এসডিজি বাস্তবায়ন চাইলে পর্যটনকে বিকশিত করতেই হবে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১১
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়, জন্ম হয় নতুন লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত সম্পদ, এ সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, এ সম্পদ টিকিয়ে রাখতে এর বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়ও রয়েছে অনেক। এ দেশে রয়েছে বহুমাত্রিক সম্ভাবনা, এর মধ্যে অন্যতম পর্যটন শিল্প।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। প্রচীনকাল থেকে মানুষ বিনোদন ও প্রকৃতির সৌন্দর্য পিয়াস মেটানোর জন্য রূপ সুগন্ধে ভরা নৈসর্গিক প্রকৃতিতে অবগাহন করছে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভ্রমণপিপাসা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় প্রায় ৭৮ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে ২৭ লাখ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এই শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে অথচ এখনো কাঙ্খিত লক্ষ্য অনুযায়ী পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করতে পারেনি। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫, তাইওয়ানের ৬৫, হংকংয়ের ৫৫, ফিলিপাইনের ৫০ এবং থাইল্যান্ডের ৩০ শতাংশ পর্যটনের অবদান। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন অবদান রাখে ৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব জিডিপিতে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ অবদান। করোনার প্রবনতা কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌছালে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৩ সাল নাগাদ পর্যটনশিল্প থেকে প্রতিবছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকেরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটনশিল্পের অবদান। পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পর্যটনশিল্পের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) গোড়াপত্তন হয়। ১৯৯২ সালে প্রণিত জাতীয় পর্যটন নীতিমালায় পর্যটনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সে নীতিমালা হালনাগাদ করে ২০১০ সালে আরও যুগোপযোগী করা হয়। নীতিমালার পঞ্চম অধ্যায়ে এর বাস্তবায়নে গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পর্যটন আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে,‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য উম্নত পর্যটন সেবা প্রদান এবং পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্নিষ্ট সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশে নতুন ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং সময়ে সময়ে বিদ্যমান আইনসমূহ হালনাগাদকরণ।’ এরপর সাত বছর পার হলেও পর্যটন নীতি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপটি উপেক্ষিতই থেকেছে।
কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারণে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশে প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধিত হয়নি। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস পর্যটন শিল্পকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে বিধায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা। এমনকি ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে খাতসংশ্লিষ্ট মানুষদের আয়ের ওপর এবং চাকরি হারিয়েছে অনেক লোক। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পর্যটন শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন উপখাতের ব্যবসায় জড়িত পর্যটন অংশীজনদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও, পর্যটন শিল্পের ক্ষতি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের উপায় নির্ধারণের জন্য ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন, করোনাকালীন পর্যটন শিল্প পুনরায় চালুকরণের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশিকা প্রস্তুত ও বিতরণ, অনুসরণীয় নির্দেশিকার উপর পর্যটন শিল্পের অংশীজনদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্যুরিজম রিকোভারি প্ল্যান প্রস্তুতকরণ এসব কিছুই মনে হয় কাগজে কলমে।
পর্যটন শিল্পের বিকাশে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি নির্দেশনা রয়েছে। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি আশা করি পর্যটন শিল্প জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে ভূমিকা রাখবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিত্য চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীজুড়ে গড়ে উঠেছে হাজারও পর্যটন কেন্দ্র। বর্তমানে বিশ্বে পর্যটন এক বৃহৎ অর্থনৈতিক খাত হিসাবে বিবেচিত। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব-২০২১ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এখন মাছে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, উদ্বৃত্তও বটে। এ অর্জন জাতির জন্য গৌরবের।
সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, মৎস্য উৎপাদন ও দেশের পর্যটন খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এক্ষেত্রে পাথরঘাটার উপকূলীয় অঞ্চলও পিছিয়ে নেই। জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে যে ১৭টি লক্ষ্যের কথা বলেছে, তার মধ্যে ৮, ১২ ও ১৪ নম্বর সরাসরি পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ১৪টিতেও কোনো না কোনোভাবে পর্যটনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন দিবসে আমার লেখায় পাথরঘাটা ও সুন্দরবন নিয়ে একটি ভিন্ন প্রস্তাব ছিলো, তা হলো সুন্দরবন ঘিরে ক্যাবল কার চালু সময়ের দাবি। ক্যাবল কার চালু করা গেলে পর্যটনশিল্পে নতুনমাত্রা যোগ হবে। এতে করে দেশি-বিদেশি সৌন্দর্যপিয়াসী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে সুন্দরবন। পাথরঘাটা থেকে সুন্দরবন খুব কাছে হওয়ায় পাথরঘাটা-বিহঙ্গদ্বীপ হয়ে সুন্দরবন—নতুন পর্যটন জোন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্যটন খাত আরও গতিশীল হবে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুন্দরবন যেতে খুলনা হয়ে বাগেরহাট একমাত্র পথ দিয়ে যেতে হচ্ছে। পাথরঘাটা থেকে বিহঙ্গদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনের পুর্বাঞ্চলের সঙ্গে নতুন সংযোগ তৈরি হলে পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এতে পর্যটকদের খরচও কমবে ও যাতায়াতেও সহজতা আসবে।
দেশের সর্বদক্ষিণে বরগুনা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। বিশ্বঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ঘেষা বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদী বেষ্টিত বরগুনা। বিষখালী ও বলেশ্বর নদে খোলা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউবন। দক্ষিণের খোলা বাতাস ঝাউবন স্পর্শ করে যাচ্ছে পরম আবেশে। খোলা বাতাসের ছোঁয়ায় প্রেমিকার উড়ন্ত চুলের মতো দুলছে ঝাউগাছগুলো। জন্ম থেকেই সমুদ্রের খোলা বাতাস গায়ে মেখে ঝাউগাছগুলো এখন অনেক বড় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ আর ঝাউগাছ এ যেন দৃষ্টিনন্দন এক সৈকত! সমুদ্রের মৃদু ঢেউ, বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ। শুধু তাই নয় এ জেলায় রয়েছে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, সোনাকাটা ইকোপার্ক, হরিণঘাটা, মোহনা পর্যটন কেন্দ্র, বিবিচিনি শাহী মসজিদ, বুকাবুনিয়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, তালতলী ঊপজেলার রাখাইন পল্লী, বেতাগি উপজেলার খ্রিস্টান পল্লী, কাউমিয়া জমিদার বাড়ি, সিডর স্মৃতিস্তম্ভ, বিহঙ্গ দ্বীপ, নীলিমা পয়েন্ট, সুরঞ্জনা, কালমেঘা পর্যটন কেন্দ্র, জোৎস্না উৎসব, ইলিশ উৎসব, এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে মুজিব অঙ্গন, ইলিশ চত্বর, বিউটি অব বরগুনা, টাউন হল সংলগ্ন অগ্নিঝরা একাত্তর,সার্কিট হাউজ সংলগ্ন ইলিশ ফোয়ারা কেন্দ্রিক উন্মুক্ত ময়দান, এছাড়া রয়েছে পাথরঘাটায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বিষখালী নদীর সাদের ইলিশ। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে উপমহাদেশে একমাত্র জ্যোৎস্না উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর এ জেলায়। একদিকে সীমাহীন সাগর; আরেক দিকে দীর্ঘ ঝাউবন, তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সব মিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার– শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতেই জোৎস্না উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
এতো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেমন জানি আমরা এখনো পর্যটন খাতে পিছিয়ে রয়েছি। এর কারণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আগে কারণ খুঁজে বের করা,আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা এবং ইচ্ছা, মনোবল শক্তিতে রুপান্তর করা। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির এ বিষয় কঠোর নির্দেশনা থাকতেও কেমন জানি এখনো আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পর্যটকের উন্নত সেবার জন্য দক্ষ ও মার্জিত জনবলের অভাব, উন্নত ও দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকরী ব্যবস্থার অভাব, ইলেকট্রনিক্স-প্রিন্ট মিডিয়া বাংলাদেশের পর্যটন অঞ্চলগুলোর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন না করা, প্রচার প্রয়োজন মত না করা, পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন না করা, বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগের অপর্যাপ্ততা, দক্ষ গাইড এর অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন ব্যবস্থা, এছাড়া রয়েছে সামাজিক অনেক বাঁধা। অথচ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাঁচ শতাংশ দখল করে আছে পর্যটন শিল্প। এই শিল্প আমাদের দেশের মানুষ ও ভ্রমণ করতে দশবার চিন্তা করে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্যই। দেশে একটু বিশৃঙ্খলা দেখলেই তো পর্যটক তো দূরের কথা অন্য দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলও পাঠাতে সে দেশ ভয় পায়। এই ভয়, সংশয় দূর করার জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালাতেই হবে। কিন্তু বরগুনায় এতো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোন প্রকল্প এ খাতে দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেমন সদিচ্ছা থাকতে হবে তেমনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও উদ্যোগ এবং ইচ্ছা থাকতে হবে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী এবং বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলাকে ঘিরে বিশেষ পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। ‘পায়রা বন্দরনগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ-পর্যটনভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ণ’ নামে এই প্রকল্পটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। বরগুনার স্থানগুলোকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোনার চরের ২০ হাজার ২৬ হেক্টর বিস্তৃত বনভূমিসহ ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতজুড়ে গড়ে তোলা হবে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র। এজন্য ‘প্রিপারেশন অব পায়রা-কুয়াকাটা রিজিওনাল প্ল্যান’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। মূলত কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার সমন্বয়ে পর্যটন জোন স্থাপন করা হবে। এর লক্ষ্যে চলতি সময় থেকে শুরু করে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত চলবে সার্ভের কাজ। সরকার থেকে এতো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরেও বাস্তবে কতটুকু হচ্ছে এটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এ জন্য শুধু সরকারই নয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগি হতে হবে। সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদেরও মহা পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারের উদ্যোগে কোন ত্রুটি থাকলে জনগণের এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উল্লিখিত পর্যটন প্রসার প্রয়োজন। অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে সমবায় পর্যটন, কমিউনিটি বেইজড পর্যটন আরও সম্প্রসারিত হবে। এ ছাড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা, একতা, সাম্য বৃদ্ধি পাবে যা বর্তমানে চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহযোগিতা করবে এবং বাস্তবায়িত হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এভাবেই নবদিগন্তে ভোরের সূর্যের প্রজ্বলিত শিখার মতো আলোকিত হবে অমিত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প। এছাড়াও আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো প্রচারণা চালাতে হবে। বিশ্বের যতগুলো দেশে বাংলাদেশ বিমানসহ আমাদের দেশের প্রাইভেট বিমানগুলো যাতায়াত করে সে সকল দেশগুলোতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ প্যাকেজ কর্মসূচি গ্রহণ করে কার্যকরী ব্যবস্থাও পর্যটন শিল্প বিকাশে অনেক অগ্রগতি হবে। পর্যটন শিল্প বিকাশে সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ, পর্যটন কর্পোরেশনকে অধিকতর কার্যকরীও দক্ষ প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর করা, বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে চাহিদা অনুসারে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করণ, প্রয়োজনে ফরেন জোন এলাকা গড়ে তোলা। স্থানীয় পর্যায় উদ্যোক্তাদের উদ্ভুদ্ধ করণ, প্রশিক্ষণ, স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানসহ পর্যটন শিল্পকে আরও প্রসারিত করতে নতুন নুতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় রাখা, অবকাশ যাপনের জন্য হোটেল ও মোটেলগুলোতে প্যাকেজ কর্মসূচি রাখা, হোটেলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থাও গাইডের ব্যবস্থা রাখা, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক-অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, ট্রেন স্টেশন, বাস স্টেশন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর স্থির চিত্রের প্রয়োজনীয় দৃশ্য স্থির প্রদর্শনী রাখা ইত্যাদি।
দেশটি আমাদের, এ দেশ সকলের। এ দেশে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে তেমনি দেশের পর্যটন শিল্পকে আমাদেরই টিকিয়ে রাখতে হবে এর বিকাশ ও বহুমাত্রিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে বাংলাদেশটিকে বিশ্বের কাছে একটি সুন্দর দেশ হিসেবে পরিচিত করি, একটি পর্যটন দেশ হিসেবে টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করি।
লেখক: সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
এসডিজি বাস্তবায়ন চাইলে পর্যটনকে বিকশিত করতেই হবে মত-দ্বিমত শফিকুল ইসলাম খোকন