ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে অনেকটা অপ্রস্তুত ভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন শেখ মোরসালিন। তারপর মাঠে অনেক কিছুই হলো, কিন্তু গোলটা আদায় করতে পারেনি কোনো দল। ফলাফল বাংলাদেশের জয়।
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে ভারতকে আজ ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২২ বছর পর ফুটবলে ভারতকে হারাতে পারল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলের ফাইনালে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার মোরসালিন, হামজা চৌধুরীদের হাত ধরে আবার এলো সেই আনন্দ।
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে জয়হীন থাকা বাংলাদেশ হতাশার বৃত্ত থেকেও কিছুটা বেরিয়ে আসতে পাল। বাছাই পর্বে পাঁচ ম্যাচ খেলে এটা প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচে ১ জয়, দুই ড্রতে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৫। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের অবস্থান তিন। আর ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার নিচে ভারত।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলাটা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দর্শকদের বাড়তি উন্মাদনা, গ্যালারিতে হর্ষধ্বনিকে সঙ্গী করে শুরু হওয়া ম্যাচে শুরুতে ভারতই এগিয়ে ছিল। কানাডা প্রবাসী ফুটবলার শোমিত শোমকে নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ। তবে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণটা ছিল ভারতের কাছেই।
শুরুর দিকে বেশ সতর্ক থেকে এগুনোর চেষ্টা করে গেছে বাংলাদেশ। অপর দিকে ভারত মাঝে মধ্যেই আক্রমণে উঠে চমকে দিচ্ছিল। ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে মোরসালিন চমকে দেন সবাইকেই। হঠাৎ বল পেয়ে ভারতীয় ডি-বক্সের দিকে এগিয়ে যান রাকিব হোসেন।
ডান পায়ের শটে বল বাড়ান মোরসালিনের দিকে। সামনে তখন ভারতীয় গোলরক্ষক ও দুই ডিফেন্ডার। তা দেখেই কিনা মোরসালিন একবার দৌড় থামিয়েছিলেনও। পরে আবার এগিয়ে গিয়ে দারুণ এক টোকায় ভারতীয় গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জড়িয়ে দেন গোলবারে। বাংলাদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পরে পুরো স্টেডিয়াম। বাংলাদেশের হয়ে মোরসালিনের এটা সপ্তম গোল।
ম্যাচের ২৬ মিনেট চোটের কারণে বাহিরে বেরিয়ে জান ডিফেন্ডার তারিক কাজী। ৩১ মিনেট হামজা চৌধুরী উদ্ধার করেন বাংলাদেশকে। গোলরক্ষক মিতুল মারমার ভুলে বল পেয়ে যান ভারতের লালিয়ানজুয়ালা চাংতে। লালিয়ানজুয়ালা যখন শট নিতে প্রস্তুত গোলবার থেকে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল তখন অনেকটাই দূরে। দৌড়ে এসে অসাধারণ এক হেডে লালিয়ানজুয়ালার শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে গোল হজম করা থেকে বাঁচিয়েছেন হামজা।
৪৩ মিনিটে হামজার শট অল্পের জন্য ভারতীয় গোলপোস্টের বাহির দিয়ে যায়। ডি-বক্সের সামনে থেকে প্রথম স্পর্শেই বল ভলি করেন হামজা। তা গোলবারের সামান্য দূর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতির পর গোলের জন্য হন্যে হয়ে উঠে ভারত। অপর দিকে বাংলাদেশও রক্ষণে বাড়তি মনোযোগ দেয়। হামজা চৌধুরী ডিফেন্সে নেমে ছিলে দূর্ভেদ্য।
৬৫ মিনিটে ভারতের বদলি ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সানানের দুর্বল শট পরাস্ত করতে পারেনি বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে। ম্যাচের ৭১ মিনিটে চোট পেয়ে বেরিয়ে জান দারুণ খেলতে থাকা জায়ান। জায়ান ও মোরসালিনকে তুলে নিয়ে তাজ উদ্দিন ও শাহরিয়ার ইমনকে মাঠে নামান বাংলাদেশ কোচ। ৭৯ মিনিটে ভালো জায়গায় বল পেয়েছিলেন শাকিল। কিন্তু গোলপোস্টে তার শটটি ছিল দুর্বল। সহজেই ঠেকিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় গোলরক্ষক।
৮১ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফাহিমের হেড ভারতীয় ডিফেন্ডার সান্দেস ঝিঙ্গানের হাতে লাগে। তবে পেছন থেকে বল লাগায় পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। ম্যাচের শেষভাগে গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিল ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণ আর গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে ফাঁকি দিতে পারেনি সফরকারীরা।
ফলাফল বাংলাদেশ ১-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।