ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন, তদন্ত প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে
৫ জুন ২০২০ ০০:৪১ | আপডেট: ৫ জুন ২০২০ ১১:৩৯
ঢাকা: রাজধানী ইউনাইডে হাসপাতালে তদন্তের কাজ গুছিয়ে এনেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভি ডিফেন্স অধিদপ্তর। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত তারা ১৯ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের করা তদন্ত কমিটির সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য আগামী সপ্তাহেই তারা বসবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালটি নিজস্ব সিস্টেমে আগুন নেভাতে সমর্থ হয়নি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরই গিয়ে আগুন নেভাতে হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও তা চালু হয়নি। এছাড়া অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এগুলো হাসপাতালেরই গাফিলতিরই ইঙ্গিত দেয়।
এদিকে রাজধানীর গুলশানে অভিজাত এ হাসপাতালটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভারনন এ্যান্থনী পলের (৭৪) জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন। গত বুধবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিলপূর্ণ কাজের অভিযোগে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তিনি।
অন্যদিকে তদন্তে কী পাওয়া গেল সে বিষয়ে কিছু না জানালেও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক (ঢাকা বিভাগ) দেবাশীষ বর্ধন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ কাজে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। এখন পর্যন্ত ১৯ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে রিপোর্ট দেওয়া হবে। এর মধ্যে আমরা পুলিশের তদন্ত কমিটির সঙ্গেও বসব।’
ডিএমপি গুলশান বিভাগের তদন্ত প্রধান এডিসি গুলশান আবদুল আহাদ বলেন, ‘যথাসময়েই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। তদন্তের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ২৫ জনের জবানবন্দি নিয়েছি আমরা। এ ছাড়াও গত বুধবার দগ্ধ হয়ে নিহত ভেরনন এ্যান্থনী পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি।’
মামলার এজহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৫ মে তার শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা ভারনন এ্যান্থনী পলকে ব্রেন স্ট্রোকজনিত কারণে চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে গেলেও সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এরপরেও হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে হবে। পরে আধ ঘণ্টা চেকআপ শেষে সেখানকার ৩ নম্বার বেডে শ্বশুরকে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন দুপুর ১টার দিকে করোনার স্যাম্পল নেওয়ার সময় বলা হয় সন্ধ্যায় পরীক্ষার ফল চলে আসবে। তবে ওইদিন রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও পরের দিন ২৭ মে বেলা ১১টা থেকেই রিপোর্ট এসেছে নাকি খবর নেওয়া শুরু হয়। পরে বিকেলে শ্যালকসহ ল্যাবে খোঁজ করতে গেলে মৌখিকভাবে জানা যায় রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে।
তখন বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালে তিনি বলেন রিপোর্ট সিস্টেমে ও সফট কপিতে তিনি দেখেছেন তবে হার্ড কপি পাওয়া গেলেই কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা বলেই রোগীকে মূলভবনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু সাড়ে ৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও শ্বশুরকে মূলভবনে স্থানান্তরের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সে সময় ওয়ার্ড বয়কে দ্রুত একটি ফায়ার ইস্টিংগুইশার নিয়ে এসে আগুন নেভাতে বলা হলেও, উত্তরে এখানে কোনো ফায়ার ইস্টিংগুইশার নেই বলে জানানো হয়। এছাড়াও তখন কর্তব্যরত ওয়ার্ড বয়, চিকিৎসক ও নার্স সবাই রোগীদের মুভেবল বেড বের করা কক্ষের দরজা খোলার কোনো চেষ্টা না করেই যে যার মতো সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।
মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, রোগীদের আইসোলেশন কক্ষটিতে কোনো ফায়ার এক্সিট ছিল না ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রোগী বের করার কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়নি ও সহযোগিতাও করেনি। পরবর্তীতে জানা যায়, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অস্থায়ীভাবে নির্মিত আইসোলেশন ইউনিটটি বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ফায়ার অ্যাপ্রুভাল ছিল না। তাছাড়া স্থাপনার কাঠামোগুলোতে অতিমাত্রায় দাহ্য ছিল। এছাড়াও লাশ হস্তান্তরে অসহায়তা, মর্গের বিল ছাড়াও প্রায় দেড় লাখ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাই অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের মামলা করা হল বলে উল্লেখ করা হয়।
জানা যায়, ৩৫০ শয্যার ইউনাইটেড হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে। হাছান মাহমুদ রাজা হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ও আবুল কালাম আজাদ ভাইস চেয়ারম্যান এবং মইনুদ্দিন হাসান রশিদ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইউনাইটেড গ্রুপের। তবে এই হাসপাতালের পরিচালক হচ্ছেন ফরিদুর রহমান খান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো অনুমতি ছাড়াই আলাদাভাবে হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিট খোলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন
ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের ঘটনা তদন্ত করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর
ইউনাইটেড হাসপাতালের এক্সটিংগুইশার ছিল মেয়াদ উত্তীর্ণ
অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের ‘বক্তব্য’
ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের ঘটনায় ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্
আগুনে ৫ রোগীর মৃত্যু: ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা