বিজ্ঞাপন

রওশনকে বাদ দিতে জাপার চিঠির ফয়সালা শিগগিরই হচ্ছে না

September 5, 2022 | 11:53 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ চলতি মাসে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি জাতীয় সংসদের রুলস অব প্রসিডিউর অনুযায়ী স্পিকারের কাছে দেওয়া চিঠির বৈধতা নিয়ে লড়াই করবেন। এ ছাড়া জাতীয় পাটির চেয়ারম্যানের পদ পেতে দলের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করবেন। তার সঙ্গে থাকছেন দলের জেলা উপজেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে স্পিকারের কাছে দেওয়া জি এম কাদেরের চিঠির ফয়সালা শিগগিরই হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উপনেতা জিএম কাদের সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকে দলের সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে একটি চিঠি দেন স্পিকারের কাছে।

ওই চিঠিতে বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা মনোনীত করার জন্য বলা হয়েছে। জিএম কাদেরের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে সংসদীয় পদ্ধতি অনুযায়ী রেওয়াজ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন রওশন এরশাদ। চলতি মাসের ১০ তারিখে বেগম রওশন এরশাদ ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরবেন। এরপরই তিনি সংসদীয় রুলস অব প্রসিডিওর অনুযায়ী জিএম কাদেরের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দেবেন। বেগম রওশনপন্থি নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জি এম কাদের উপনেতা হিসেবে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা তিনি পারেন না। এর কোনো বৈধতা নেই। জি এম দলীয় সংসদ সদস্যদের অনেকটা জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তারা জানান, জিএম কাদের যে দলের চেয়ারম্যান হয়েছেন তাও তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুর আগে। এরশাদের অনেকটা অচেতন অবস্থায় চিঠিতে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন। যদিও তিনি পরবর্তী সময়ে দলের কাউন্সিলে বৈধতা পান। সেই কাউন্সিলেও জেলা ও উপজেলা এবং ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা জিএম কাদেরের কাছে জিম্মি হয়ে সমর্থন দেন।

গত জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদীয় দলের বৈঠকে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত করা হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর সংসদীয় দলের বৈঠকে বেগম রওশন সঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত করা হয়। অসুস্থতার কারণে তিনি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ অবস্থায় বেগম রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে জিএম কাদের যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা ঈর্ষান্বিত হয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

এ ক্ষেত্রে জি এম কাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বকে এখানে টেনে এনেছেন। একইসঙ্গে তিনি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। দলীয় সংসদ সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কার কিংবা অন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়ে হেয় করার ভয় দেখিয়ে তাদের বৈঠকে ডেকে বেগম রওশন এরশাদকে তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন নিয়েছেন।

দলের প্রেসিডিয়ামের একাধিক সদস্যদের মতে— জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যান কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওই ধারাটি সম্পূর্ণ স্বৈরতন্ত্রের শামিল। ফলে দলের অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সংসদ সদস্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা জি এম কাদেরের ভুল এবং স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত মেনে নেন। তারা পদ-পদবি এবং দলের সদস্য পদ হারানোর ভয়ে কথা বলতে পারেন না।

জাতীয় পার্টি একজন সংসদ সদস্য জানান, জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে জিএম কাদেরের দেওয়া চিঠির বিরুদ্ধে বেগম রওশন এরশাদ তার বক্তব্য তুলে ধরবেন। এরপরই জাতীয় সংসদের রুলস অব প্রসিডিওর হিসেবে পদক্ষেপ নেবেন স্পিকার। প্রথমে হয়ত স্পিকার জাপার সংসদীয় দলকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যদি তারা মীমাংসা না হন তা হলে স্পিকার উভয়পক্ষকে ডেকে নিষ্পত্তি করতে পারেন বলে জানান দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। এই সদস্যের মতে এ সম্পর্ক সিদ্ধান্ত নেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের উপনেতাকে বিরোধীদলের নেতা মনোনীত করার বিষয়ে স্পিকারের কাছে দেওয়া চিঠির বিষয় কবে সিদ্ধান্ত হতে পারে তা স্পিকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। দেখা যাক।’

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে বেগম রওশন এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা গোলাম মসীহ বলেন, ‘আমরা দলের জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। ওই কাউন্সিলে অবশ্যই চমক থাকবে। আর বিরোধীদলের নেতার বিষয়ে যে চিঠি স্পিকারের কাছে দিয়েছে সে সম্পর্কে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বেগম রওশন এরশাদ চলতি মাসেই দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। অপরদিকে জাতীয় সংসদের সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে জি এম কাদেরের দেওয়া চিঠির ফয়সালা শিগগির হচ্ছে না। জিএম কাদেরের দেওয়া চিঠিতে ত্রুটি রয়েছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন