Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খোঁড়া যুক্তিতে বলির পাঁঠা ইমরুল?


১৬ এপ্রিল ২০১৯ ২০:০৯

গত মাসের শেষ সপ্তাহে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের দল কেমন হতে পারে। যেখানে ছিল না ইমরুল কায়েসের নাম। তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাপনের ইঙ্গিতই সত্যি হলো। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি ইমরুল। অথচ, বিপিএল চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে খেলা ইমরুলের সম্ভাবনা ছিল ব্যাপক। বিপিএলের আগে হোম কন্ডিশনে ধারাবাহিক ছিলেন টপঅর্ডার এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু তারপরও জায়গা হয়নি তার।

বিজ্ঞাপন

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল অটোমেটিক চয়েজ। যদিও তার সঙ্গী হিসেবে ওপেনিংয়ে এখনও কোনো ভালো ব্যাটসম্যানের সন্ধান পায়নি বাংলাদেশ। তারপরও ওপেনিং জুটিতে তামিম-ইমরুলকেই দেশসেরা জুটি ভাবা হয়। তার প্রমাণও দিয়েছেন দুজন। ২০১১ বিশ্বকাপ এবং ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে ছিলেন ইমরুল কায়েস। মাঝে সুযোগ হয়নি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ২০১৫ বিশ্বকাপে।

২০১৯ বিশ্বকাপের দল আর ইমরুলের বাদ পড়ার কারণ নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, ‘যেহেতু ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ হচ্ছে, তাই আমরা অভিজ্ঞতাটাকে একটু বেশি মূল্যায়ন করেছি। ওখানকার কন্ডিশনটা আমাদের এখানকার থেকে আলাদা। এক বছর আগে আমরা সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে এসেছিলাম। তো সেই অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে আমাদের স্কোয়াড সাজানো হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচক অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে দল সাজানো হয়েছে বলে জানালেও অভিজ্ঞ ইমরুলকে বাদ দিয়েই কিন্তু দল সাজানো হয়েছে। যেখানে সুযোগ পেয়েছেন অফফর্মে থাকা সৌম্য সরকার। সুযোগ পেয়েছেন অনভিজ্ঞ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

কেমন ছিল ইমরুলের আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে সবশেষ পারফরম্যান্স? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তার ব্যাটিং পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখা হয়। সেখানে তার খেলা শেষ ১১ ইনিংসের স্কোরগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কিম্বার্লি, পার্ল আর ইস্ট লন্ডনে করেছিলেন ৩১, ৬৮ এবং ১ রান। এরপর প্রথমে সুযোগ না পেলেও এশিয়া কাপে আবুধাবিতে শেষ সময়ে উড়িয়ে নেওয়া হয় ইমরুলকে। সেখানে আগের দিনের ভ্রমণক্লান্তি না কাটতেই মাঠে নামতে হয় আফগানদের বিপক্ষে। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলেছিলেন অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ আর ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন ২ রান।

বিজ্ঞাপন

এরপর হোম কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলেছিলেন। যেখানে তিন ইনিংসে তার রান ছিল দেখার মতো। প্রথম ম্যাচে ১৪৪, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯০ আর তৃতীয় ম্যাচে করেছিলেন ১১৫ রান। তামিমের ইনজুরিতে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন তিন ম্যাচেই। সেই তিন ম্যাচে আরেক ওপেনার লিটনের ইনিংসগুলো ছিল ৪, ৮৩ এবং ০ রানের।

ইমরুল

গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি ইমরুল। দুই ম্যাচে করেছিলেন ৪ ও ০ রান। তারপরও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে চার নম্বরে ছিলেন ইমরুল। খেলার সুযোগ পান মাত্র ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ। তবে সেরা পাঁচের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তার। ৬২.২৮ ব্যাটিং গড়ে আর ৯০.৪৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪৩৬ রান। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ইমরুল। সেই সিরিজে ইমরুল ৩ ম্যাচ খেলে করেন ১১৯ রান, যেখানে তামিম ইকবাল ৩ ম্যাচে করেছিলেন ১১৫ রান।

গত মাসে আবাহনীর বিপক্ষে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের জার্সিতে ১২৬ রানের ইনিংস খেলা ইমরুলের বিশ্বকাপে না থাকার বিষয়ে প্রধান নির্বাচক জানান, ফর্ম কিংবা ফিটনেস নয়, ইমরুলকে নেয়া হয়নি ডানহাতি-বামহাতি কম্বিনেশন ঠিক রাখার জন্যই। প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, ‘যেহেতু ওপেনিংয়ে তামিমের জায়গা পাকা। তাই তার সঙ্গী হিসেবে একজন ডানহাতি ওপেনারকেই নিতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। আমাদের ২০ জনের যে পুল আছে সেটার মধ্যে ইমরুল আছে। টিম ম্যানেজমেন্ট টপঅর্ডারে ডানহাতি এবং বামহাতি ব্যাটসম্যানের একটা কম্বিনেশন চাচ্ছিলেন। সেই বিবেচনা করেই ইমরুলকে অফ করে রাখা হয়েছে।’

বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি, এমনকি আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্যও ইমরুলকে রাখা হয়নি। বিসিবি সভাপতি এবং নির্বাচকরা জানিয়েছেন, ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো পারফরম্যান্স করেই বিশ্বকাপে যেতে হবে। সেখানে ইমরুলকে না রাখায় এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিশ্বকাপে যাবার শেষ পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। বিশ্বকাপের ১৫ জনই রয়েছেন এই দলে। সঙ্গে বাড়তি দুজন যোগ হয়েছেন। তারা হলেন ইয়াসির আলি রাব্বি ও নাইম হাসান।

বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তরুণ এই অলরাউন্ডারকে রাখা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু অভিজ্ঞতার বিচারে সৈকতের চেয়ে ঢের এগিয়ে ছিলেন ইমরুল। কথা উঠতে পারে সৈকত মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান, ইমরুল টপঅর্ডার। কিন্তু, দলের প্রয়োজনে অনেকবারই ইমরুলকে মিডলঅর্ডারে নামানো হয়েছিল, সেখানে সফল হয়েছিলেন তিনি। সৌম্য ফর্মে ফেরায় নিউজিল্যান্ড সফর থেকে বাদ পড়তে হয় ইমরুলকে। অথচ কিউইদের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে এক ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রান ছিল ইমরুলের দখলেই। এটাই হতে পারতো ইমরুলের শেষ বিশ্বকাপ।

সারাবাংলা/এমআরপি

** সুইং ভেলকি দেখিয়েই বিশ্বকাপ দলে রাহি
** অবাকই হয়েছেন মোসাদ্দেক
** ওয়ানডে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা
** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সৈনিক যারা
** চমকের নাম রাহি, হতাশার নাম তাসকিন
** আইপিএলের মাঝপথ থেকে দেশে ফিরছেন সাকিব

ইমরুল বিশ্বকাপ স্কোয়াড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর