Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাসুল (সঃ)-এর উন্নত জীবনবিধান


৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৪৪

মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনের ছোটখাটো যে ব্যাপারগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে, তা-হলো তার জীবনাচারসমূহ। তার পরম পরিচ্ছন্নতাবোধ, গোসলের রীতি, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা, চুল-নখ কাটা, খাদ্যগ্রহণ বা শৌচকার্যের আদবকেতা এবং পরিমিতিবোধ তার সময়ের তুলনায় তো বটেই, এই যুগেও অত্যন্ত উঁচু মানের।

রাসুল (সা.) সম্পর্কে যে তথ্যগুলো জানা দরকার:

১. রাসুল (সা.)-এর প্রিয় রং ছিলো সবুজ।

২. তিনি মধু পছন্দ করতেন।

৩. মধুমিশ্রিত ঠাণ্ডা পানীয় তার প্রিয় ছিলো।

৪. তার কণ্ঠস্বর এতোই জোরালো ছিলো যে, বিদায় হজের ভাষণে তিনি লক্ষাধিক সাহাবির সামনে কোনো প্রকার সহযোগিতা ছাড়া জীবনের শেষ ভাষণ দেন।

৫. কারো কথার মাঝখানে তিনি কখনোই কথা বলতেন না। বরং বক্তার কথা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।

৬. ঘুমানোর সময় তিনি ডান কাত হয়ে ডান হাত গালের নিচে দিয়ে শুতেন।

৭. রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত মাজা বা মেসওয়াক করা ছিলো তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস।

আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, এই জীবনাচারগুলোর বিবরণ খুব স্পষ্ট এবং অবিসংবাদিত অবস্থায় পাওয়া যায়, এসবে কোন মিথোলোজিক্যাল রঙ চড়েনি। তার অভ্যাসগুলো চাইলে যে কেউ রপ্ত করে নিতে পারে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, তিনি পনেরশ বছর আগে ফল খাবার আগে ধুয়ে খেতে বলেছেন, যে ছুরি/বটি দিয়ে ফল কাটতে হবে, তাও ধুয়ে পরিষ্কার করতে বলেছেন। তিনি পাঁচবার দাঁত মেসওয়াক করতেন, প্রতিবার খেয়ে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করতেন। মুখের দুর্গন্ধ তার ভীষণ অপ্রিয় ছিল এবং তা থেকে সদাই মুক্ত থাকতেন। এই যুগেও খুব কম মানুষের মুখ দুর্গন্ধমুক্ত থাকে।

শৌচকার্যের পর খুব ভালো করে পরিষ্কার হতেন এবং এই ব্যাপারে তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে কড়া নির্দেশ দিতেন। ইসলামের সবচেয়ে কঠোর বিধিবিধানগুলোর কয়েকটা হলো এই শৌচকার্যের পর পরিচ্ছন্নতা অর্জন সংক্রান্ত। বিস্ময়কর এই যে, উন্মুক্ত শৌচকার্য আজ থেকে দেড় সহস্রাব্দ আগে তিনি চরমভাবে নিষিদ্ধ করে গেছেন, যা সভ্যতার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন গোসল তো বটেই, তিনি চুল দাড়ি গোঁফও সবসময় পরিমিত/পরিষ্কার রাখতেন এবং শরীরের অন্যান্য স্থানের লোমগুলোও নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেঁটে ফেলতেন। তার গোসলের সংজ্ঞা ছিল খুবই উন্নত, মুখ এবং নাকের ভেতরসহ প্রতিটা লোমকূপের গোড়ায় পানি সঞ্চালন অত্যাবশ্যক। তিনি খুব স্বল্পাহারী ছিলেন। তার খাবার সময় বসার নিয়মটি আমাকে হতবাক করে। ভঙ্গিটি খুবই ইউনিক এবং অকাট্য যৌক্তিকতায় ভরা। এমনভাবে বসতে হবে যেন বাম পা পাকস্থলীর ওপর একটা চাপ দিয়ে রাখে। চাপে পাকস্থলীর আকার ছোট হয়ে যাবে এবং কম খাবারেই উদর পূর্ণ বলে মনে হবে। তিনি পেট ভরার আগেই খাবার খাওয়া বন্ধ করতে বলেছেন।

শরীরে সুগন্ধ ব্যবহারে তার উন্নত রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি সদাই কাপড় পরিষ্কার রাখতেন এবং তা করতেন নিজ হাতেই। যেখানে সেখানে ময়লা নিক্ষেপ, উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি দূষণরোধে তার নিষেধাজ্ঞা শুনলে রীতিমত অবাক হতে হয়। তিনি সবসময় মৃদু স্বরে কথা বলতেন, সবাইকে সবার আগে সালাম জানাতেন, মুসাফাহ (হ্যান্ডশেক) করতেন। তিনি মুচকি হেসে কথা বলতেন, কথাবার্তায় কখনো কাউকে কষ্ট দিতেন না। তিনি তার নিজ গৃহে প্রবেশের আগে অনুমতি নিতেন। সব মানুষ তো বটেই, স্ত্রী এবং মেয়েদের সাথে তার আচরণের কথা পড়লে হতবাক হতে হয়। তিনি হাঁটতেন মেরুদণ্ড সোজা করে অথচ দৃষ্টি থাকত আনত। তিনি শরীর সুস্থ রাখতে শরীরচর্চা সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। তিনি কোন উদাস জিনিয়াস ছিলেন না, বরং ছিলেন সমাজ-সংসারের ব্যাপারে নিখুঁতভাবে দায়িত্বপরায়ণ।

সবরকমের অপচয়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদাই সরব। আমি আশ্চর্য হই যে তার এই সুন্দর অভ্যাসগুলোকে এখন চরম সুসভ্য এবং স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে পালনীয় ধরা হচ্ছে। ঘুমাবার সময়েও তার অনেক নির্দেশনা আছে, যেমন কখন কোন দিকে কাত হয়ে শুতে হবে, কতক্ষণ শুতে হবে বা দুপুরবেলার বিশ্রামরীতি।

বিজ্ঞাপন

দৈনন্দিন চালচলনের সবকিছুই এসেছে এই একটা মানুষের কাছ থেকেই। বিস্ময়কর এই যে, তার এসব চর্চার বিবরণগুলো অত্যন্ত প্রাচীন কিন্তু কোন অতিমানবিকতার ছাপ নেই, বরং একেবারেই সাদামাটা। আমার কাছে তার এই সাধারণত্বটাই সবচেয়ে অসাধারণ মনে হয়। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হতে পারে কিন্তু একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে সার্বিক বিবেচনায় তিনি এসব সাধারণ অভ্যাসের মধ্য দিয়েই একজন স্বাভাবিক অতিমানবে পরিণত হয়েছেন।

মুহাম্মদ(সঃ) আসলে অসাধারণ হয়েছেন সাধারণত্বের ভেতর দিয়ে। অন্যান্য কীর্তিমানদের সাথে এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য তার। এমন নিখুঁত সুসভ্য সুশৃঙ্খল জীবনাচার তৎকালে একেবারেই ছিল না, এখনও বিরল। সত্যই তার দৈনন্দিন জীবনাচার বর্তমান যুগেও সামগ্রিকভাবে মানুষের সভ্য আচরণকে সংজ্ঞায়িত করে। মুহাম্মদ (সঃ) আমার চোখে পৃথিবীর প্রথম পরিপূর্ণ সভ্য মানুষ। । আমরা ম্যানার্স এন্ড এটিকেট শিখি কিন্তু মুহাম্মদ (সঃ) এর শেখানো ম্যানার্স আয়ত্ত করতে পারি না। আফসোস এই যে, সুসভ্যতার মানদণ্ড আজ মুসলমানদের মাঝেই সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত। আসুন আমরা মুহাম্মদ (সঃ) এর শেখানো আচরণ চর্চা করি, সুন্নাতের উপর জীবন পরিচালিত করি।

লেখক: প্রভাষক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাউজান সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর