গণতন্ত্রে নির্বাচনই একমাত্র পন্থা
৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:২২
গণতন্ত্র ও নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রকে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনই একমাত্র পন্থা। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং জ্বালাও-পোড়াও করে গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। গণতন্ত্র মূলত জনগণের সরকার। জনগণই গণতন্ত্রের প্রাণ এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আর জণগণ এই ক্ষমতা কেবল নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমেই প্রয়োগ করে। তাই গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন এবং সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রকৃতভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
উন্নয়ন ও জণগণের ভাগ্য বদলে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ শক্তি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তা অব্যাহত রাখতে তিনি বদ্ধ পরিকর। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে জণগণের সমর্থন ও নির্বাচন ছাড়া কারো পক্ষেই সরকারের ক্ষমতায় আসা এবং টিকে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।’ প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্যই আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং তার ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনই একমাত্র পন্থা। নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিকল্প পন্থা গণতন্ত্রে থাকতে পারেনা।
গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে বিগত কয়েক বছর ধরে বেজায় সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে ফাঁকা বুলি ছড়াচ্ছে। অথচ বিএনপির পূর্বের পাঁচ বছরের (২০০১-২০০৬) শাসনামলে বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার বিশ্বসভায় সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ দেশের শিরোপাটি অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো দেশে সুশাসন ও আইনের শাসনের বিরাট অধঃপতন ঘটেছিল। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের কর্মস্থল হাওয়া ভবন তখন দেশব্যাপী দুর্নীতির সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। তারেক নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য, কোনো পদ বা পদবি না থাকলেও দেশ তার কথায় চলত বলা যায়। সেই পাঁচ বছরে উল্লেখ করার মতো কোনো উন্নয়ন কাজই দেশে হয়নি। বরং জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত, যোগাযোগ, শিল্প-বাণিজ্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিরাট স্থবিরতা নেমে আসে। তখন ঘন ঘন লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। দুর্নীতি তখন দেশব্যাপী মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করে। এর প্রতিফলন ঘটে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আচরণেও। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা কর দিয়ে এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা বৈধ করেন। এর ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা সচেতন জনগণের মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নৈতিক অধিকার কি তিনি দাবি করতে পারেন? এ ধরনের বহু দুর্নীতির ঘটনা তাঁদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, চিফ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর পুত্রদ্বয় এবং হারিছ চৌধুরীদের ব্যাপারে পত্রপত্রিকার তখন দেখা যেত। যাদের এমন অপরিমেয় দূর্নীতির ফলে বাংলাদেশ দূর্নীতির দিক দিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের কথা উপহাসই মনে হয়।
এছাড়াও নির্বাচন সংলাপে না বসে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে জনসমর্থনহীন এবং জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন ছাড়াই পিছনের দরজা দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা আসীন হতে অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি তাদের অতীতে করা দূর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি কর্মকান্ডের মাধ্যমে ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসমর্থন হারিয়ে ভরাডুবি হওয়ার পর থেকে তারা জ্বালাও-পোড়াও, ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের অপরাজনীতির তীব্রতা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা জ্বালাও-পোড়াও নীতির মাধ্যমে জনগণের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে অতীতের ন্যায় পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত এই কারণেই তারা সবসময়ই জ্বালাও-পোড়াও তথা আগুন সন্ত্রাস করার মাধ্যমে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে নষ্ট করতে চাচ্ছে।
এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে সম্প্রতি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বিএনপি সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তথা প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে ন্যাক্কারজনক হামলার পাশাপাশি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও জাজেজ কমপ্লেক্সে আগুন দেয়া, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও আইডিইবি ভবনের গাড়িতে আগুন দেয়া এবং ভবনে হামলা চালানোর মতো সহিংস কার্যক্রম চালিয়েছে। পুলিশ বক্স ভাঙচুর ছাড়াও খিলগাঁও বিশ্বরোড, কাকরাইল, রমনা পার্ক সংলগ্ন এলাকা, মগবাজার, মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপরে, কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকায় একাধিক বাস, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেয়া হয় শাহজাহানপুরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতেও। তাদের হামলায় ও মারধরে একজন পুলিশ হত্যাসহ ২১ জন গণমাধ্যমকর্মীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিতে হয়েছে। ঐদিন বিএনপি কর্মীদের সহিংসতায় পল্টন, কাকরাইল, বিজয় নগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গণতন্ত্রের কথা বলে নির্বাচন সংলাপে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ না করে এই ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং জ্বালাও-পোড়াও তথা লাশের রাজনীতি কোনোভাবেই গণতন্ত্রে তথা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সমর্থনে পরপর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব এবং দেশকে দারিদ্র্যমুক্তকরণে অনেক বেশি আন্তরিক।
অপরদিকে জনগণের শক্তি ও সমর্থনে বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার কর্তৃক তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত এই বাংলাদেশ ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় দ্রুত সম্প্রসারিত অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে পৃথিবীর বুকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক দশক ধরে, পুরো বিশ্ব বাংলাদেশের অর্থনীতির অভূতপূর্ব অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশিরভাগ লক্ষ্য অর্জনে দেশটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এমডিজির আওতায় বেশিরভাগ সামাজিক সূচকের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের দেশ প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সবক্ষেত্রে বিগত প্রায় পনেরো বছরে যে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেটা তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও আন্তরিক সদিচ্ছার কারণেই সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির পথ ও পাথেয় হয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে তার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমন্ডলে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পেয়েছেন স্বীকৃতি। আজ বাংলাদেশ ও বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের পথে, মানবাধিকারের পথে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যেতে চায়। এর ফলে গবেষণা প্রতিবেদন বলছে এখনো বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ জনগণই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক সেটাই চায়। আমরা আশা করছি জণগণ এই ইচ্ছার প্রতিফলন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট যুদ্ধে পড়বে।
সর্বোপরি, গণতন্ত্র ও নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক এবং এ দু’য়ের সমন্বয়ে হয় উন্নয়ন এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যারা এটা অস্বীকার করে তারা মূলত জনবিচ্ছিন্ন এবং তারাই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে নির্বাচনকে বাদ দিয়ে আগুন সন্ত্রাস তথা জ্বালাও-পোড়াও এর অপরাজনীতি করে গণতন্ত্রকে কলুষিত করে জনবিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি করে। তাদের বুঝতে হবে গণতন্ত্রের প্রাণ হলো নির্বাচন। নির্বাচনকে বানচাল করে আগুন সন্ত্রাস করে গণতন্ত্রের মূল শক্তি জনগণকে পুড়িয়ে পিছনের দরজা দিয়ে অবৈধভাবে কখনো ক্ষমতায় আসীন হওয়া সম্ভব না। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রে নির্বাচনই একমাত্র পন্থা। নির্বাচন বানচাল করে আগুন সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের সরকারের ক্ষমতায় আসার চিন্তা করা মূলত তাদের আকাশকুসুম ভাবনা।
লেখক: ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটিলিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া গণতন্ত্রে নির্বাচনই একমাত্র পন্থা মত-দ্বিমত