ঢাবি শিক্ষা প্রশাসনে ইনস্টিটিউটসমূহের প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি
৫ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৩
কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে শিক্ষা প্রশাসনের মাধ্যমে। আর শিক্ষা প্রশাসন বিদ্যমান ও নতুন প্রণীত আইন-কানুন অনুসরণে ও নির্বাহী আদেশে অনুমোদিত সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষকগণ শিক্ষা দান ও শিক্ষার্থীগণ শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। শিক্ষা প্রশাসন সর্বনিম্ন ধাপের প্রাতিষ্ঠানিক একক একাডেমিক কমিটি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সিনেট পর্যন্ত বিস্তৃত। একাডেমিক কমিটি থেকে শুরু করে সিনেট পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। এই প্রশাসনিক ধাপগুলোর অধিকাংশই বিধিবদ্ধ প্রশাসনিক একক। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে, যেমন- ডীনস কমিটি ও ভর্তি কমিটি ইত্যাদি। শিক্ষা কার্যক্রমকে স্থিত রাখতে ও গতিশীল করতে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বশীল শিক্ষা প্রশাসন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শিক্ষা প্রশাসনে ইনস্টিটিউটগুলোর প্রতিনিধিত্ব নেই। সে বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শিক্ষা প্রশাসন গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বশীল নয়। এ পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ইনস্টিটউটগুলোর পরিচিতি তুলে ধরে, শিক্ষা প্রশাসনে ইনস্টিটিউটসমূহের প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি তুলে ধরবো। অত:পর, তা প্রতিনিধিত্বশীল করতে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
উল্লেখ্য যে, সুনির্দিষ্ট সুদূরপ্রসারী জাতীয় কোনও লক্ষ্য পূরণে সহায়ক অধ্যয়ন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও সর্বোপরি জ্ঞানচর্চার পাদপীঠ হিসাবে ইনস্টিটিউট সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। এই ইনস্টিটিউট স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবেও পরিচালিত হতে পারে, যেমন-Bangladesh Institute of Marine Technology ও Bangladesh Institute of Development Studies; আবার কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যেমন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ Institute of Bangladesh Studies। ইনস্টিটিউটের গুরুত্ব নির্ভর করে জাতীয় লক্ষ্য পূরণে নির্দিষ্ট কোনও ইনস্টিটিউট কতোটুকু সফল তার উপরে। দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ Institute of Bangladesh Studies এবং স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান Bangladesh Institute of Development Studies গবেষণা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউট হিসাবে মূল্যায়িত হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত একটি বেসরকারি গবেষণামূলক বিদ্যাপীঠ হলো ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি), যা পৃথিবীর সব থেকে মর্যাদাপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভে করেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইনস্টিটিউটসমূহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের বিদ্যাপীঠ হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ ধরণের ইনস্টিটিউটের মধ্যে অন্যতম হলো- ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)। এই আইআইটিগুলো মানাঙ্কে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে এবং ভারত ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে এগুলোর সুখ্যাতি ছড়িয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে ১৩টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেগুলো হলো-শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্ট্যাটাসিকাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সামাজিক কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, শক্তি ইনস্টিটিউট, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট এবং ভলাননারিবিলি স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট। এসব ইনস্টিটিউটের মধ্যে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ব্যতীত সবগুলো বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয়েছে।
ইনস্টিটিউট থেকে অনুষদ বা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো এ ধারাটি দেশের শিক্ষাজগতে প্রচলিত রয়েছে। এই ধারণাটিকে পুঁজি করে বেশ কয়েকটি ইনস্টিটিউট অনুষদে রূপান্তরের ধারায় রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিদ্যমান চারুকলা অনুষদ এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট হিসাবে পরিচালিত হতো। চারুকলা অনুষদ তারও আগে ছিলো একটি কলেজ। কিন্তু সাম্প্রতিককালে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চারুকলা অনুষদে রূপান্তর করা হয়। ইনস্টিটিউট থেকে অনুষদ রূপান্তরের এই নজিরকে ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ বেশ কয়েকটি ইনস্টিটিউট এখন অনুষদে রূপান্তরে প্রয়াসী হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের চেয়ে অনুষদ ভালো এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কয়েকটি কারণে। তার অন্যতম হলো- ইনস্টিটিউট, অনুষদ ও বিভাগের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণা, ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি, বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন ধাপে ইনস্টিটিউটসমূহের প্রতিনিধিত্বের অপ্রতুল সুযোগ। সর্বশেষ কারণটিই অর্থ্যাৎ শিক্ষা প্রশাসনে ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিত্বের অভাবই অন্যান্য তিনটি কারণকে জিইয়ে রেখেছে। কাজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ইনস্টিটিউটসমূহে পরিচালিত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে স্থিত রাখতে ও গতিশীল করতে এবং উল্লেখিত নেতিবাচক কারণসমূহ দূরীভূত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশাসনে ইনস্টিটিউটসমূহের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেজন্য সিনট, সিণ্ডিকেট, ডীন কমিটি, সমাবর্তন কমিটি এবং ভর্তি কমিটি ইত্যাদি কমিটিসমূহে ইনস্টিটিউটসমূহ থেকে নির্বাচিত অথবা মনোনীত সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শিক্ষা প্রশাসন গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বশীল হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং ইনস্টিটিউটসমূহ তার লক্ষ্য অর্জনের পথ খুঁজে পাবে।
লেখক: পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ভূতপূর্ব অতিথি শিক্ষক, টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়, ভূতপূর্ব গবেষণা ফেলো, জাপান রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অধ্যাপক ড. এ.বি.এম.রেজাউল করিম ফকির ঢাবি শিক্ষা প্রশাসনে ইনস্টিটিউটসমূহের প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি মত-দ্বিমত