ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর সাথে বসবাস
২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:১৪
সাধারণত আগে দেখা যেত অক্টোবর এলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই কমে যেত। কিন্তু এ বছর সেটা তো কমেইনি। বরং নভেম্বরে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। ডিসেম্বরেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। ফলে সতর্কতা জারি রাখতে হবে। সাবধান হতে হবে সকলকে। কারণ ডেঙ্গু এখন আর ঢাকাতে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্য শহরগুলোতেও। ফলে সাবধানতার বিকল্প তেমন কি আর আছে বলুন?
ঠিক কি কারণে ডিসেম্বরেও এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তার সঠিক কারণ পরিষ্কার নয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে হয়ত ডেঙ্গু মশার ধরণে পরিবর্তন এসেছে। এর ফলেই হয়ত ডেঙ্গু আক্রমন এখন অতীতের আক্রমণকালীন সময় পার করে আরো অধিক সময় ধরে বিস্তৃত হচ্ছে। এটা খারাপ খবর নিঃসন্দেহে।
২০০০ সালে প্রথম ঢাকাতে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়। তারপর কেটে গেছে ২২ বছর। এটা ফি বছর আগস্ট -সেপ্টেম্বরে কমা-বাড়ার ভেতর দিয়ে গেলেও দেখা যেতো অক্টোবর এলে কমতে শুরু করতো। নভেম্বর কিম্বা ডিসেম্বরে তা প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে আসতো।
করোনার ২ বছর ডেঙ্গু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিলো। কিন্তু এ বছর করানোর প্রকোপ কমলেও বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রমন। আমার পরিচিত অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। যেটা আগে এতটা ছিলো না। দেখা যেতো ঘরেই চিকিৎসা নিয়ে অধিকাংশ আক্রান্ত মানুষই ভালো হয়ে যেতেন। এবার মনে হচ্ছে সে অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। ডেঙ্গুর সম্ভাব্য ধরণ পরিবর্তন এবং এই ডিসেম্বর মাসে এসেও আক্রান্ত এবং হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়াটা সঙ্গতকারণে উদ্বেগজনকই বটে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাই একদিকে যেমন বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া দরকার মশা নিধনে; তেমনিভাবে সকলেকে সতর্কও থাকতে হবে। কেমন সে সতর্কতা? এটা খুব কঠিন কিছু নয়। সবাই হয়ত তা জেনেও গেছেন। তবুও বলছি। প্রথমতঃ মশা যেন বাসাবাড়িতে জন্ম নিতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে শোয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
আগে মনে করা হতো ভোর বেলা এবং সন্ধ্যার দিকে ডেঙ্গু মশা বেশি বেশি কামড়াতো! এখন সেটাও পরিবর্তন হয়েছে। যে কোন সময়ই এরা কামড়াতে পারে। ফলে যখনই শুতে যাবেন তখনই মশারি টানাতে হবে। তাছাড়া বাচ্চাদেরকে বিকেল হলেই ফুল হাতা শার্ট-প্যান্ট পরাতে হবে। শরীরের খোলা জায়গায় মশা যাতে বসতে না পারে সেজন্য এন্টিমসকুইটো জেল, লোশানও লাগানো যেতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক মশা মারার উপায় বাদ দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগনকে সচেতন করতে হবে নিরন্তরভাবে। তৃতীয়তঃ বছরব্যাপী এডিস মশার ধরণে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা (আসলেও তা ব্যবহৃত ওষুধ কতটা কার্যকরীভাবে নিধন হচ্ছে) তা মনিটরিং এবং ইভালুয়েশন করতে হবে। সে অনুসারে ব্যবস্থা নিলে আশাকরি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা পুরোপুরি না হলেও স্বস্তিদায়ক একটা সফলতা অন্তত লাভ করতে পারব। সেটা হলেও ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ বা আতংক যাই বলি না কেন তা নিঃসন্দেহে কমবে।
ডেঙ্গুসহ সকল সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বা নির্মুলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: চিকিৎসক ও শিক্ষক, এনাম মেডিকেল কলেজ
সারাবাংলা/এজেডএস