা বই থেকে শুরু হয় এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা বই থেকেই পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমেই শুরু হয়। এ জন্য বইকে বলা হয় জ্ঞানার্জনের প্রধান মাধ্যম এবং জীবনকে আপন আলোয় আলোকিত করার প্রধান উপায়ই হচ্ছে বই। বই পড়েই জ্ঞানার্জন করতে হয়। পৃথিবীতে যারা যত বড় হয়েছেন, জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন, তারাই বেশি বেশি জ্ঞান অন্বেষণে বই পড়েছেন। পৃথিবীর যেকোনো বরেণ্য মনীষীর জীবন ইতিহাস ঘাঁটলে এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। দেশ ও জাতি গঠনে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। আর সহজ উপায়ে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়াতে সমাজের জন্য বই অপরিহার্য। বইয়ের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। বই হচ্ছে শেখার, জানার ও জ্ঞানার্জনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। পৃথিবীতে নানা ধরনের মেলা ও হাট বসে, এসবের মধ্যে বইমেলা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মেলা। কারণ এখানে লেখক-পাঠকদের মহামিলন হয়, ভাব ও মতবিনিময় হয়, জ্ঞানের বিস্তার ঘটে, অনেকেই লেখক, কবি, উপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং আবার অনেকেই বইমেলা থেকে বই কিনে পন্ডিত হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। বইমেলা থেকেই জ্ঞানের আলো দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্যই এটা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মেলা।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশে লেখক-পাঠক-শিশু-বৃদ্ধ সবার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ফেব্রম্নয়ারি মাস। কারণ ফেব্রম্নয়ারিজুড়েই চলে সবার প্রাণপ্রিয় অমর একুশের বইমেলা। একুশের চেতনার পূর্ণাঙ্গ ফসল আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে একুশের চেতনায় ধীরে ধীরে অমর একুশে বইমেলা একটি স্থায়ী রূপ পেয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমিতে প্রথম সাত দিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানকে ঘিরেই মুক্তধারার প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির সামনের আমতলায় পাটের চট বিছিয়ে নিজের প্রকাশনার কিছু বই নিয়ে একুশে বইমেলার সূচনা করেন। তারপর ধীরে ধীরে অন্য প্রকাশকরা এই বইমেলায় যোগ দিতে শুরু করেন।

তারপর অমর একুশে বইমেলার কেবল পরিসর বৃদ্ধিই পায়নি, বরং বাংলা একাডেমি চত্বর ছাড়িয়ে এখন সেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি মাসব্যাপী স্থায়ী বইমেলায় পরিণত হয়েছে। মাঝখানে করোনা মহামারির কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালের অমর একুশে বইমেলা কিছুটা নানান ধরনের শৃঙ্খলার ঘেরাটোপে স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। কিন্তু এরপর অমর একুশে বইমেলা আবারও স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হয়েছে। আমাদের জাতি-গোষ্ঠী-বর্ণ ও সব শ্রেণির জন্যই এককথায় আমাদের একটাই সাংস্কৃতিক উৎসব। আর সেটা অবশ্যই ফেব্রম্নয়ারিজুড়ে চলা অমর একুশে বইমেলা। যে কারণে দেশের সর্ববৃহৎ এই সাংস্কৃতিক উৎসবের জন্য প্রকাশক, লেখক ও পাঠকরা বাকি এগারো মাস মুখিয়ে থাকেন। বইমেলার সবচেয়ে প্রাণবন্ত দৃশ্য হলো, যেদিকেই দৃষ্টি যায় সেদিকেই কেবল বই আর বই, যেন এক জ্ঞানসমুদ্র। এ কারণেই মাসব্যাপী এই বইয়ের হাট সবার সবচেয়ে প্রিয় মিলনমেলা। বইমেলায় গেলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় শিশুরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন বইয়ের সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ, নতুন বইয়ের চোখ-ধাঁধানো বাঁধাই, নতুন বইয়ের চমৎকার সব লেখা, তারা এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে প্রচুর আনন্দ পায়, প্রিয় বইটি কিনে নেয়। এমনকি বইমেলা থেকে অনেকে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তা করারও খোরাক পায়। কেউ কেউ লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যে কারণে অমর একুশে বইমেলা সবার প্রাণের মেলা।

আগে কেবলমাত্র পত্রপত্রিকায় বইমেলা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু ইদানীং গণমাধ্যমের পাশাপাশি প্রতিবছরই আমরা অমর একুশে বইমেলার ভালো এবং মন্দ দিক নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় বেশ সরব থাকি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য থাকে প্রাণের এই অমর একুশে বইমেলা যেন আরও সুন্দর হয়, আরও পরিপাটি হয়, আরও গোছানো হয়, আরও পরিচ্ছন্ন হয়, আরও নির্বিঘ্ন হয়, আরও স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বজনীন হয়, সেটি যেন আয়োজক বাংলা একাডেমি যথাযথভাবে পালন করে।

বইমেলায় দেশ ও বিদেশ থেকে আগত লেখক-পাঠকদের একটি মিলনমেলা হয়, অনেক পাঠক প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে এবং অটোগ্রাফ নেওয়ার পর যেন তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। অনেকেই আগত বন্ধুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও চুটিয়ে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা কেবল অমর একুশে বইমেলার মাসেই এই সুযোগটি পায়। বইমেলায় গেলে নতুন বই নিয়ে শিশুদের অবারিত আনন্দ দেখার সুযোগ সত্যিই মনোমুগ্ধকর এবং এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আনন্দ। বই নিয়ে শিশুদের আনন্দময় চোখ দেখা যেকোনো লেখকের জন্য একটি অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য।

বই পড়ার গুরুত্বও অপরিসীম। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে মানুষকে বই পড়তে হবে। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ তার জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করতে পারে। কারণ বই পড়ার মাধ্যমেই প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি তার চিন্তাশক্তি, যুক্তি, বুদ্ধির জাগরণ ঘটে, যা একজন স্বশিক্ষিত মানুষের জন্য অপরিহার্য। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানের রাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়। শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ হলো সাহিত্যচর্চা। আর সাহিত্যচর্চা করতে হয় বই পড়ে। বই পড়া ছাড়া উপায় নেই। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের সংকীর্ণতা পরিহার করা দরকার, আর তা বই পাঠের অভ্যাসের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, ‘রুটি মদিরা ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু বইখানি অনন্ত যৌবনা।’ জ্ঞান অর্জনের জন্য অবশ্যই বই পড়তে হবে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশাল জ্ঞানরাজ্যে প্রবেশ করে এবং অনেক অজানা দিগন্ত উদ্ভাসিত হয়। আপনি যত পড়েন তত জানেন এবং জানার সঙ্গে বদলে যায় আপনার দেখার চোখ। বদলে যায় বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। একটি প্রবাদ আছে, একজন অশিক্ষিত মানুষ কাদাকে দেখে শুধু ভেজা মাটি হিসেবে। আর এক জোড়া শিক্ষিত চোখ সেই কাদার মাঝে খুঁজে পায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু-পরমাণু। সপ্তদশ দশকের দার্শনিক বারুখ স্পিনোজা বলেন, ‘ভালো খাদ্যবস্তু পেট ভরে কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’ বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে, আর স্বপ্ন দেখার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

বই পড়া একই সঙ্গে সুস্থ বিনোদন ও শিক্ষামূলক কাজগুলোর মধ্যে একটি। অবসরে বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু ও বিনোদন আর কিছুই হতে পারে না। বই পড়া মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে, মস্তিষ্কের চিন্তা করার খোরাক জোগায়, সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি করে। বই পড়লে মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক মনস্ক হয়ে ওঠে। সুস্থ বিনোদন মানুষের মানসিক বিকাশে নানাভাবে সহায়তা করে। পাঠ অভ্যাস একটি নির্মল বিনোদনের উৎস। ভালো বই পড়া, জীবনশৈলী ভালো সিনেমা দেখা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের জীবনীগ্রন্থ পড়া, নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া যেমন দক্ষতা ও মনের খোরাক বাড়ায়, তেমনি জ্ঞানচর্চা এবং সৃজনশীল কাজ মানসিক বিকাশে অন্যতম ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে কাছের বন্ধুও মানুষকে ছেড়ে যেতে পারে কিন্তু বই সেটা করে না। এ জন্য বই হোক মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ও নিত্যসাথি, সুস্থ বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম ও সভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এবং এটি হচ্ছে একটি ঐশী গ্রন্থ, যার প্রথম নাজিলকৃত আয়াতের প্রথম শব্দ ইকরা বা পড়। অর্থাৎ মহাগ্রন্থ আল-কোরআনেও পড়া বা জ্ঞানার্জনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন প্রখ্যাত লেখক বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়নি, বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিন গুণও বাড়িয়ে দেন, তবুও তো আপনার দেউলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ আসলেও তাই, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়েছে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি কখনো, কিন্তু বই পড়ে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে, দেশ ও জাতি এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পেরেছে, এমন মানুষের সংখ্যা অধিক। বইয়ের মতো আপন বন্ধু পৃথিবীতে আর কেউই নেই। আসুন সবাই বইমেলা থেকে বেশি বেশি বই কিনি, আর জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করি। বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী, কাছের বন্ধু অমর একুশের বইমেলা হোক সর্বশ্র্র্রেষ্ঠ ও সুন্দর মেলা।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ব্যাপকভাবে পরিচিত একুশে বইমেলা, স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে ও বর্ধমান হাউজ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনেও মেলার একটি অংশ আয়োজন করা হয়।

এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন। যতদূর জানা যায়, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই।এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্যরা অণুপ্রাণিত হোন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম “অমর একুশে গ্রন্থমেলা”র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালানুক্রমে বাঙালির সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমী চত্বরে স্থান সংকুলান না-হওয়ায় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ বছর ২৯৯টি অংশগ্রহণকারী প্রকাশকের মধ্যে ২৩২জন কে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল বরাদ্দ করা হয়, ২০০২ খ্রিস্টাব্দে মেলায় ২৪০জন এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সর্বোচ্চ ৪২৫ জন প্রকাশক অংশগ্রহণ করেছিল।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই

জ্ঞানের আলো ছড়ায় বইমেলা ও বই পড়ায় তৌফিক সুলতান মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

কাজী শুভর ‘মিষ্টি প্রেমের দই'
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর