Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ন্যায্যমূল্য এবং নিরাপদ খাদ্য পাওয়া ভোক্তার অধিকার

অলোক আচার্য
১৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:২০

বাজার ব্যবস্থার প্রধান দুটি দিক হলো ক্রেতা ও বিক্রেতা। যদিও যিনি ক্রেতা তিনি ভোক্তা নাও হতে পারেন তবে ধরা হয় ভোগের উদ্দেশ্যেই তিনি ক্রয় করেন। অর্থাৎ তিনিই ভোক্তা। একজন ভোক্তা হিসেবে ক্রেতার যে অধিকারগুলো আছে বলে জানা দরকার তা আমাদের দেশে খুব কমই জানে। সেজন্যই চোখের সামনে তাকে ঠকতে দেখলেও অনেক সময় কিছুই না বলে তা মেনে নেয়। এর ফলে একদিকে যেমন অসাধু ব্যবসায়ী লাভবান হয় তেমনি বাজার ব্যবস্থাও প্রভাবিত হয়। এই যেমন বাজারে সয়াবিন,পাম অয়েলের দাম বেধে দিয়েছে সরকার। কোথাও কোথাও বেশি নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। দাম বেশি নিলে অভিযোগের সুযোগ রয়েছে। ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নিলে অভিযোগ করা যায়। কিন্তু একজন ভোক্তার তা জানতে হবে এবং প্রয়োজন হলে করতেও হবে। ১৫ই মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বক্তৃতা দেন। নিরাপত্তার অধিকার,তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার,পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন যা পরবর্তী ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরো বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরো আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করা হয়। কেনেডির ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৫ মার্চকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পালন করা হয়। এই হলো ভোক্তা অধিকার দিবসের বৈশ্বিক ইতিহাস। তাহলে দেখা যায় একজন ভোক্তা হিসেবে আপনি কতগুলো অধিকার রাখেন। অথচ এসবের তেমন কিছুই মানুষ জানে না। অর্থাৎ মানুষ তার অধিকার সন্মন্ধে সচেতন নয়। আমাদের দেশেও জাতীয়ভাবেও ভোক্তা অধিকার দিবস রয়েছে। এটি পালিত হয় ৬ এপ্রিল।

বিজ্ঞাপন

দেশের ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে নবম জাতীয় সংসদে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রনয়ন করা হয়। ২০১০ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন ভোক্তা এবং তার অধিকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে সচেতনতা খুব বেশি দেখা যায় না। ক্রেতা এবং ভোক্তার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। ক্রেতা যখন নিজে ভোগের উদ্দেশ্য কোনো দ্রব্য ক্রয় করেন তখন তিনি ভোক্তা। এবং একজন ভোক্তা হিসেবে আমাদের সবার সঠিক ও নিরাপদ পণ্য এবং সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ভোক্তার ভোগ্যপণ্য নিরাপদ না হলে তা মানব শরীরের জন্য হুমকি হয়। ভোগ্য পণ্যটি সঠিক ওজনের হবে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে না এবং বস্তুর গুণাগুণ পণ্যের বর্ণনার সাথে মিল থাকবে। কিন্তু আজকাল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ থাকে। ওজনে কম দেওয়া, মানহীন পণ্য বিক্রি করা, ভেজাল পণ্য বিক্রি করা,মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করাসহ আরও অভিযোগ। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে ক্রেতার সাথে তর্ক বিতর্কও হয়। তবে আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে অসচেতন। সেই অধিকারের বিষয়ে আমরা খুব কমই সচেতন। আমরা কেউ কেউ হয়তো এর প্রতিবাদ করি। তবে অধিকাংশই নিশ্চুপ থাকি। আজকাল এই বিষয়টি বেশি চোখে পরছে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে। অর্ডার দেওয়ার পণ্যের বদলে নিন্মমানে পণ্য ক্রেতার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মাঝে এর প্রতিকার পেলেও বেশিরভাগ সময়ই ক্রেতা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একজন ভোক্তা হিসেবে আমি সঠিক এবং ন্যায্য দামে পণ্য ভোগ করার অধিকার থাকলেও এবং প্রতারিত হলে প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে- এটা আইনগত অধিকার।

বিজ্ঞাপন

একজন ক্রেতার সাথে ভোক্তার সম্পর্ক হবে আন্তরিক এবং বিশ্বস্ততাপূর্ণ। অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে ভোক্তা যে পণ্যটি কিনবে তা যেন কিনে যেন সে না প্রতারিত হয়। যদি এভাবে সম্পর্ক এগিয়ে যায় তাহলে উভয়ের ভেতর হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তবে ভোক্তা হিসেবে অধিকারগুলো জানা থাকা আবশ্যক। জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি। এগুলো হলো, মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকার, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, পছন্দের অধিকার, জানার অধিকার, অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার, সুস্থ পরিবেশের অধিকার। সারা বিশ্বেই ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে দিবসটি গুরত্ব সহকারে পালিত হয়। আজকাল বিভিন্ন সময় অসাধু ব্যবসায়ির চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতাকে ঠকানো হচ্ছে। ওজনে কম, নিন্মমানের পণ্য দেওয়া, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য দেওয়া বা মূল্য অনুযায়ী সেবা না দেওয়া ইত্যাদি নানাভাবে প্রতারিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। অথচ এটা অনেকেই জানে বা জানলেও তা করছে না। প্রতারণার কথা প্রায়ই শোনা যায়। নিরাপদ পণ্য পাওয়া আমাদের অধিকার। ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়িতে আজ যেন ভেজাল পণ্যই আমরা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শিখে নিয়েছি। অভ্যাস করেছি এই প্রতারণার সাথে। নামী দামী ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আমরা ক্রেতারা সেটা না বুঝেই সেই খারাপ পণ্য বাজার থেকে বিশ্বাস নিয়ে কিনছি। তাতে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের মানব শরীরের।

অধিকার একটি বিস্তৃত শব্দ। এখানে অধিকার যার বা যাদের জন্য প্রযোজ্য তাদের জানা এবং প্রত্যেকের সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে সেই অধিকারগুলো কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাস্তবায়ন হবে না। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম অনিরাপদ পণ্য শরীরে নিয়ে বড় হচ্ছে। এটা কেবল খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রেই ঘটছে তা নয়। নকল কসমেটিকস, নকল ওষুধ সব আছে বাজারে। সেসব দেদার বিক্রিও হচ্ছে। বিক্রেতারা লাভ তুলছেন পকেটে! ক্রেতা, ভোক্তা বঞ্চিত হচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার থেকে। এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা এসব বিক্রি করে দেদারছে পকেট ভরছেন। বিপরীতে ঠকছেন ভোক্তা। তার সেই পণ্যটি কিনে যে সেবা পাওয়ার কথা সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর প্রতিকারে ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে। তাকে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আর সে কারণেই ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও চলছে। ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা যাচাই পূর্বক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। সেবার ক্ষেত্রে আমাদের তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে ঝামেলাবিহীনভাবে। ভোক্তা আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। আর সেই প্রয়োগের জন্য ভোক্তা সচেতনতা খুব প্রয়োজন। কারণ ভোক্তা সচেতন না হলে তাদের প্রাপ্য সেবা না দিয়েও পার পেয়ে যাবে সেবা দাতা। ভেজাল পণ্য বিক্রি করেও কোনো সমাধান হবে না। মাঝখান থেকে ঠকবে শুধু ভোক্তা। ভোক্তা অধিকার উন্নত বিশে বহুদূর এগিয়েছে। উন্নত বিশ্বে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কঠোর অবস্থান রয়েছে। আমি, আপনি আমাদের সন্তান সবাই একজন ভোক্তা। প্রত্যেকের নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন হওয়ার অধিকার রয়েছে। কেউ সেবার নামে প্রতারণার আশ্রয় নিলে অভিযোগ করার আইনগত অধিকার আমাদের রয়েছে। আমরা যদি প্রতিবাদ না করি তাহলে ভোক্তা অধিকার বিষয়টি থেকে যাবে অন্তরালে। একটি দিবস আমাদের সাময়িকভাবে সেই দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে। আমাদের উচিত সেই দিবসের গুরুত্ব বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। এর ফলে ভোক্তারা পণ্য ক্রয়ে প্রতারিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। একজন বিক্রেতার বা উৎপাদকের অধিকার রয়েছে উৎপাদিত পণ্য থেকে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ লাভ করা। বিপরীতে একজন ভোক্তার অধিকার রয়েছে তার পরিশোধিত মূল্যের বিনিময়ে নির্ধারিত পণ্য পাওয়া। আমরা যদি প্রাপ্য অধিকারের বিষয়ে সরব না হই অসাধুরা প্রতারণা চালিয়েই যাবেন।

লেখক: কলামিষ্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য ন্যায্যমূল্য এবং নিরাপদ খাদ্য পাওয়া ভোক্তার অধিকার মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

সাগরে লঘুচাপ, কমছে তাপমাত্রা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩

ঢামেকে অভিযানে ২১ দালাল আটক
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

আরো

সম্পর্কিত খবর