Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানির মান রাখবে বাংলাদেশ?


১ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৫০

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কান টিম বাসে হামলার পর থেকে পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক কোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নেই বললেই চলে। গত ১০ বছরে দেশটি অনেক চেষ্টা করেও আন্তর্জাতিক কোনো মেগা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি। বরং আরব আমিরাতকে ঘরের মাঠ বানিয়ে খেলতে হয়েছে এবং খেলতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। এর আগে বাংলাদেশকে তাদের মাটিতে খেলানোর প্রস্তাব দিয়েছে একাধিকবার। নিরাপত্তার কারণে বার বারই তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি।

বিজ্ঞাপন

আবারো বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়িয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান এহসান মানি আরেকবার বাংলাদেশকে তাদের দেশে গিয়ে খেলার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানাচ্ছে পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো। শুধু বাংলাদেশ নয়, ২০০৯ সালে খেলতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া শ্রীলঙ্কাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মানি।

যুব ক্রিকেট সিনিয়র ক্রিকেটের রাস্তা এবং এই বিষয়টি বেশ স্পষ্টভাবে রয়েছে পিসিবির ক্রিকেট কৌশলে- এমনটাই জানিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) পরিচালক (আন্তর্জাতিক) জাকির খান। বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে খেলিয়ে পিসিবি বিশ্ব ক্রিকেটকে দেখাতে চায় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে পিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছে বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তানে পুরো একটি সিরিজ খেলার জন্য অনুরোধ করবে। এ়ফটিপি অনুযায়ী আগামী বছর জানুয়ারিতে পাকিস্তান বাংলাদেশকে আতিথ্য জানাবে একটি হোম সিরিজের জন্য।

হাতেগোনা কিছু সিরিজ বাদে পাকিস্তানের সকল হোম সিরিজই এতদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়ে আসছে। তবে পিসিবির ইচ্ছা বছরের শেষে শ্রীলঙ্কা সিরিজ ও পরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে লম্বা সময় পর টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।

পিসিবির চেয়ারম্যান এহসান মানি জানান, আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। তারা এখানে এসে খেলতে চায়। পাশাপাশি আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গেও আলোচনা করে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী পাকিস্তানের দুটি দেশই খেলতে আসবে। পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে আমাদের সবাইকে সহায়তা করতে হবে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল খেলে গেছে। এখানে পিএসএলের অনেক ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে কোনো সমস্যা ছাড়াই।

বিজ্ঞাপন

মানি আরও জানান, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা হামলার শিকার হয়েছিল, তারপরও তারা ২০১৭ সালে এখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে গেছে। তাদের ব্যাপারটা আসলেই মানবিক দিক দিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি, আশা করি তারা আমাদের ফিউচার ট্যুরস প্রোগ্রামে আশাহত করবে না। আমাদের দুই বোর্ডের আলোচনা খুব ভালো দিকেই এগুচ্ছে।

এর আগেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল পিসিবি। কিন্তু পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে না পারায় সেখানে জাতীয় দলকে পাঠানো হয়নি। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উপর জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান শুধু বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে বাদে সকল দলের বিপক্ষে আরব আমিরাতে হোম সিরিজ খেলেছে। তবে বাংলাদেশ নারী দল পাকিস্তান সফর করেছে। ইমার্জিং এশিয়া কাপে নিজেদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ বাংলাদেশ দল খেলেছে পাকিস্তানে।

যদি বিসিবি এবার রাজি হয় পাকিস্তানের প্রস্তাবে তাহলে বাংলাদেশই হতে পারে প্রথম দল যারা জঙ্গী হামলার পর পাকিস্তানে টেস্ট ম্যাচ খেলবে। এদিকে, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট দল। চলতি মাসে তিন দিনের দুটি ম্যাচ এবং তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে তারা। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের আসরকে সামনে রেখে এই পাকিস্তানের এই সফর।

আগামী ২৯ এপ্রিল ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে তিন দিনের ম্যাচ দিয়ে সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৫ মে খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের মধ্য দিয়ে সফরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

ম্যাচের সূচি:
২৯ এপ্রিল-১ মে তিন দিনের প্রথম ম্যাচ ফতুল্লা
৫-৭ মে তিন দিনের দ্বিতীয় ম্যাচ, খুলনা
১০ মে প্রথম ওয়ানডে, খুলনা
১২ মে দ্বিতীয় ওয়ানডে, খুলনা
১৫ মে তৃতীয় ওয়ানডে, খুলনা

এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। বাংলাদেশ যেহেতু পাকিস্তানে দল পাঠায়নি তাই পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান তাদের খেলোয়াড়দের বাংলাদেশে আসা আটকে দিয়েছিল বলে অনেকের মত। গত বিপিএলে পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটারদের ড্রাফটে রাখা হলেও শেষ মুহূর্তে তাদের আটকে দেয় পিসিবি। এমনকি বিপিএলে খেলার জন্য বোর্ডের চুক্তিতে থাকা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ছাড়পত্র দেয়া হবে কিনা তা জানতে পিসিবিকে চিঠি পাঠাতে হয়েছিল। তাতেও লাভ হয়নি। পরে বিপিএলের দলগুলোকে বিকল্প খেলোয়াড় খুঁজতে হয়। ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানে একটি সফর বাতিল করার পর বিপিএলে পাকিস্তানি খেলোয়াড় পাঠানো নিয়ে সংকট তৈরি হয়।

এক পর্যায়ে সংকট নিরসনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দিল্লিতে পিসিবি সভাপতি জাকা আশরাফের সাথে বৈঠক করেও সংকট দূর করতে পারেননি। তাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ক্রিকেট অঙ্গনে কিছুটা হলেও সম্পর্কের টানাপোড়ন তৈরি হয়। এমনকি পিসিবি সভাপতি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গের অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে বিপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পাঠালে এবং আইসিসির সহ সভাপতি পদে বাংলাদেশের প্রার্থীকে সমর্থন দিলে তারা পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলকে খেলতে পাঠাবে। এর আগে কলম্বোতে আইসিসির সভায় আমরা সহ সভাপতি পদে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন প্রধান মোস্তফা কামালের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলাম। তখন মোস্তফা কামাল আমাদের ইমেইল পাঠিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন যে বাংলাদেশ পাকিস্তানে খেলতে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ খেলতে আসেনি। বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসানও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বিপিএল শুরুর আগেই বাংলাদেশ পাকিস্তান যাবে দুটি ম্যাচ খেলতে।‘

তিনি আরও জানান, নাজমুল হাসান খুবই ভালো মানুষ। আমি তাকে পছন্দ করি। সেখানে আমাদের মধ্যে এরকম একটা সমঝোতা হয়েছিল যে তিনি দেশে ফিরে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং বিপিএলের আগেই বাংলাদেশ দুটি ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান যাবে। এরপর আমি বাংলাদেশের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশও তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। যদিও আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি যদি অতীত ইতিহাস দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন পাকিস্তান সবসময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে।‘

চলতি বছর বাংলাদেশ নারী দল ও যুব দলকেও পাকিস্তান আমন্ত্রণের কথা ভাবছে পিসিবি। আর সব দলের বিপক্ষে আরব আমিরাতে খেলতে পারলে বাংলাদেশকে নিয়ে সেখানে কেন ম্যাচ আয়োজনে পাকিস্তানের অনীহা, ব্যাপারটি বোঝা দায়! তাই এবারের প্রস্তাবে বাংলাদেশ এহসান মানির মান রাখতে পারবে কি না সেটি সময়ই বলে দেবে।

সারাবাংলা/এমআরপি

পাকিস্তান বাংলাদেশ বিসিবি-পিসিবি স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর