Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট ২০২৪-২৫: বহুমুখী প্রত্যাশা এবং চ্যালেঞ্জ

অলোক আচার্য
২৮ মে ২০২৪ ১৬:০৯

নতুন অর্থবছরের দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে দেশ। সেই সাথে একটি নতুন বাজেট প্রণীত হতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে আসতে যাচ্ছে যেখানে রয়েছে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির একটি দুঃসময় চলছে। মন্দাভাব প্রকট না হলেও অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা রয়েছে। তাছাড়া এই আগামী বাজেট হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং বর্তমান সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট। একটি কার্যকরী বড় বাজেট জনগণের মনে আশার সঞ্চার করে। এজন্য শুধু বাজেট প্রণয়ন করলেই চলে না বাজেটের বাস্তবায়নের হারও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও নানা কারণে স্বাধীনতার পর থেকে ঘোষিত বাজেটের শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সে কারণে চেষ্টা করা উচিত যত বেশি সম্ভব বাজেট বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি করা। সময়ের সাথে সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের বাজেটের আকার প্রতি বছরই বড় হচ্ছে। একই সাথে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মধ্যবিত্তের ওপর চাপ কমানো ইত্যাদি বিষয়গুলো বাজেট প্রণয়নের সাথে জড়িত থাকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আরেকটি বাজেট। এমন এক পরিস্থিতিতে এই বাজেট ঘোষিত হতে যাচ্ছে যখন সারা বিশ্বই এক ধরনের মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটে মতো পরিস্থিতি চলছে। মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আমাদের দেশেও আঘাত করেছে। বিশ্ব পরিস্থিতিও ভালো নয়। তবে বেকারত্ব এবং এর থেকে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ বিদ্যমান। অর্থনৈতিক ক্ষতি, সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা এবং এরপরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্যের বাজারে উত্তাপ এবং এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এর সাথে রয়েছে বেকারত্ব দূরিকরণের উদ্যোগ হিসেবে চাকরির বাজার সৃষ্টি, শিক্ষায় অগ্রগতি বিশেষত নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা, ইত্যাদি। তার সাথে রয়েছে আইএমএফের শর্ত মেনে চলা, রিজার্ভ শক্তিশালী করা এবং ডলার সংকটে বিষয়গুলো। মানুষের জীবিকায় ফেলেছে মারাত্বক প্রভাব। শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য বারবার স্থবির হয়েছে। শিক্ষিত বেকারদের জন্য কর্ম পরিকল্পনা এবং বরাদ্দ প্রয়োজন। সুতরাং এবারের বাজেট গতবারের থেকেও চ্যালেঞ্জিং। অর্থনীতি চাঙ্গা করে মানুষের জীবন মান উন্নয়নের সাথে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের গতি ধরে রাখা এবং জীবনযাত্রার ওপর ব্যয়ের চাপ কমানো এই বাজেটের চ্যালেঞ্জ থাকে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, এবারের (২০২৪-২৫) বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে গত বাজেটের চেয়েও বড়। গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আট লাখ কোটি টাকার বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে বলে মঙ্গলবার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে পরে এটি সংশোধন করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে বাজেটের আকারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা করতেই হবে। এই বাজেট হতে যাচ্ছে বিশাল একটি বাজেট। এবং এর বাস্তবায়ন অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। আগামী বাজেটের আকার জিডিপির ১৪ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে রাখা হচ্ছে। নতুন বাজেটে উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সমন্বয় ঘটাতে হবে। নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট হওয়ায় নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। আইএমএফ বলছে, বাজেট ‘নিউট্রালিটি’। এক্ষেত্রে জিডিপির ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশের মধ্যে বাজেট ঘাটতি রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশকে কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, ভর্তুকি যৌক্তিক করার কৌশল নির্ধারণ এবং খেলাপি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে এনইসি (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ)। এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছেএ কারণে জোর দিতে হবে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার। বাজেট একটি দেশের আশা আকাঙ্খার প্রতীক। বাজেট প্রনয়ণ নয় বরং বাজেট বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ হয় সরকারের জন্য। প্রান্তিক জনসাধারণের কাছে বাজেটের সুফল পৌছানো এবং দেশকে গতিশীল অভিমুখে ধাবিত করাই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য থাকে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাজেট ঘোষিত হয়। এই মুহুর্তে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ বা মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা। বাজেট ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই মিডিয়াসহ সর্বত্র বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। আসছে বাজেট কেমন হবে এবং বিগত বাজেট কেমন ছিল বা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়েই এসব আলোচনা চলে। অর্থনীতি গতিশীল করতে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে এই বাজেট সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে বলেই বিশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ জুন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তারপর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। বহু উত্থানপতনের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ হওয়ার কাতারে দাড়িয়ে। সময়ের সাথে যেমন বেড়েছে লোকসংখ্যা, বেড়েছে প্রয়োজন আর সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাজেটের আকার। বাজেটের সাথে দেশের জনগণের জীবনমান ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। দেশের উন্নয়ন জড়িত। ফলে বাজেট একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজেটের প্রভাব পরে বাজারে। কারণ বাজেটে কোন কোন জিনিসের দাম বাড়বে বা কমবে তা স্থির করা হয় এবং মিডিয়ার কল্যানে সেসব একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্রেতা ও বিক্রেতারাও সেটি পড়ে থাকে। বাজেটের পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিও আমাদের দেশের একটি সাধারণ ঘটনা। এমনকি দাম বাড়ার কথা শুনেও অনেকে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে মূলত এর ঝামেলায় পরেন নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা। কারণ এমনিতে সারা বছর তাদের হাতের অবস্থা টালমাটাল রয়েছে। এরমধ্যে আবার বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে তা আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা বিশেষত মানুষের জীবন ও জীবিকা সহজতর বা চাপ কমানোর প্রচেষ্টাই বেশি প্রাধান্য পাবে।

এরপরই আসে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের বিষয়। এর প্রথমেই রয়েছে কর্মসংস্থান। বেকারত্ব সমস্যা স্বাভাবিক সময়েই অধিকাংশ দেশের জন্যই মাথা ব্যথার কারণ। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় বেকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। বেকারত্ব,ক্ষুধা এবং দারিদ্রতা এই তিন ফল আপাত যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পৃথিবী মোকাবেলা করছে এবং আগামী বহু বছর করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্ট করা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন রয়েছে। খাদ্য উৎপাদন এবং মজুদ নিশ্চিত করার জন্য কৃষিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে। দেশের অর্থনীতির প্রাণ সঞ্চার করার জন্য প্রয়োজন কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমাদের কৃষির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিই পারে খাদ্য সংকটের মতো পরিস্থিতিতে টিকিয়ে রাখতে। এসবের সাথে সবচেয়ে শিক্ষা খাতের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শিক্ষাকে যুগোপযুগী করে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ থাকবে। যতদিন শিক্ষাকে যুগোপযুগি এবং আন্তর্জাতিকমানের করা না যাবে ততদিন দেশ কাঙ্খিত সাফল্য পাবে না। প্রয়োজন দক্ষ ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। ফলে এ খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। বাজেটের সফলতা নির্ভর করে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর। সেটি কতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে সেটি বিবেচ্য। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা শক্তিশালী করতে হবে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়তো সম্ভব নয় তবে যত কাছাকাছি বাস্তবায়ন করা যায় ততই বাজেটের সুফল সাধারণ জনগণ ভোগ করবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য বাজেট ২০২৪-২৫: বহুমুখী প্রত্যাশা এবং চ্যালেঞ্জ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর