Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নীরবে দেশ সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সুলতান মাহমুদ শরীফ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:১৭

১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস, সে সময়ে আমি দেশ থেকে লন্ডনে চলে আসি। শেখ রেহানার বয়স তখন মাত্র ৮ বছর, সুতরাং তাকে দেখে থাকলেও খুব ছোটবেলায় দেখেছি। দীর্ঘ বিরতির পরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকায় ফিরে এসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার কনিষ্ঠ বোন শেখ রেহানার সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়। এটা হয়তো ২৪-২৫শে ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তার স্নেহের পরশ পাওয়ার সৌভাগ্য যাদের হয়েছিল তাদের দীর্ঘ তালিকায় কেন জানিনা স্থান পেয়েছিলাম।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা ও তার স্বামী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা ও আমার বন্ধু ড. ওয়াজেদ মিয়ার সুবাদে আমাকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রায় সবাই চিনতেন। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবি বিদেশ থেকে পাঠানোর ব্যাপারে আমাদের অংশগ্রহণ এবং প্রচেষ্টাও পরিবারের সকলের জানা ছিল। তাই হয়ত সদ্য কারামুক্ত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা আমাকে আপনজন হিসেবে সেইসময় গ্রহণ করতে অনাগ্রহী ছিলেন না। সেই থেকেই শেখ রেহানাকে দেখা ও তার মমতার আশ্রয় আজ পর্যন্ত আমাদের পরিবারের সকলেই নাানাভাবে কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ রাখি। শুরুতেই এই কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার এই পরিণত বয়সেও আমার পরিবার পরিজন সকলে তাদের দুই বোনের স্নেহ পরশে বেড়ে উঠেছি। এ সপ্তাহে যখন প্রিয় শেখ রেহানার জন্মদিন সেসময়ই ব্রিটেনে বিশ্ববাসীর প্রিয় একজন মানুষ, এদেশের রানীর জীবনাবসান হয়েছে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী হিসেবে এদেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন। পরসেবায় তার এই দীর্ঘকাল তিনি নির্মোহভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন তার স্বামীকে সাথে নিয়ে। মুহূর্তের জন্যও নিজের কোন ইচ্ছা, আকাঙ্খা চরিতার্থ করেন নাই। এই দীর্ঘসময় আমরা সকলে জাতি ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে আমাদের রানীর স্নেহপরশ ও সেবাযত্নে জীবনযাপন করেছি।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজন এবং নিকটাত্মীয়দের হারিয়ে বাংলার জনগণ অভিভাবকহীন,আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর মোশতাক-জিয়ার অত্যাচারী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জেল-জুলুম, হত্যা নির্যাতনের শিকার হতে থাকে তারা। ভাগ্যক্রমে সেই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা আজকের বাংলাদেশের জনগণের নয়নমনি, তাদের ত্রাতা ও জীবনরক্ষার একনিষ্ঠ সেবক জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা প্রবাস থেকে বাংলার জনগণের পাশে এসে দাঁড়ান। স্বাধীনতার কিছুকাল পরই হানাদারমুক্ত বাংলাদেশে আমরা যে স্বৈরাচার পরিবেষ্ঠিত পাকিস্তানী অনুচরদের রাষ্ট্রক্ষমতায় পেয়েছিলাম এই দুই বোনকে সম্বল করেই তাদেরকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এজন্য যে আত্মসংযম, ত্যাগ, ধৈর্য্য ও কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব দরকার তা বাংলার জনগণ শেখ হাসিনা তথা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের নির্বাসন জীবন থেকে শেখ রেহানা দেশটির সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর সহায়তায় তার প্রয়াত মায়ের নিকটাত্মীয় মোমিন উদ্দীন খোকা ভাইয়ের কাছে লন্ডনে চলে আসেন। এরপর এই দীর্ঘকাল প্রবাস জীবনে তিনি নিজের জীবনধারনের জন্য একটি সম্মানজনক চাকরিতে নিয়োজিত হয়েছিলেন। দীর্ঘকাল পরে সেখান থেকে এখন পরিণত বয়সে অবসরগ্রহণ করেছেন। কৃচ্ছতাসাধনের মাধ্যমে সংসার-স্বামী-সন্তান সকলকে দেখভাল করে একটি ফুলটাইম চাকরি করেও তিনি দলীয় কর্মীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিলেন। তার নির্দেশ উপদেশ মেনে ও তার সাহচর্যে থেকে বঙ্গবন্ধুর কর্মীরা প্রবাসে দিশেহারা জীবন থেকে ফিরে এসেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীর সংগ্রামী জীবনকে গ্রহণ করেছিলেন। শেখ রেহানার এই অক্লান্ত পরিশ্রমের সাংগঠনিক সক্ষমতার একপর্যায়ে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা বোনকে দেখতে লন্ডনে আসার সুযোগ পান। শেখ হাসিনার লন্ডনে আসার ফলে ভারতসহ বহির্বিশ্বের কর্মীরা একজন যোগ্য নেত্রীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং দূরালাপনির মাধ্যমে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর সুযোগ পান। কিন্তু এই সমস্ত কাজের মধ্যে যে কায়িক পরিশ্রম ও সকলকে দেখভাল করার পরিশ্রম সদ্য প্রথম সন্তানের জন্মদাতা মাতা শেখ রেহানা নিজ কাঁধে গ্রহণ করেন।

প্রবাসে শেখ রেহানার আশ্রয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমরা বৃটেনের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে, ঘুরে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি বিরাট জনসভা করার সুযোগ পাই। যেখানে প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য বিশ্ববাসী ও বাংলাদেশের জনগনের কাছে দাবি উত্থাপিত করা হয়। এর ফলেই জীবিত প্রত্যক্ষ খুনীদের শাস্তি বিধান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের দলীয় কনফারেন্সে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে গিলেও শেখ রেহানা নিজের সন্তানের সাথে সাথে বোনের দুই সন্তানের সকল দায়িত্ব নিজের ওপর নেন এবং বোনকে বাংলার জনগণের সেবার জন্য বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিবের আদলে কাজ করার সকল সহযোগিতা দিতে থাকেন। এরপর থেকেই শেখ রেহানা বোনের দেশসেবার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। কোন পদ-পদবী, বেতন-ভাতা কোনরকমের সুযোগ সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করেন নাই। বৃটেনের রানীর কথা এই লেখায় উল্লেখ করেছিলাম এই জন্য যে, এই দুই মহিয়সী নারীকে অর্থাৎ রানী এলিজাবেথ ও শেখ রেহানাকে জাগতিক কোন লোভ লালসা, সম্মান-মর্যাদা সামান্যতমভাবেও আকর্ষণ করতে পারে নাই। বাংলাদেশের মতো একটি গরীব ও স্বল্প আয়ের দেশ যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘চাটার দল’ দেশটাকে আজও খাবলে খাওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে জাগতিক সম্মান-মর্যাদা, বিলাস, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি এসবকে দূরে রেখে নির্মোহভাবে জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকা কেবলমাত্র ব্যতিক্রমী ও দৃঢ়চেতা মানুষের পক্ষেই সম্ভব। শেখ রেহানা এই অভিধায় আজ দেশবাসী ও বিশ্ব বাঙালির কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যার স্থানে আসীন আছেন। আমি তার শতায়ু কামনা করি। দেশবাসীর জন্য তার দোয়া প্রার্থনা করি। কায়মানোবাক্যে আশা করি তিনি সুস্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের ও জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা, জয় শেখ রেহানা ।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও সভাপতি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

নীরবে দেশ সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মত-দ্বিমত সুলতান মাহমুদ শরীফ

বিজ্ঞাপন

মেগা নিলাম শেষে কোন দল কেমন হলো?
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:১১

আরো

সম্পর্কিত খবর