বারেক সাহেব ও হাওয়া মে উড়তা লাল দোপাট্টা
১৪ আগস্ট ২০১৮ ১১:৩০
অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ||
ঢাকা শহরের খালি রাস্তা দিয়ে শা শা ছুটে চলেছে বারেক সাহেবের ডার্ক গ্রাস, ক্রিম কালারের প্রাডো। স্পীকারে জোড়ে বাজছে গান। বারেক সাহেব সাধারনত লো ভলিউমে স্লো গান শোনেন। তবে আজ ব্যাপারটা অন্যরকম, একেবারেই অন্যরকম। আজ তার গাড়িতে লাউড ভলিউমে বাজছে, ‘হাওয়া মে উড়তা যায়ে মেরা লাল দোপাট্টা…’। মনে খুশির বাঁধ ভেঙ্গেছে আজ বারেক সাহেবের। সরকার এবার ডিগবাজি খেলো বলে!
যা পারেনি বুড়োরা তা এবার এই ছোড়ারা করে দেখাবে। বারেক সাহেবের ইচ্ছা হচ্ছে বুড়ো-হাবরা নেতাদের গলায় লাল দোপাট্টা পড়িয়ে দিয়ে আসেন। পল্টনের অফিসে আর প্রেস ক্লাবে বসে শুধু কথার ফুলঝুড়ি- কাজের কাজ কিছুই না। সরকারতো পাত্তা দেয়ই না, কারো কানেই আদৌ কিছু ঢোকে কিনা সন্দেহ!
আজ এই ছোকড়ারা কি অনায়াসেই না সরকারকে নাড়াচ্ছে, ঘোড়াচ্ছে। তাও কি যে সে সরকার? এ তো সেই সরকার যার দাপটে বাঘে-মহিশে এক ঘাটে পানি খায়, বামে-ডানে থাকেনা কোন ভেদাভেদ আর তাকে ঠেকাতে গিয়ে বামাতি গিয়ে উঠে জামাতির কোলে।
বারেক সাহেবের অবশ্য একটু ভয় ভয়ও লাগে। যখনই তার নেতারা কোন বিষয়ে নাক গলিয়েছেন তার পরিণতি তিনি কখনোই ভাল হতে দেখেননি। পরিণতি ভাল হয়নি সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচনে। আর এই তো সেদিনও কোটা আন্দোলন শেষে তা থেকে পচা গন্ধ ছড়িয়েছে। আর যদি সাথে বামাতিরা জুটতে পারে তাহলেতো কথাই নেই। গণজাগরন মঞ্চের যখন এই করুণ পরিণতি তখন নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আবার কোন ছাড়?
বারেক সাহেব বিশ্বাস করতে চান না, কিন্তু এবার ইঙ্গিতগুলো খুব স্পষ্ট। নিউমার্কেট আর নীলক্ষেতে হিরিক পড়েছে স্কুল ড্রেস আর আইডি কার্ড বানানোর। বুড়োরা কার ইঙ্গিতে এত উৎসাহে ছোড়া সাজছে তা বুঝতে বাকি থাকেনা বারেক সাহেবের। ভাড়াটে জামাতিরা তার দলের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আন্দোলনের মোড় ঘোরাতে চাইছে। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি আর পত্র-পত্রিকায় এই বিষয়গুলো ঘুরে ফিরেই আসছে। ধরা পরছে শিবির জঙ্গি, সাথে চাপাতি। পোশাক পাল্টে স্কুল ছাত্র সাজতে দেখা যাচ্ছে বুড়োদের আর ফেসবুক লাইভে ভুয়া কথা বলে নাকে খত দিচ্ছেন অনেকেই।
বারেক সাহেবের ধারণা, যা হচ্ছে এতে আবারো কেচে যাবে এবারের আন্দোলন। দিব্য চোখে তিনি দেখতে পাচ্ছেন তা। ফেসবুকে ইদানিং ফটোশপ করা স্কুল ড্রেস পড়া চারজন বিরোধী নেতার একটা ছবি ভাইরাল হচ্ছে। বারেক সাহেবের মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ছবিটা তিনিও শেয়ার করেন। বুঝুক নেতারা, সাধারন মানুষ ঘাস খায় না!
হঠাৎ গাড়িটা কষে ব্রেক করায় চিন্তায় ছেদ পরে বারেক সাহেবের। শেষমেশ তার গাড়িকেও দাঁড় করিয়েছে পোলাপান। কিন্তু পোলাপান কই? এরাতো সব দাড়ি-গোফওয়ালা বুড়ো খোকা! সমানে তারা খিস্তি-খেউরী করছে তার ড্রাইভারের সাথে। কিছু কিছু তার কানেও ঢুকছে। বারেক সাহেবের ইচ্ছে হচ্ছে প্রাডোর সিটের তলায় ঢুকে যান। কিন্তু কি আর করা? ‘উপায় নাই গোলাম হোসেন’! ড্রাইভার ‘হারামজাদা’ সাথে লাইসেন্স আনেনি। বাধ্য হয়ে গাড়ি ফেলে হাঁটতে হবে তাকে। ভাগ্যিস অফিস খুব দূরে না। একটা উবার-টুবার পেলে মন্দ হতো না।
পুনশ্চ : বারেক সাহেবের সন্দেহই সত্যি প্রমানিত হয়েছে। অতি সন্ন্যাসিতে যথারীতি আবারো গাজন নষ্ট!
অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলামিস্ট।
[মত-দ্বিমতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব]