বিপিএলে সম্প্রচার ভুলের দায় কর্তৃপক্ষের নয়: বিসিবি সিইও
৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:১১
।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
বিপিএল ষষ্ঠ আসর মাঠে গড়িয়েছে এক সপ্তাহও হয়নি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এর মধ্যেই দেশের কতিপয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে টুর্নামেন্টের নানাবিধ টেকনিক্যাল সমস্যা তুলে ধরে সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের মুন্ডুপাত করছে সমালোচকরা। না জানলে যা হয় আর কি! সমালোচকরা হয়তো জানেনই না, ধারাভাষ্য, স্কোর কার্ড, প্লেয়ারদের বয়স এবং গ্রাফিক্সের মতো বিষয়াদি যা গাজী টিভি কিংবা মাছরাঙার স্ক্রিনে ভেসে উঠছে তার সবই প্রডাকশন টিমের তৈরি।
আরো পরিষ্কার করে বললে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, যারা রিয়েল ইম্প্যাক্ট নামক প্রোডাকশন টিমকে বিপিএল ষষ্ঠ আসরের দায়িত্ব দিয়েছে। রিয়াল ইম্প্যাক্ট যাবতীয় সবকিছু তৈরি করে এই দুই চ্যানেল প্রচার করছে। কাজেই এখানে কেউ গাজী টিভি কিংবা মাছরাঙার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলে এর চাইতে দুঃখজনক আর কিছুই হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন সে বিষয়টিই সারাবাংলা.নেটকে পরিষ্কার করলেন, ‘বিপিএলের চলমান আসরের যে ভুলগুলো টিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছে এর দায় গাজী টিভি কিংবা মাছরাঙার নয়, প্রডাকশন টিমের।’
তবে যেহেতু টুর্নামেন্টের বয়স মাত্র ৪ দিন সেহেতু ভুলগুলো নিয়ে এখনই উদগ্রীব হওয়ার কারণ দেখছেন না এই বিসিবি সিইও, ‘দেখুন এগুলো সবই ছোট ছোট টেকনিক্যাল ইস্যু। আমরা বিষয়গুলো দেখছি যাতে করে ভুলগুলো আরো কমিয়ে আনা যায়। আমার যেটা মনে হয় খুব শিগগিরিই এর ইমপ্রুভড ভার্সন আপনারা দেখতে পাবেন।’
ভুলগুলো কী ছিলো? টিভিস্ক্রিনে চিটাগং ভাইকিংস পেসার সৈয়দ খালেদের বয়স দেখানো হয়েছে ১১৯ বছর! অথচ তিনি মাত্র ২৬ বছর বয়সী উঠতি তারকা। মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) রংপুর-খুলনার ম্যাচের ধারাভাষ্যে ‘ক্যাচঅ্যাবল ক্যাচ’ বলে ধারাভাষ্যকাররা চালিয়ে দিলেন! যেখানে ক্যাচঅ্যাবলই যথেষ্ট ছিল বলে মনে করেন অনেকে। একই ম্যাচে দেখানো হলো আরিফুলের হকের সঙ্গে জুটিতে আরিফুল হক! কিন্তু না, ওপাশে ছিলেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। কখনো ব্যাটসম্যানের রান যা ব্যাটিং গড়ও তাই দেখানো হচ্ছে। তার মানে গ্রাফিক্সসেই চোখে পড়ার মতো ভুলগুলো ক্রমাগত হয়ে যাচ্ছে!
বোঝাই যাচ্ছে বিসিবি কিংবা প্রডাকশন টিম রিয়েল ইম্প্যাক্টের চ্যালেঞ্জটা কত বড়। এমন ভুল নিশ্চয়ই ক্রিকেট পাগল এই জাতির কাম্য নয়।
ভুলের গল্পের শেষ এখানেই নয়। আছে ডিসিশিন রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস নিয়েও। বিপিএলের প্রথমবারের মতো চালু হওয়া ডিআরএসে কাজ চলছে শুধু আলট্রামোশন দিয়ে। নেই আলট্রা এজ, স্নিকোমিটার কিংবা হটস্পটের মতো উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। এতে করে শুরু থেকেই গোলমেলে বিপিএল।
উদাহরণ টানতে খুব পেছনে যেতে হবে না। গেল ৬ জানুয়ারি সিলেট সিক্সার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মধ্যকার ম্যাচে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে ওয়ার্নার ও তৌহিদ হৃদয় ছিলেন উইকেটের একই প্রান্তে। অন্য প্রান্তের উইকেট ভাঙার পর কে রান রান আউট সেটি জানার জন্য থার্ড আম্পায়ারের শরণাপন্ন হতে হয়। রিপ্লেতে দেখা যায়, ওয়ার্নার পপিং ক্রিজে ঢুকলেও তৌহিদ হৃদয় সামনে মুখ করে পেছনে হাত দিয়ে ব্যাট ক্রিজে রেখে দিয়েছেন। এখানে বারবার দেখার চেষ্টা করা হচ্ছিলো তার ব্যাট শূন্যে ভেসে আছে কী না। তবে তা সত্যিই ছিল কী না নিশ্চিত না হয়ে থার্ড আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ওয়ার্নারকেই আউট বলে সিদ্ধান্তু দিলেন।
এমনকি মঙ্গলবারের (৮ জানুয়ারি) ঢাকা ডায়নামাইটস ও খুলনা টাইটান্সের ম্যাচেও স্নিকো মিটারের প্রয়োজনীতা বোধ হলো তীব্রভাবে। তৃতীয় ওভারে ডেভিড উইসির লেগস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিটি ঢাকার ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই খেলতে গেলে কট বিহাইন্ডের আবেদন তোলে খুলনা। কিন্তু আম্পায়ার তা ওয়াইড বলে ঘোষণা দেন। রিভিউ শেষে সেই ওয়াইডই থাকলো। সিদ্ধান্ত গেল ঢাকা ডায়নামাইটসের পক্ষে!
কতদিন চলবে এভাবে? জবাবে আশু সমাধানের আশ্বাস দিলেন সুজন, ‘দেখুন, বিপিএলে এর আগে কখনোই ডিআরএস ছিলো না। তো একটি প্রযুক্তি যখন নতুন করে চালু করা হয় সেখানে প্রাথমিক কিছু ভুল থাকে। এগুলো খুব শিগগিরই সমাধান হবে। স্নিকোমিটার,আলট্রা এজ খুব শিগগিরই আসছে। সবকিছুই প্রক্রিয়াধীন।’
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি