Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নূর হোসেন দিবসে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা

প্রভাষ আমিন
১০ নভেম্বর ২০২২ ১১:৩১

১৯৮৭ সালের উত্তাল নভেম্বরে আমি কুমিল্লায় ছিলাম। ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দিতে আমারও ঢাকা আসার কথা ছিল। জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায় আসতে পারিনি। তবে সহযোদ্ধাদের বিদায় দিতে আগের রাতে কুমিল্লা রেল স্টেশনে গিয়েছিলাম। সেদিন ঢাকা আসাটাও এক যুদ্ধ ছিল। পুরো স্টেশন ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। অবস্থা দেখে আমরা সবাই স্টেশনের আগে পিছে রেললাইনের পাশে অন্ধকারে ঘাঁপটি মেরে লুকিয়ে ছিলাম। যখনই ট্রেন ছাড়ার হুইসেল বাজে, তখনই সবাই অসহায় পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে ট্রেনে চড়ে বসে। তাদের নিরাপদে বিদায় করে ফিরি টমছম ব্রিজের নিউ হোস্টেলে। পরদিন মানে ১০ নভেম্বর আমরা কুমিল্লায় কর্মসূচি পালন করেছি। আর ঢাকার খবর রেখেছি।

বিজ্ঞাপন

অনেক পরে জানলাম নূর হোসেনের কথা। বুকে ‘স্বৈরাচার নীপাত যাক’, পীঠে ‘গনতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে জীবন্ত পোস্টার হয়ে, পুলিশের সহজ টার্গেট হয়ে মাঠে নেমেছিল যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন। দলের প্রধান শেখ হাসিনা তাকে সাবধান থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু কারও শঙ্কায় পাত্তা না দিয়ে মাঠে নেমে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন নূর হোসেন। আর পরিণত হয়েছিলেন পুলিশের সহজ টার্গেটে।

৮৭ তে না হলেও নূর হোসেনদের দেখানো পথ ধরে ১৯৯০ সালে নিপাত যায় স্বৈরাচার, মুক্তি পায় গণতন্ত্র। কিন্তু ৩৫ বছর পরে এসে আজ নিজের মনেই নিজের প্রশ্ন- সত্যিই কি মুক্তি পেয়েছে গণতন্ত্র?

গণআন্দোলনের মুখে পতনের বছর সাতেকের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতির মূলধারায় মিশে যায় এরশাদের জাতীয় পার্টি। মৃত্যুর আগে নিজের গা থেকে স্বৈরাচারের কলঙ্ক মুছে ফেলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছিল এরশাদের। আর প্রশ্রয় পেয়েই এরশাদ ১০ নভেম্বরকে পালন করে গেছেন ‘গণতন্ত্র দিবস’ হিসেবে।

নূর হোসেনের বুকে-পীঠের দুটি স্লোগানই ভুল বানানে লেখা। আমরা কী তাহলে ভুল আন্দোলনে অপচয় করেছি আমাদের উজ্জ্বল যৌবন? যতবার প্রশ্ন করি, ততবারই জবাব পাই- না। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আমাদের যৌবনকে মহিমান্বিত করেছে।

রাজনীতিবিদদের আপসের চোরাবালিতে হয়তো হারাতে বসেছে আমাদের মহৎ অর্জন। কিন্তু তাতে অর্জনের মাহাত্ম্য ম্লান হয় না। খেটে খাওয়া যুবক নূর হোসেনের কাছে বানানটা মুখ্য ছিল না, মুখ্য ছিল গণতন্ত্রের মুক্তি।

এখনো গণতন্ত্রের আকাঙক্ষা, ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম, নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে অনাস্থা, নির্বাচন নিয়ে সংশয়- আমাদের বেদনার্ত করে। নূর হোসেন দিবসে ভোটাধিকারের জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের তৃষ্ণা আরও বাড়ে। আমরা চাই উন্নয়নের যে ধারা, তা আরও বেগবান হোক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।

বিজ্ঞাপন

লেখক: জেষ্ঠ্য সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

নূর হোসেন দিবসে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা প্রভাষ আমিন মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর