Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সারাবাংলা হয়ে উঠুক সারা বাংলার আস্থার নাম

লীনা পারভীন
৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৪

চারদিকে কেবল গুজব আর মিথ্যা সংবাদের ছড়াছড়ি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে গেছে সংবাদের প্রধান সূত্র। সাংবাদিকরা যেন আর কষ্ট করে সংবাদ সংগ্রহ বা যাচাই বাছাইয়ের মত কাজ করতে আগ্রহী নয়। তাই সামনে যা ভাইরাল তাই হয়ে উঠছে সংবাদ। এইতো সেদিন দেখলাম নায়ক ফেরদৌস বলেছেন তিনি বাবার চরিত্রে অভিনয় করবেননা অথচ একটি জাতীয় পত্রিকা হেডলাইন করে দিলো “কখনই বাবা হবেননা ফেরদৌস”। বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে না চাওয়া আর বাবা হতে না পারা কোনদিনও একই অর্থ বহন করে না। এমন মিসলিডিং হেডলাইনের যুগে সারাবাংলা ডট কম তাদের সপ্তম বর্ষে পা দিচ্ছে। অবশ্যই শুভেচ্ছা জানানোর মত একটি ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

সংবাদের মিস ইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন আর ফেইক সংবাদের ভীড়ে কোন একটা অনলাইন ৭ বছর ধরে টিকে আছে সেটাও বড় আলাপ হতেই পারে।

দেশে এই মুহূর্তে কতগুলো অনলাইন বা ছাপা পত্রিকা আছে সেই হিসেব বলতে গেলে খোঁজ খবর নিতে হবে। প্রিন্ট, ভিজুয়াল বা অনলাইনে হরহামেশাই নতুন নতুন নামের সংবাদ মাধ্যমের শোনা যায়। সবারই একই শ্লোগান দেখা যায়। সবাই সবার আগে সংবাদ পৌছাতে চায় পাঠকের কাছে। সবার দাবি তারা বিশ্বাসযোগ্যতার সাথেই সংবাদ পরিবেশন করে।

আসলেই কি তাই? বাস্তবতা কী বলছে? সংবাদ নয় এমন সংবাদ যখন ফলাও করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তখন একজন পাঠক হিসেবে চিন্তায় পড়ে যাই। নতুন কোন নাম শুনলেই মনে হয় আরও একটা ফেইক সংবাদের কারখানা মনে হয় এলো আমাদের জীবনে। অথচ সংবাদ মাধ্যমকে আমরা তাত্ত্বিকভাবে চিনেছি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে। ছোটবেলা থেকে জেনেছি সংবাদ মাধ্যম কখনও মিথ্যা বলেনা। ভুলভাল সংবাদ ছাপায়না। মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি দূর করার কাজটি করে সংবাদ মাধ্যম। আর এই একবিংশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে আমরা শিখলাম সংবাদ মাধ্যম হয়ে গেছে বিভ্রান্ত করার মাধ্যম। তারা নিজেরাই জানেনা কেমন করে মানুষ মনের আস্থাটাকে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

কোয়ালিটি সংবাদের যেমন অভাব তেমনি যোগ্য সাংবাদিকের অভাবেও ভুগছে এই চতুর্থ স্তম্ভটি। সরকারের প্রধানতম প্রচার বা বিরোধী দলের জায়গাটা নিয়ে নেয়ার কথা ছিলো সংবাদের জগতের মানুষদের। অথচ আমরা দেখলাম তারা একদল হয়ে গেলো সরকারের ঘরের লোক আর আরেকদল হয়ে উঠলো সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃনা ছড়ানোর লোক। মাঝখানে জনগণের বলে আর কিছু রইলো না। এই যে ধারাগুলো গড়ে উঠলো দেশে এর জন্য দায়ি কারা সেটা সঠিকভাবে বলা না গেলেও ক্ষতিটা হয়ে গেলো আমাদের মত পাঠকদের। ক্ষতি হলো রাষ্ট্রের কারণ রাষ্ট্রের পজিটিভ সমালোচক বলে কেউ নেই আর।

বিজ্ঞাপন

অনেক নেতিবাচক আলাপের মাঝেও সারাবাংলা ডট কম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের মত করে। তাদের সংবাদ্গুলো এখনও পর্যন্ত অথেনটিক বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। বিশেষ করে করোনার সময় যখন চারদিকে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বাজে রকমের সংবাদের ছড়াছড়ি তখন এই একটি মাত্র মাধ্যমেরি আস্থা খুঁজে পেয়েছিলাম আমি। তাদের প্রকাশিত সংবাদ না আসা পর্যন্ত আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারতামনা। এক অজানা আতংকের সময়ে পাশে থাকার জন্য সারাবাংলাকে ধন্যবাদ দেয়াই যায়।

আসলে জন্মদিনে খারাপ কিছু বলতে নেই, লিখতে নেই কিন্তু সংবাদ মাধ্যম দিনে দিনে এমন এক জায়গায় চলে যাচ্ছে যে এক কথায় বিশ্বাস করার মত অবস্থা আর নেই কাউকে। প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমও হারিয়ে ফেলেছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটি। নতুন একটা ধারা চলছে “ফটোকার্ড” বানিয়ে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া। এই ফটোকার্ডের প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায় বিভ্রান্তিতে ভরা। হয়তো ভিতরে আছে এক রকম অথচ ফটোকার্ডে লেখা আছে অন্যরকম। কখনও কখনও এমন রসালো করা হয় যে পাঠককে বাধ্য করা হয় ক্লিক করতে। এর নাম আবার দেয়া হয়েছে “ক্লিক বেইট” বাণিজ্য। অবাক কান্ড হচ্ছে নতুন নতুন কিছু ফাঁপা শব্দের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে পাঠক গড়ে তোলার জায়গাটুকু। সংবাদ মাধ্যম পাঠকের রুচিকে গাইড করে। পাঠক গড়ে তোলে। পাঠকের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অথচ আজকালকাল সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত প্রায় সকল সংবাদ বিশ্বাস করার আগে কয়েক মাধ্যমে ক্রসচেক করতে হয়। অন্যথায় নিজেকেই একজন গুজব প্রচারকারী হয়ে যেতে হয়।

কেন হচ্ছে এসব? তাহলে পাঠক যাবে কোথায়? অনলাইনের এই যুগে “অথেনটিসিটি” বা বিশ্বাসযোগ্যতা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে থাকছে। এই বিশ্বাসহীনতার কালে সারাবাংলা কি পারবে তাদের জায়গাটুকুকে ধরে রাখতে? মালিকদেরও বড্ড তাড়া থাকে রাতারাতি পত্রিকার কাটতি বাড়াতে। ক্লিক বাণিজ্য মাথা খারাপ করে দেয় সবার। যত ক্লিক তত আয়ের রাস্তা। কিন্তু কেউ ভাবছেনা এই ক্লিক বাণিজ্য দিয়ে কি পত্রিকার স্থায়ীত্বকে নিশ্চিত করা যায়? পত্রিকা মানেতো প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকে শত মানুষ, তাদের পরিবার। এই মানুষগুলোর ভবিষ্যতের কথাওতো ভাবা উচিত। ফেইক বা ঝলক মারা সংবাদে হয়তো সাময়িক কিছু আসবে কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটুকু নড়বড়ে হয়ে গেলে কি আর সেই পত্রিকায় কেউ বেড়াতে যাবে?

আমার বিশ্বাস, সারাবাংলা এই প্রশ্নটুকু মাথায় নিয়ে এগিয়ে চলবে। কাটতির পাশাপাশি যেন সঠিক ও স্বতন্ত্র অবস্থানকেও নিশ্চিত করা যায় সেই চেষ্টা ও চিন্তাটুকু সারাবাংলা পরিবারর সবার মাঝে কাজ করবে।

জন্মদিনে আবারও শুভেচ্ছা রইলো। সারাবাংলা হোক সারা বাংলার সংবাদের আস্থার নাম।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

মত-দ্বিমত লীনা পারভীন সারাবাংলা হয়ে উঠুক সারা বাংলার আস্থার নাম

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর