বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারে হামুনের তাণ্ডব, বেরিয়ে যাচ্ছে কুতুবদিয়া-সাতকানিয়া হয়ে

October 25, 2023 | 1:35 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অবশেষে শান্ত হওয়ার পথে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন। কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার পর এখন কুতবদিয়া হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দিকে রয়েছে তার উপকূল অতিক্রমের গতিপথ। ঘূর্ণিঝড়টির ৭৫ শতাংশের বেশি এরই মধ্যে স্থলভাগ অতিক্রম করেছে। বাকি অংশটুকুও দুয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্থলভাগ পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

এদিকে এরই মধ্যে হামুনের তাণ্ডব দেখেছে কক্সবাজার। শহরসহ আশপাশের এলাকায় প্রচুর গাছপালা উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়ার পরও বিভিন্ন এলাকায় ফায়ার সার্ভিসকে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে সড়ক পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে। অসমর্থিত সূত্রে দুজনের মৃত্যুর তথ্যও মিলেছে।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিলে ঘূর্ণিঝড় হামুনের অগ্রভাগ আঘাত করে কক্সবাজার উপকূলে। এ সময় কক্সবাজার সদরসহ আশপাশের এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়, সঙ্গে ছিল প্রবল ঝড়ো হাওয়া। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হামুন কুতুবদিয়া-সাতকানিয়া হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সারাবাংলাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি স্থলভাগ অতিক্রম করেছে বলা যায়৷ ২৫ শতাংশেরও কম অংশ অতিক্রম করা বাকি আছে। এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে সেটিও অতিক্রম করে যাবে।

ড. আবুল কালাম জানান, এই মুহূর্তে কক্সবাজার সদর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার দিকে এগিয়ে গেছে। এটি কুতুবদিয়া থেকে সাতকানিয়া হয়ে পুরোপুরি স্থলভাগ অতিক্রম করবে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. ইমাম উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, রাত ৯টায় আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ কক্সবাজারে আঘাত হেনে কুতুবদিয়ার দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় হামুন কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। রাত ১২টা নাগাদ আসলে এটি স্থলভাগ অনেকটাই অতিক্রম করে ফেলেছে। তবে এখনো ৭ নম্বর বিপদ সংকেত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি পুরোপুরি স্থলভাগ পেরিয়ে গেলে তখন বিপদ সংকেত তুলে নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সারাবাংলার কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানান, রাত ১০টার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি কমতে শুরু করে। রাত ১২টা নাগাদ সেই বৃষ্টিপাত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে বাতাসও থেমে গেছে। তবে এর আগের কয়েক ঘণ্টায় যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়ে সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের জেলা প্রশাসকের বাংলো ছাড়াও পাহাড়তলী, মেরিন ড্রাইভ, সমিতি পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া গেছে গাছ ভেঙে পড়ার খবর।

রাত পৌনে ১টার দিকে কথা হয় কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ জাহেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর গাছ পড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক গাছ পড়ে আটকে রয়েছে। আমরা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় থেকেই বিভিন্ন এলাকায় গাছ সরাতে কাজ করে যাচ্ছি। এখনো আমাদের সবগুলো টিম কোনো না কোনো এলাকায় কাজ করছে।

এদিকে কক্সবাজারের পাহাড়তলীতে গাছের নিচে চাপা পড়ে একজন ও মহেশখালীতে দেয়ালচাপায় একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে স্টেশন অফিসার জাহেদ চৌধুরী জানান, এখনো তারা হতাহতের তথ্য পাননি।

বিজ্ঞাপন

টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীসহ কক্সবাজারের অন্য উপজেলাগুলোর প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাব মোকাবিলায় তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। বহু মানুষকে নেওয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। রাত ১০টা পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সকালে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুতুবদিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেড়িবাঁধসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২২ হাজার মানুষকে আমরা ৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি সন্ধ্যা ৭টার আগেই। সেখানে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইউনিয়নগুলোতেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে আমাদের টিম কাজ করছে।’

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন