স্বপ্ন লালনের দিবস ১৭ মে
১৭ মে ২০২২ ১৭:০৩
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করে বাংলার সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দেন। এরপরই পাকিস্তানিরা তাকে তার ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটল, তখনও পাকিস্তানিদের চক্রান্তে তিনি ছিলেন পাকিস্তানেরই কারাগারে। একদিকে যখন দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে যুদ্ধের ময়দানে জীবন বাজি রেখে লড়াই করছে বাঙালি জাতি, তখন পাকিস্তানের কারাগারে অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর পরোয়ানা শোনানো হচ্ছিল তাকে। কিন্তু পাকিস্তানিরা জানত না, কোনো ভয়-ভীতি দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো সিংহ হৃদয়ের মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না। যুদ্ধ জয়ের আনন্দের মধ্যেও তাই তখনো বাঙালির মনে পিতার অনুপস্থিতির বেদনা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের ২৫ দিন পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন পা রাখলেন দেশের মাটিতে, তখনই যেন পূর্ণতা পেল সেই বিজয়।
বঙ্গবন্ধু তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বলেছিলেন, ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা’। সত্যিই তো, তার আগমনের মধ্য দিয়েই তো আলোর পথে যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশ। লাখো কণ্ঠের ডাকে আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু সেদিন রেসকোর্সের ভাষণে বলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’
কথা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বিশ্বাস করতেন ভালোবাসায়, তার বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার ওপর। সেই ভালোবাসা নিয়েই তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে ওনার নেতৃত্বগুণ ছিল সবসময়েই অনুকরণীয়। বাংলাদেশকে ঘিরে উনার সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার ফলাফলই হলো আমাদের এই স্বাধীন দেশ। তিনি বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতেন এবং সৎ ও অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করতেন। তিনি দেশ গড়ার কাজেও সকলকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে তিনি তরুণ নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেন দেশ গড়ার কাজে। আমার বাবা এইচ এন আশিকুর রহমানকে স্বাধীন ঢাকা মিউনিসিপাল করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। তখন আমার বাবার বয়স ছিল মাত্র ৩১। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তিনি চৌকস, প্রতিভাবান তরুণদের বেছে নেন দেশ গড়ার কাজে।
আমার বাবার ভাষ্য অনুযায়ী ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যদি না ফিরে আসতেন তবে বাংলাদেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও এই দেশকে সুসংগঠিত করা অসম্ভব একটা বিষয় হতো। একটা স্বাধীন দেশে ভারতের মতন সাহায্যকারী একটি দেশের হাজার হাজার সৈনিককে ফেরত পাঠিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা উনার নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব হতো না। বাংলাদেশে তখন অনেক মুক্তিযোদ্ধার হাতেই ছিল অস্ত্র। সেগুলো জমা নিয়ে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা উনার মতন দূরদর্শী নেতৃত্ব ছাড়া অসম্ভব হয়ে যেত। উনি এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
একদিকে বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তরের জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন পর্দার আড়ালে সক্রিয় হচ্ছিল দেশবিরোধী অপশক্তি। যার সাহস, নেতৃত্বগুণ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসায় মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি বর্বররা, যার গায়ে এতটুকু আঁচড় দেওয়ার সাহস করেনি তারা সেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এ দেশেরই এক শ্রেণির বিশ্বাসঘাতক ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার সেই চক্রান্তে সপরিবারে প্রাণ হারাতে হয়েছিল জাতির জনককে। হত্যাকারীরা রেহাই দেয়নি শিশু রাসেলকে যে মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল। দেশের বাইরে থাকায় সেদিনের সেই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। কিন্তু আসলে কি ওনারা বেঁচেছিলেন সেদিন যারা হারিয়ে ফেলেছেন আপন স্বজনদের?
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ জার্মানির বনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ফোনে যখন জানলেন বাংলাদেশে একটি মিলিটারি ক্যু হয়েছে তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। ভাবতেই কান্না আসে। বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত তখন দুই বোনকে তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। দূতাবাস থেকেও কোনো সাহায্য ওনাদের করা হয়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগাদা থেকে হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তখন বঙ্গবন্ধু কন্যাদের জার্মানি নিয়ে আসেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যারা তখন পরিবারের সদস্যদের কথা ভেবে কীভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন তা ভেবে উঠলেও আমার চোখে অশ্রুজল বেয়ে পড়ে। নিজের পরিবারের একজন সদস্যও বেঁচে আছেন এমন সংবাদ শোনার জন্য ওনারা আকুল হয়ে থাকতেন। ঘটনাবহুল দিনগুলোতে ওনারা একসময় চলে আসেন ভারতে। সেখানেই শুরু হয় ওনাদের নির্বাসিত জীবন।
ইতিহাসে ১৯৮০ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরে আসেন এবং ওনার সাহায্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যান লন্ডনে তার বোনের কাছে। ১৬ আগস্ট, ১৯৮০ লন্ডনের ইয়র্ক হলে জনসম্মুখে প্রথম ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যে সময়ে তিনি জনসম্মুখে এই ভাষণ দেন সে সময়ে লন্ডনের ব্রিকলেনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা ছুরি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল হাসিনাকে হত্যা করার জন্য। মূলত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরেও তারা চেষ্টা করে যায় দেশের বাইরে থাকা দুই বোনকে হত্যা করার জন্য।
১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
এরপরেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে’র দিনটি ছিল রোববার। বৃষ্টিস্নাত আকাশ সেদিন কান্না করছিল। হয়তবা প্রকৃতিও সেদিন দুঃখবোধে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলো না। যে বঙ্গবন্ধু জীবনের একটা বিশাল সময় বাংলাদেশকে স্বাধীন করা জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন, যে দেশের মানুষকে তিনি সবচাইতে বেশি ভালোবাসতেন সেই বাংলাদেশেই তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন সপরিবারে। যে ভালোবাসার স্থান থেকেই বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘My strength is I love my people, my weakness is I love them too much’, সেই বাংলাদেশ থেকে আসতে পারেননি তার কন্যারা। ঘাতকের কাছ থেকে বাচার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়েছে। ভাবা যায় সেই মুহূর্তগুলো যখন আপনি আপনার নিজের দেশে যেতে পারবেন না স্বজনদের শেষবারের মতন দেখার জন্য? সেই মুহূর্তগুলোই প্রতিনিয়ত বুকে কষ্ট নিয়ে অনুভব করে গেছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। আর সেই কষ্ট অনুভব করেই হয়তোবা প্রকৃতিও সেদিন নিজেকে ক্ষমা করতে না পেরে কান্না করছিলো।
প্রায় পনের লাখ জনতার উপস্থিতিতে দেশের মাটিতে নেমেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শেখ হাসিনা। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন আমার সবাই ছিল। আমার মা-বাবা, আমার ভাইয়েরা, ছোট্ট রাসেল সবাই বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছিল। আজকে আমি যখন ফিরে এসেছি, হাজার হাজার মানুষ আমাকে দেখতে এসেছেন, স্বাগত জানাতে এসেছেন, কিন্তু আমার সেই মানুষগুলো আর নেই। তারা চিরতরে চলে গেছেন।’
একবার ভাবুনতো সেই কথাগুলোর মর্মার্থ? কতটা কষ্ট নিয়ে এই কথাগুলো তিনি বলেছেন তা যখন ভাবি তখন খুব কষ্ট হয়। বিমানবন্দর থেকেই বঙ্গবন্ধু কন্যা সরাসরি চলে গিয়েছিলেন তাদের বাড়ি স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ এ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পেয়াদারা তাকে সে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে শেখ হাসিনা সেই বাড়িতে না ঢুকতে পারেন। স্বজন-হারা মানুষটা সেদিন বুকফাটা আর্তনাদে ৩২ নম্বরের সামনের রাস্তাতে বসেই সবার জন্য দোয়া করেছিলেন, আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছিলেন।
আমার মা রেহানা আশিকুর রহমান আমাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতি ফিরে আসে সেদিন যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসলে যেমন বাংলাদেশকে সুসংহত করা যেমন অসম্ভব ছিল ঠিক একইভাবে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে না আসলে গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, আওয়ামী লীগকে সুসংহত করা এবং বাংলাদেশে সুশৃঙ্খল রাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব ছিল। একজন কন্যা, একজন বোন, ছোট্ট শেখ রাসেলের বুবু হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যার যে কষ্ট তা বোঝার ক্ষমতা এই বাংলাদেশের কারো নেই। তিনি এই কষ্ট নিয়ে তাও ভাবেন সেই দেশের কথা যে দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেন উনার বাবা। যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৭ মে দেশে ফিরে না আসতেন তখন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা, আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় যে হতাশা বিরাজ করছিলো তা দূর করার স্বপ্নও কেউ দেখতো না। সব চাইতে বড় কথা মানুষের ইচ্ছে, মানুষের স্বপ্ন, মানুষের রক্ত এই তিনের সমন্বয়ে যে বাংলাদেশ তার পরিচয় হারিয়ে যেতো তিনি ফিরে না এলে। তিনি ফিরে আসাতেই দিক ফিরে পায় বাংলাদেশ।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারায় থাকা আজকের বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধপরবর্তী সময়ের কথা সংযুক্ত করা যেতে পারে। যেখানে উন্নয়নই ছিল মূল লক্ষ্য। যার দিক হারায় জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। যে সময় বাংলাদেশ ধাবিত হচ্ছিল মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদের দিকে। আশির দশকে সিনিয়র সাংবাদিক ফজলে লোহানীর সঞ্চালনায় বিটিভিতে একটা অনুষ্ঠান হতো যার নাম ছিল ‘যদি কিছু মনে না করেন’। এই অনুষ্ঠানেই দেখিয়েছিল জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশাতে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে সুদূর সিরিয়া, জর্ডানে গিয়ে সাবেক কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা এবং মৌলবাদীরা সেখানের মিলিশিয়া বাহিনীর অংশ হয়ে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে বা যুদ্ধবিমান নিয়ে যুদ্ধ করেছিল। শুধু তাই না কর্নেল ফারুক এবং রশিদ লিবিয়ান সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছিল মার্সেনারি (ভাড়াটে সৈনিক) প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেদিন দেশে ফিরে না আসতেন তাহলে আজকে এই দেশ হয়ে যেতো মার্সেনারির দেশ, মিলিশিয়া বাহিনীর দেশ এবং জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের দেশ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরে আসার পরেও থেমে থাকে নি ষড়যন্ত্রকারীরা। ১৯ বার হত্যা চেষ্টা করা হয় তার ওপরে। কিন্তু বাংলা মায়ের মাটি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের দোয়াতে তিনি রক্ষা পান। তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন ষড়যন্ত্রকারীদের সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে। তিনি যদি ১৭ মে ফিরে না আসতেন তবে বাংলাদেশ আজ থাকতো অন্ধকার যুগে যেখানে পৃথিবীর ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকাতে থাকতো আমাদের দেশের নাম। মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের গর্বের দিনগুলি হয়তো হারিয়ে যেতো সেই বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেই।
কিন্তু তা হয় নি। বুকে স্বজন হারানোর কষ্ট চাপা দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ এগিয়ে চলেছেন। তিনি সেই বাংলাদেশকে ঘিরে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারী, পাকিস্তানপন্থীরা দেশের অগ্রযাত্রাকে সাময়িকভাবে রুখে দিতে সক্ষম হলেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতোই বলতে হয়, ‘বাঙালিকে ‘দাবায়ে রাখা’ যায় না’। আর তাই হয়তোবা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তূপের দিকে যাওয়ার দিক থেকে ফিনিক্স পাখির মতো দেশকে পুনর্জন্ম দিতে জেগে ওঠেন তারই সুযোগ্য কন্যা, দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে এখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ঈর্ষণীয় একটি দেশ, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে তিনিই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের পথে।
বঙ্গবন্ধুকন্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের বুকে এক উন্নত দেশের নাম হবে বাংলাদেশ, যেখানে ধনি-দরিদ্রের পার্থক্য থাকবে না, সকলের জন্য খোলা থাকবে সব সম্ভাবনার সব দুয়ার। সেই বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধু সেই ‘সোনার বাংলা’, যার স্বপ্ন তিনি নিজে দেখেছিলেন, দেখিয়েছিলেন জাতিকে। তারই সুযোগ্য কন্যা জাতিকে বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই স্বপ্নের পথযাত্রায়।
আমরা এই প্রজন্মের যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি, যারা চাক্ষুষ দেখিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব দেওয়া সেই দিনগুলি তারা আজ কৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি ১৭ মে দেশে ফিরে এসেছিলেন আর সেই দিনটি থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের জন্যেই কাজ করে যাচ্ছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথে। স্বাধীন একটি দেশ পাওয়ার যুদ্ধে নেতৃত্বদানের জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু কাছে চিরঋণী। একই সঙ্গে ঋণী তার কাছে যিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন এবং যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করা একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। তিনি হলেন আমাদের গর্বের স্থান, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
পরিশেষে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসাকে আমি দেখি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরিপূর্ণতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে এবং ১৯৮১ সালের ১৭ মে দিনটিকে আমি দেখি স্বাধীনতার স্বপ্নকে লালন ও বাস্তবায়নের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে।
লেখক: রাজনীতিবিদ
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি