Thursday 01 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্ধ হোক শিশুশ্রম

মো. আরিফুল ইসলাম আকাশ
১ মে ২০২৫ ১৬:২০ | আপডেট: ১ মে ২০২৫ ১৬:২১

‘শ্রমিক’ এক কথায় বলতে গেলে যিনি শ্রম দেন তিনিই শ্রমিক, তবে আইনের ভাষায় হওয়া উচিৎ- যিনি মজুরী বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দেন তিনিই শ্রমিক। কিন্তু বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালায় শ্রমিকের সংজ্ঞা বিষয়ে একটি বড় ধরণের বৈপরীত্য রয়েছে যেটিকে বৈষম্যও বলা যেতে পারে। এই বৈষম্য বা বৈপরীত্য তুলে ধরতে হলে আগে জানতে হবে বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালায় এ সম্বন্ধে কি বলা আছে। আসুন জেনে নেই। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকের সংজ্ঞা – শ্রমিক অর্থ শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি, তাহার চাকুরীর শর্তাবলী প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই থাকুক না কেন, যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে বা কোন ঠিকাদার (যে নামেই অভিহিত হউক না কেন) এর মাধ্যমে মজুরী বা অর্থের বিনিময়ে কোন দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরী, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানীগিরি কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন, কিন্তু প্রধানত প্রশাসনিক, তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন না।

বিজ্ঞাপন

শিশু শ্রম কী? বা শিশুশ্রম বলতে কী বুঝায়?

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের ভবিষ্যতের পথ হয়ে উঠছে দুর্গম। শিশুরা শ্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ায় সমাজে তাদের অবস্থান, অশিক্ষিত, দরিদ্র ও মাদকাসক্ত, বখাটে এমনকি নানান অপরাধী মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক তথ্যমতে, শিশুশ্রমের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এটি কোনোভাবেই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক বার্তা নয়। তাই একজন শিশুর জীবনে শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করা দেশ ও সমাজের জন্য জরুরি। কারণ একটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশকে অবহেলায় অযত্নে রেখে সে দেশের উন্নতি আশা করা আকাশ কুসুম কল্পনা।

বাংলাদেশ সরকার শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে নানাবিধ আইন প্রণয়ন করছে। বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী কিশোর শ্রমিকদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ থেকে ১৮ বছর। এছাড়াও আইনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকেই শ্রমে নিয়োগ করা যাবে না।

শ্রমজীবী শিশুদের বাবা মা কোনো মালিকের সাথে কোনো ধরনের চুক্তি করতে পারবেন না। এবং কোনো কিশোর শ্রমিককে যদি কাজে নিয়োগ করতে হয়, সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের কাছে মালিকের খরচে ফিটনেস সনদ সংগ্রহ করে তারপর তাকে কাজে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

এদের কাজের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা। আর সেই সময় হতে হবে সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর সাতটার বাহিরের সময়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আইনগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাগুজের দেয়ালে বন্ধী। বাস্তব চিত্র পুরোটাই মুদ্রার অন্য পিঠ। সরকারি একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৯ লক্ষ।এর মধ্যে শহরাঞ্চলের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ও গ্রামাঞ্চলে ৬৪ লক্ষ। এই জরিপে থেকে আরও জানা যায় আমাদের দেশের শিশুরা যে ধরনের কাজের সাথে জড়িত তার মধ্যে প্রায় ৪৫টি কাজই ঝুঁকিপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক শোষণ থেকে শিশুর অধিকার রক্ষা করবে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম অর্থাৎ স্বাস্থ্য অথবা শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর অথবা শিশুর ব্যাঘাত ঘটায় অথবা বিপদ আশঙ্কা করে, এমন কাজ যেন না হয়, তার ব্যবস্থা নেবে’।

এজন্য বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শিশু সনদের এই ধারা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পেশার তালিকা চূড়ান্ত করে নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি এই শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য বহু পূর্বেই সরকার সারাদেশে ৯৯ শতাংশের বেশি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ইটভাটা, গ্যারেজ, ওয়ার্ক শপ, হোটেল, দোকান, বিভিন্ন মিল কারখানায় দেখা যাবে বড়দের মতো শিশুরাও দিনরাত সব ধরনের স্বাভাবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত। এতে করে তাদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

শিশুশ্রম সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নষ্ট করে এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা দেয়। শিশু শ্রমের ফলে তারা অল্প মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হয়, যা দারিদ্র্য চিরস্থায়ী করে। অনেক সময় শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে হয়, যা তাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি শুধু শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করে না, বরং জাতির ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই শিশুদের সুরক্ষা, শিক্ষা এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শিশু শ্রম রোধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশটা আমাদের সবার। তাই দেশের সকল ভালোমন্দের ফলও ভোগ করতে হবে আমাদেরই। তাই আজকে আমরা শিশুশ্রমকে প্রশ্রয় দিলে ভবিষ্যতে নিরক্ষরতার বোঝা মাথায় করে বয়ে বেড়াতে হবে আমাদের। তাই নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার দায়িত্ব সরকারসহ আমাদের সবার।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ, সদস্য; বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা

সারাবাংলা/এএসজি

মুক্তমত মো. আরিফুল ইসলাম আকাশ শিশুশ্রম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর