Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্ষণ নির্মূলে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ


২০ নভেম্বর ২০২০ ২০:১৫

ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। সারা বিশ্বেই ধর্ষণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। সারা পৃথিবীতে ধর্ষণের হার ঊর্ধ্বগতি হলেও সবসময় সেই হিসাব গণনায় কিংবা গবেষণায় আসে না পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে। বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর যাবত গণমাধ্যমের কল্যাণে এটি জনসম্মুখে আসছে। সরকার এটি কমানোর লক্ষ্যেও নিচ্ছে নানা উদ্যোগ। যদিও ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ২০২০-এর হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। জানা যায়, ইউরোপীয় অনেক দেশেই ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।

বিজ্ঞাপন

ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২.৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। দক্ষিণ আফ্রিকা মেডিকেল রিসার্চ কাউনসিল কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, জরিপ করা চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার বলে স্বীকার করেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে বোতসোয়ানা, যেখানে প্রতি এক লাখে ৯২.৯ জন ধর্ষণের শিকার হন। তালিকায় ৬ নম্বরে আছে সুইডেন, যেখানে এক লাখে ৬৩ জন ধর্ষণের শিকার হন। সুইডেনের মতো উন্নত দেশে অবাধ মেলামেশার দেশ হলেও এখানেও এই ভয়াবহ অবস্থা। ১১৯টি দেশের ওপর পরিচালিত এই জরিপে অস্ট্রেলিয়া ১২তম, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৪তম, বেলজিয়াম ১৩তম, ফ্রান্স ২৭তম, দক্ষিণ কোরিয়া ৩০তম এবং বাংলাদেশ ৪১তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় ১০৬তম দেশ জাপান এবং ১১৮তম দেশ হিসেবে রয়েছে মিশর।

বিজ্ঞাপন

এই জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৯.৮২ জন ধর্ষণের শিকার হন। অনেক দেশ আছে, যেখানে অনেক বেশি ধর্ষণ হলেও সে তথ্য অজানা থাকে। সৌদি আরবে ধর্ষণের সাক্ষী হিসেবে চার জন প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই এটা পাওয়া অসম্ভব। তাই পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যায় দেশটি। অনেকেই বলে থাকেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের হার অনেক বেশি। কিন্তু উপরের পরিসংখ্যান এটাকে ভুল প্রমাণ করে। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিবেচনায় বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি নেহায়েত কম নয়। প্রয়োজন শুধু আইনের সঠিক প্রয়োগ।

বাংলাদেশে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর সহিত প্রথমত: তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে; দ্বিতীয়ত: তাহার সম্মতি ব্যতীত; তৃতীয়ত: মৃত্যু বা জখমের ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক আদায়কৃত সম্মতিসহ; চতুর্থত: তাহার স্বামী নহেন জানিয়াও তিনি তাহার বিবাহিত স্ত্রী এরূপ বিশ্বাস স্থাপনপূর্বক সম্মতিসহ; পঞ্চমত: আঠার বৎসরের কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত যৌন সঙ্গম করেন তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।

অন্যদিকে আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের দিকে তাকাই, তাহলে দেখি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই ধরনের আইন প্রচলিত আছে। এগুলো হলো— অঙ্গরাজ্য আইন এবং ফেডারেল আইন। ফেডারেল আইনে মামলা হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে অঙ্গরাজ্য আইনে একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম শাস্তি। নেদারল্যান্ডে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে চার থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফ্রান্সে ধর্ষণের শাস্তি নির্ভর করে ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে। সেখানে ধর্ষকের সাজা ৩০ বছরের কারাদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড। নরওয়েতে ধর্ষকের সাজা ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির ক্ষতির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ৪ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড। রাশিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি কমপক্ষে ৩ বছরের কারাদণ্ড। ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা বাড়িয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত করা হতে পারে। ধর্ষণের সংজ্ঞা ও শাস্তি বিবেচনায় বাংলাদেশের মতো এত সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও শাস্তির বিশদ বিবরণ কম দেশেই আছে।

বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি কী
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে— এই ধারায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ধর্ষণের অপরাধ করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে, যদি না ধর্ষণের শিকার স্ত্রীলোক তার নিজ স্ত্রী হয় এবং সেই স্ত্রী ১২ বছরের কম বয়স্কা না হয়। আর যদি এমন হয় যে, ধর্ষণের শিকার নারী তার স্ত্রী, যার বয়স ১২ বছরের কম, তবে সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

সারাদেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার সংবাদে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছিল। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও নারী নির্যাতনবিরোধী রম্য গান এবং গণসংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত আন্দোলনে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবিও জোরালো হয়। গণমানুষের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল সরকার গত ১৩ অক্টোবর ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনী এনে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে জারি করে।

১৮ নভেম্বর ২০২০ ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০০০’। এতে বিদ্যমান আইনে থাকা ‘ধর্ষিতা’ শব্দটির বদলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। ধর্ষিতা শব্দটি লিঙ্গ বৈষম্যের পরিচায়ক বলে বিভিন্ন সময়মতো আসার প্রেক্ষাপটে বিলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ দিয়ে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। মূল আইনের ৯ (২) ধারাসহ কয়েক জায়গায় ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় বলা ছিল, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। বিলে মূল আইনের খসড়ায় ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

আইনের ৯(৪) (ক) উপধারায় ছিল— ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন। এই উপধারা সংশোধন করে পাস হওয়া বিলে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ এর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো যোগ করা হয়েছে। ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে অপরাধ আপসযোগ্য হবে। এছাড়া আগের আইনে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের রেফারেন্স ছিল। এখন সেখানে হবে ‘শিশু আইন- ২০১৩’।

২০০০ সালের আইনের ৩২ ধারায় বলা ছিল, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয় মেডিকেল পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোনো বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে। বিলে অপরাধের শিকার ব্যক্তির পাশাপাশি ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির’ মেডিকেল পরীক্ষা করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২(ক) শিরোনামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে বিলে। সেখানে বলা হয়, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ধারা ৩২ এর অধীন মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াও, উক্ত ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, ২০১৪ সালের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইনের বিধান অনুযায়ী তার ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। নতুন এই আইনের ফলে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার তালিকায় সপ্তম দেশ হিসেবে স্থান পেল বাংলাদেশ। আইনের এই সংশোধনীর কারণে বাংলাদেশে ধর্ষণের হার কমবে বলে আশা করা যায়।

সরকারের অধ্যাদেশ জারির যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী সমাবেশ ও র‍্যালি আয়োজন করে। এই আইন কার্যকর করার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব যাদের পালন করতে হবে, সেই পুলিশ বিভাগ এই সমাবেশগুলোর মাধ্যমে কঠোর বার্তা দিয়েছে দেশের জনগণকে। গত ১৭ অক্টোবর দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিং কর্মসূচি চালু করে সংস্থাটি এবং সারাদেশে ৬,৯১২টি সমাবেশ করে। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিলো সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে নারী নির্যাতন বা নিপীড়ন রোধে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা।

ধর্ষণ সম্পর্কে আমাদের সমাজে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে, যা অনেকাংশে এসব কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয়। এসব প্রচলিত ধারণার মধ্যে রয়েছে— নারীরা উগ্র পোশাক পরে, সময়ে অসময়ে দিনে রাতে একাকী চলাফেরা করে, পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে চাকরি করে ইত্যাদি। এসব ভাবনা সমাজ থেকে দূরীভূত করতে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নাই। সরকার শিশুদের নৈতিক শিক্ষা প্রদানের জন্য নানা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এই নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি প্রথমত আসতে হবে নিজ পরিবার ও সমাজ থেকে। এই নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে।

আমাদের দেশে সাধারণত ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে ধর্ষণ প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহে ধর্ষণের শিকার নারীকে ব্যবহার না করে অভিযুক্তকে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা প্রয়োজন। ধর্ষককেই প্রমাণ করতে হবে সে ধর্ষণ করেনি। অনেক সময় ভীত হয়ে অনেকেই সাক্ষ্য দিতে আসেন না, ফলে অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যান। এজন্য সাক্ষী সুরক্ষার বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় নিয়মিত আদালত স্থাপনের বিষয়টিও জরুরি।

বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে অবস্থিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ( ওসিসি) থেকে স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষা সামাজিক সেবা, আইনি সহায়তা, মানসিক কাউনসেলিং এবং আশ্রয়সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকারের ১০৯২১ টোল ফ্রি নম্বর রয়েছে, সেখানে যে কোনো সময় ফোন করে ভিকটিম, পরিবার ও সংশ্লিষ্ট সকলেই সহায়তা নিতে পারে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক নেটওয়ার্ক, জন সচেতনতা বৃদ্ধি, অধিকার বিষয়ক পরামর্শ, আইনি পরামর্শসহ সমাজে সচেতনতা আনয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এই টোল ফ্রি নম্বরের ব্যাপক প্রচারাভিযান প্রয়োজন।

একটি আশার কথা, এখন পত্রপত্রিকায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির ছবি প্রকাশিত হয় না। ধর্ষককেই জাতির সামনে তুলে ধরা হয়। গণমাধ্যমকর্মীরা হরহামেশাই ধর্ষকদের বাড়িতে যাচ্ছেন, লাইভ খবর সম্প্রচার করছেন। সামাজিক যোগাগোমমাধ্যমও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ফেসবুকের ব্যাপক প্রসার বাংলাদেশে। অবাধ তথ্য প্রবাহের ফলে বাংলাদেশের মানুষ খুব সহজেই এসব ঘটনা জানতে পারছেন এবং নিন্দার ঝড় তুলতে পারছেন। এটাও একটা ইতিবাচক দিক।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আন্দোলন সত্যিই ইতিবাচক। কিন্তু বর্তমানে দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, অপরাধীর কোনো দল কিংবা পরিচয় নেই। রাজনৈতিক রূপ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে। সেক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ৭৫তম জাতিসংঘ অধিবেশনে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় ২০৪১ সালের মধ্যে নারী-পুরুষ কর্মক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরেন। নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ এবং প্রশাসনিক ও সরকার কাঠামো নারী অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এমনকি নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করেছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকারের এসব উদ্যোগ প্রশংসনীয় কিন্তু এটিকে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আনতে হবে।

আমরা সকলেই জানি, একসময় এসিড সন্ত্রাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। দেশের প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টা ও অংশগ্রহণ এবং সরকারের জিরো টলারেনস নীতি এই অপরাধকে প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছে। সকলের সম্মিলিত ও স্বার্থহীন সামাজিক আন্দোলন একসময় সফলতার মুখ দেখবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে যেভাবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেছে, তা আমাদের সুস্থ সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। এটি অব্যাহত থাকলে, নিজেদের, নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একটি অনন্য রূপে দেখতে পাবো আমরাই। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা এই ধর্ষণ নামক ব্যাধিকে নির্মূল করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষক 

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর