‘বাংলাদেশ তুমি ঘুমাও ক্যামনে?’
৮ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৩৩
এদেশে মানুষ কোথায়? এমন একটি প্রশ্ন করার সময় এসেছে। আবার সেই মৌলিক প্রশ্নটি প্রকাশ্যে করার জন্যে প্রাণদণ্ডও হতে পারে। কেন এই প্রশ্ন?
ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে অসুস্থ এবং অসহায় লাগছে। নোয়াখালীতে একের পর এক ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনা ঘটেই চলছে। প্রতিরোধ করতে পারছি না। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য বাগ্যার গ্রামে স্বামী সন্তানকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে (৩২) গণধর্ষণ করা হয়। কিন্তু সেটিই শেষ ঘটনা নয়, সম্প্রতি একের পর এক গণ ধর্ষণের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সারা দেশ। এমন পরিস্থিতিতে কী বলা যায়, দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে? করোনার এই কঠিন সময়েও নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই করোনা মহামারির কাছে সমর্পিত অসহায় মানুষ কিছুটা হলেও আত্মসন্ধানী হবে। মানুষ উদ্ধত ও অহংকারী আচরণ বাদ দিয়ে ভদ্র ও নম্র হবে, বিনীত হবে, অনুতপ্ত হবে, আর সবার প্রাণে আত্ম উপলব্ধিবোধ জাগ্রত হবে। কিন্তু হল না। গত কয়েক মাসে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব খবর বেরিয়েছে, নারীর প্রতি সংহিংসতা, লোভ-লালসা, কুবৃত্তি আর জঘন্যতম অপরাধ কমেনি, বরং বেড়েছে।
বেগমগঞ্জের একলাশপুরের যে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে তেমনটি আর কোথাও কখনও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। একজন ভাই, একজন পুরুষ হিসেবে এটা আমার লজ্জা, আমার ঘৃণা। ভয় হয়, অনেক ভয় লাগছে। কন্যা সন্তানের অভিভাবক আমি, ছোট বোন আছে আমার। বড় বোন আছে আমার। আমাদের শিশুরা বাসায় নিরাপদ না, কন্যারা নিরাপদ না, আমাদের বোনরা নিরাপদ না। না স্কুলে, না মাদ্রাসায়। কিংবা কর্মস্থলে। কোথায় নিরাপদ? আমরা নারী ক্ষমতায়নের কথা খুব জোর দিয়ে বলছি, কিন্তু নারীর প্রতি নিপীড়নের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, সেটির লাগাম টানার প্রস্তুতি কীভাবে হচ্ছে? এভাবে নারী ক্ষমতায়ন সম্ভব?
একলাশপুরের ঘটনায় আমি লজ্জিত, হতবিহবল। ভাঙাগড়ার নোয়াখালী, উপকূলীয় নোয়াখালী জেলা সপ্রতিভ সবসময়ে, তার সাহিত্য-সংস্কৃতি জুড়ে, এখানকার মানুষগুলো মেঘনার নদী ভাঙন দেখতে দেখতে সংগ্রামী মনোভাবের স্বত্তায়, আপনবোধে। সমুন্নত রাখে তার ভাববোধ, সংস্কৃতি আর কৃষ্টি। শিল্পের প্রাণময় বিকাশে এ অঞ্চলের মানুষের জুড়ি নেই। শান্ত এই আমরাই বিট্রিশবিরোধী আন্দোলন করেছি আবার ঐতিহ্যশালী নোয়াখালীর বাতাস ছিল মুক্ত, কখন এত দূষিত হয়ে গেল? এ দায় কার? গত ১২টা বছর ধরে যারা এলাকা শাসন করেছে, আর যাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে তাদের দায় নেই? অবশ্যই তাদের দায় নিতে হবে। শাস্তি তাদেরও দিতে হবে। কেননা যিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনি স্থানীয় মেম্বারকে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রতিকার পাননি। বরং চেপে রেখেছেন।
এটা শুধু নোয়াখালীর চিত্র নয়। সারাদেশের একটি মূর্তমান চিত্র। এই তো রাষ্ট্রের চেহারা। এই রাষ্ট্রের নাকি পাহারাদার আসলে কার পাহারাদার? সেখানকার সংসদ সদস্য এখনও সদর্থক বার্তা দেখাতে পারেননি। অভিযুক্তদের সাথে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি শোভা পাচ্ছে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এছাড়া চৌমুহনী পৌরসভার মেয়রের সাথে সুমন বাহিনীর সুমনের শুভেচ্ছা জানানোর ছবিও ভাইরাল হয়েছে। এর আগেও বেগমগঞ্জ এলাকায় নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, আমার সাংবাদিক সহযোদ্ধারা জানেন, সেখানকার জনপ্রতিনিধি-সংসদ সদস্য অনেকগুলো সংঘটিত নারী নিপীড়নের ঘটনাকে তেমন কোনো কিছু না বলে, ছেলেমানুষী কাজ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে যদি সেসব ঘটনায় কঠোর হতেন, তাহলে আজকে এই ঘটনার মুখোমুুখি হতে হত না।
সারাদেশ ইতোমধ্যে এই ঘটনার প্রতিবাদে ভেঙে পড়েছে। মনে বড় প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশ তুমি ঘুমাও ক্যামনে? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে আমরা। এমন বাংলাদশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজী রেখেছিলেন? এই দেশ প্যারাডকসে ভরা। শহরের তলায় অত্যাধুনিক অট্টালিকা। আবর্জনার মহোৎসব। দিবসে আলো, রজনীতেতে অন্ধকার। সৌভ্রাতৃত্বের জন্য বিশাল বিশাল কথা, অথচ বর্বরতা যেন অবসরের বিনোদন। সমস্ত কিছুর দাম বাড়ছে হুহু করে, একমাত্র মানুষের কমেছে।
এমন একটা ঘটনা ৩২ দিন পর মানুষ জেনেছে! অথচ ওই এলাকায় একাধিক সাংবাদিকের বাড়ি, সরকারের শীর্ষ আমলা, পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, শিক্ষক, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার বসবাস। ধরে নিলাম পুলিশ কিংবা আওয়ামী লীগ বিষয়টা চেপে গেছে বা চেপে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যরা কি করেছে। আর বীরজনতাই বা কি করলো?
কেউ বলছেন, ‘হোলা ইগুন বেয়াদ্দপ, কতা কৈ কি নিজের বিপদ বোলাই আনুম নি’। এমন তো না দেলোয়ার বাহিনী হঠাৎ করে গজিয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতারা এখন নিজেরা বাঁচার জন্য দেলোয়ার বাহিনীর কথা বলছেন।
আশ্চর্যের বিষয় হল, ৩২ দিনেও কীভাবে এমন একটি ঘটনা এলাকার বাইরে গেলো না। অভূতপূর্ব মানুষের সহ্যক্ষমতা। চেপে রাখার ক্ষমতা। একলাশপুর এলাকায় এর আগে অনেক ক্রাইম ঘটেছে। তার মধ্যে একটা পলাশ হত্যা। এর ঘটনার পেছনে দেলোয়ার বাহিনী রয়েছে। এ দেলোয়ার এতো শক্তিধর হলো কিভাবে? কাদের আশ্রয়ে-কাদের প্রশ্রয়ে? পুলিশ কি জানতো না এই দেলোয়ার বাহিনীর কর্মকান্ডের কথা? এখন তো আরও অনেক বাহিনীর কথা আমরা জানতে পারছি। তারা পুলিশ তথা প্রশাসনের সামনে দিয়ে এতোটা শক্তিশালী কীভাবে? গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই জনপদে রাতে বেলা গমগম পরিবেশ সৃষ্টি রয়েছে। ককটেল ফাটিয়ে গাড়ি আটকিয়ে, সিএনজি আটকিয়ে অর্থ লুট চলেছে। চাঁদাবাজি করেছে। এসব কি পুলিশ, জনপ্রতিনিধিদের অজানা ছিলো? এসব প্রশ্নের উত্তরও মেলাতে হবে। এমন তো না দেলোয়ার বাহিনী হঠাৎ করে গজিয়ে উঠেছে। বেগমগঞ্জে গত ৯ মাসে রাজনৈতিক দলের কর্মী, গৃহবধূ, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষসহ ১৩ জন খুন হয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বীকারোক্তিতে একাধিক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি দেলোয়ার বাহিনীর কথা জানতেন, সুমন বাহিনী, সম্রাট বাহিনীসহ আরো অনেক বাহিনীর কথা জানতেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি বা নেননি বলে আমরা ধরে নিতে পারি। অথবা ওই অঞ্চলে তার প্রভাব-বলয় বলতে কিছুই নেই। তার বক্তব্য অনুযায়ী এরা একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন। কোন সে রাজনৈতিক বলয়? এ প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্র সেখানে সহযোগী হিসেবে জড়িত। এদের মিছিলে এসব বাহিনী পেশিশক্তি হিসেবে সবসময় থেকেছে। প্রশ্ন হলো, এদেরকে কারা নিয়ন্ত্রণ করছে?
অপরাধের অভয়ারণ্য বেগমগঞ্জে প্রধান দুটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছে ৩৬ মামলার আসামি সুমন ওরফে খালাসি সুমন। অপর পক্ষের নেতৃত্বে ৩৮ মামলার আসামি সম্রাট বাহিনীর প্রধান সম্রাট। এছাড়া আমানউল্যাপুরে মন্নান বাহিনী, মুন্সি বাহিনী, বাবু বাহিনীও বেশ সক্রিয়। গত ৩ মার্চ আমানউল্যাপুরে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হোসেন। গোপালপুরে জিকু কামাল বাহিনী, বাঘ মিন্টু বাহিনী, মাসুম বাহিনী, পিচ্চি রাসেল বাহিনী, মুজিদ বাহিনী, হাছান বাহিনী, রকি বাহিনী, দুলাল বাহিনী, পাটোয়ারী বাহিনী, দেলোয়ার বাহিনী ও জনি বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জিরতলী ইউনিয়নে মঞ্জু বাহিনী, রাজগঞ্জ ইউনিয়নে সেন্টু বাহিনী ও ছয়ানী ইউনিয়নে রয়েছে বাবু বাহিনী। আলাইয়ারপুর ইউনিয়নে লোকমান বাহিনীর প্রধান লোকমান এর আগে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে আবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। একই ইউনিয়নে রয়েছে টিটু বাহিনী, রুবেল বাহিনী ও রহিম বাহিনী।
চৌমুহনী পৌর এলাকায় এ অঞ্চলের হাজীপুর, শরীফপুর, কাদিরপুর, রসুলপুর, কুতুবপুরে রয়েছে সুমন বাহিনী, সম্রাট বাহিনী ও সুজন বাহিনী। সুজন কাদিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সে গত বছর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে আছে। কাদিরপুরের লন্ডন মার্কেট এলাকায় রয়েছে শাকিল বাহিনী। কুতুবপুর, রসুলপুর, দুর্গাপুর ও সেতুভাঙ্গা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসী সম্রাটের ভাগিনা রায়হান।
নোয়াখালীর আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর একলাশপুর ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় এখানে মাদক ব্যবসার স্পটও বেশি এবং বাহিনীগুলোর আয়ও বেশি। দেলোয়ার বাহিনীর প্রতিপক্ষ কাটা রাসেল একলাশপুর বাজার, কেন্দুয়া ও গাবুয়া এলাকায় সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজি করে আসছে। তার রয়েছে অস্ত্রধারী বাহিনী। গত বছর মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব একলাশপুর গ্রামে মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রহিম রবিন নামের দুই যুবককে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে এ বাহিনী। গণমাধ্যমে প্রকাশ, গত বছরের ২৫ অক্টোবর একলাশপুরের ভিআইপি সড়ক এলাকায় শাহাদাত হোসেন পলাশ নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা।
দুই.
ইতিমধ্যে কয়েকজন আইনজীবী ঘোষণা দিয়েছেন তারা ধর্ষকের পক্ষে আইনী লড়াই করবেন না। আইনজীবী সমিতিও ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘোষণা দিয়েছে। সাধুবাদ জানাই তাদের এই পদক্ষেপে। অন্যান্য আইনজীবীদের প্রতিও আমাদের এ আহ্বান থাকবে, আপনার সোচ্চার থাকুন সকল ধর্ষণ ঘটনায়।
মনে করিয়ে দিতে বলতে চাই, দাঙ্গা-বিধ্বস্ত নোয়াখালী জেলায় শান্তি ও মৈত্রী স্থাপনার্থে পাদ-পরিক্রমাকালে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘নোয়াখালীর মাটিতেই ভারতের ভাগ্য নির্ধারিত হবে’। রয়্যাল ডিস্ট্রিকখ্যাত নোয়াখালীতে নারীর প্রতি এই সকল সহিংসতা প্রতিরোধের লড়াইটি শুরু করতে হবে আমাদের- আমাদের নোয়াখালী থেকে। এটা আমাদের আবেদন। দ্রুততম সময়ে ন্যায্য বিচার চাই, বিনা বিচারে হত্যা চাইনা। বিনা বিচারে হত্যা অপরাধ কমাতে পারেনি। বরং উসকে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমাদের বর্তমান যে আইন, সেই আইনটি সংস্কার প্রয়োজন। আর শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ, নারী নিপীড়নের মূল উৎপাটন করা সম্ভব নয়। তাদের যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এইসব জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা দায়িত্ব থেকে সরানো উচিত। ওরা আসলে প্রকৃত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ অবক্ষয় নেমেছে, তার জন্য এইসব বাহিনী সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা সেখানে শিক্ষার উন্নয়নের চাইতে রাজনৈতিক বলয় তৈরি করতে চায়। এ বলয় তৈরির ফলাফল হচ্ছে এইসব বাহিনী তৈরি হওয়া।
তিন.
যদি ভাবেন আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপি বা জামায়াত ক্ষমতায় এলে ধর্ষণ, নারী প্রতি নিপীড়ন থাকবে না, কিংবা যদি ভাবেন দেশে ইসলামী শাসন কায়েম হলে এইসব সমস্যার নিষ্পত্তি হবে তাহলে আপনি ভুল জানেন। অন্যসব বিষয়ে হালকা একটু নড়চড় হবে বটে, কিন্তু ধর্ষণ এমনই জারি থাকবে। কারণ সকল কুকুরের লেজই একই রকম বাঁকা। যতক্ষণ সরল পাইপে রাখা যায় ততক্ষণ সোজা থাকবে, পাইপ খুলে ফেললেই আবার বাঁকা।
নিরক্ষর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী, কিংবা মন্দিরের পুরোহিত থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত, রাজনৈতিক কর্মী থেকে জাতীয় নেতা পর্যন্ত সকলের মধ্যেই ধর্ষক লুকিয়ে আছে। তারা প্রকট হলেই আমরা তাদের দেখে ফেলি। ধর্ষণরোধে আইনের যথার্থ প্রয়োগের একটা কার্যকারিতা নিশ্চয়ই আছে বৈকি। কিন্তু এটাই উদ্দিষ্ট সমাধান নয়।
অনেকে বলে, ব্রোথেলকে ফ্রি করে দাও। তাতে ধর্ষণ কমবে। পুঁজিবাদী সমাজে ব্রোথেলের দরকার নিশ্চয়ই আছে। কারণ সামাজিক কারণে যেসব নারী ছিন্নমূল হয়ে গেছে আগের জীবনে ফিরতে পারছে না, তাও সামাজিক কারণেই তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্যে পেশা দরকার। ব্রোথেল মূলত বিকল্প যৌন চাহিদা মেটাতে পারে, ধর্ষণ রোধ করতে পারে না। যে-ধর্ষকামী সে ব্রোথেলে গেলেও ধর্ষণই করবে। ব্রোথেল চান আপনার ঘরের ধর্ষণ এড়াতে। চান যে ধর্ষক সে তার কাজ ব্রোথেলে গিয়ে করুক। এটা তো কোনো কথার মধ্যেই পড়ে না। সেক্সওয়ার্কার তিনিও একজন নারী, তাকে ধর্ষণও একই রকম অফেন্স।
ধর্ষণের কেবল একটি কারণ নয়। ধর্ষণের মনোদৈহিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় অজস্র কারণ যেমন কেউ ধর্ষণ করে পুরুষ-ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যে, কেউ ধর্ষণ করে দিনের পর দিন রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, অনাচার-নৈরাজ্য দেখে দেখে হতাশ আর দিশাহীনতার জায়গা থেকে মাথা খারাপ হয়ে, কেউ করে ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে, কখনো ধর্মীয় ও সামাজিক যৌন অবদম থেকে, কেউ করে নৌকায় বা ধানের শীষে ভোট না দিলে, কেউ করে ভূমি আগ্রাসনের জন্যে হুমকিস্বরূপ, কেউ খেয়ালের বশে, কেউ করে অন্যকে ফাসানোর জন্যে, কেউ মনোবিকারের কারণে, কেউ করে কৌতূহল থেকে, কেউ করে ফ্যান্টাসির জন্যে। এমন অনেক অজস্র কারণ ধর্ষণের পেছনে ফেউ-এর মতো লেগে থাকে নিয়ত।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে দ্রুত বিচার আইনে সাজা দিয়ে এর সামান্য সমাধান হলেও, সামগ্রিক সমাধান আসবে না। এই অবস্থায় এর সমাধান দুটো-
১. শৈশব থেকে পারিবারিক নার্সিং,
২. বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
প্রথমটা না হলেও। দ্বিতীয়টা নিশ্চিতভাবেই জন্তু থেকে মানুষ বানিয়ে ছেড়ে দেবে।
হাবীব ইমন: সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর