বিবর্তনের জার্সিতে বিশ্বকাপে টাইগারদের পারফরম্যান্স
১ মে ২০১৯ ২০:৪১
অনেক আলোচনার পর বদলানো হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জার্সি। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি অনুমোদন নিয়েই টাইগারদের বিশ্বকাপের জার্সি বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন করার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে জার্সি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায়। জার্সির রঙ ও ডিজাইন সন্তুষ্ট করতে পারেনি বেশির ভাগ টাইগারপ্রেমীদের।
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে, ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। তারও আগে ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয় বাংলাদেশ। আইসিসির পূর্ব ঘোষণা অনুসারে সপ্তম বিশ্বকাপ আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ:
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সিতে ছিল সবুজের মাঝে বুকের ওপর বাঘের ডোরাকাটা দাগ। জার্সির কলার ছিল হলুদ। ছিল না লালের কোনো আভা। সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অভিষেক ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ গর্ডন গ্রিনিজের অধীনে ১৭ মে চেমসফোর্ডের ওই ম্যাচে হেরেছিল নবাগত বাংলাদেশ। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ নেয় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল। এরপর পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে জানান দিয়েছিল ঝরে যেতে আসেনি টাইগাররা। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচ খেলে দুটিতে জয় ও তিনটিতে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।
২০০৩ বিশ্বকাপ:
২০০৩ সালে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। সেবার বাংলাদেশের জার্সি ছিল গাঢ় সবুজের সঙ্গে লাল বর্ডার দেওয়া, বুকে ছিল হলুদ রঙের ‘বাংলাদেশ’ লেখা। বিশ্বকাপের সেই আসরের পরে অনেক আবেগী বাংলাদেশি সমর্থক সেই জার্সিকে অপয়া বলে মন্তব্য করেছিলেন। হয়তো এর কারণও ছিল। সেই বিশ্বকাপে কানাডা, কেনিয়ার মতো দলের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচে হেরে যায় লাল কলার আর পাঁজরের দুই পাশে লাল বর্ডারের জার্সিধারীরা। সেই বিশ্বকাপে দলের অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট আর কোচ ছিলেন পাকিস্তানের মহসিন কামাল।
২০০৭ বিশ্বকাপ:
২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সিতে ছিল সবুজ, হলুদ আর লাল রঙ। বুকে ছিল সাদা হরফে লেখা বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের রঙিন জার্সিতে পারফরম্যান্সও ছিল রঙিন। সেই বিশ্বকাপে শচীন, গাঙ্গুলি, দ্রাবিড়দের ভারতকে বিদায় করে দিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করেছিল তারুণ্যের তালে উড়ে চলা তামিম, মুশফিক, সাকিবরা। সুপার এইটে উড়ন্ত বাংলাদেশ হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। টাইগারদের সেবারের জার্সিতে সবুজের আধিক্য তো ছিলই, কলারে এবং হাতার নিচের অংশে ছিল লাল। পাঁজরের দুই পাশে ছিল হলুদ বর্ডার দেওয়া। মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুর পরের দিনই খেলতে নেমেছিল মাশরাফিরা। শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দেয় হাবিবুল বাশার সুমনের দলটি। বারমুডাকে সাত উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় টাইগাররা। সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারায় অস্ট্রেলিয়ান কোচ ডেভ হোয়াটমোরের শিষ্যরা।
২০১১ বিশ্বকাপ:
২০১১ বিশ্বকাপ ছিল দেশের মাটিতে খেলা বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজক দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল বাংলাদেশেই। সেই আসরে বাংলাদেশ চতুর্থবার অংশ নেয়। সেবার টাইগারদের জার্সিতে সবুজের মাঝে ছিল হলুদ। বুকের মাঝে ছিল সাদা রঙে বাংলাদেশ লেখা। বুকের দুই পাশে ছিল হলুদ। কলার আর হাতার নিচের অংশে ছিল লালের বর্ডার। জার্সির নিচের দিকে ছিল গাঢ় সবুজের ছোপ ছোপ মিশ্রন। সেবার ঘরের মাঠে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে খেলা দলটির পারফরম্যান্সও ছিল ভালো-মন্দের মিশ্রনে ভরপুর। ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডসকে হারালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া স্বাগতিক বাংলাদেশ বিদায় নিয়েছিল প্রথম পর্বেই। আয়ারল্যান্ডকে ২৭ রানে হারিয়ে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় টাইগাররা। পরে ইংল্যান্ডকে দুই উইকেটে ও নেদারল্যান্ডসকে ছয় উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়ান কোচ জেমি সিডন্সের শিষ্যরা।
২০১৫ বিশ্বকাপ:
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পঞ্চবারের মতো অংশ নেয়। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই আসরে প্রথমবারের মতো নক-আউট পর্বে খেলেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে বাঘের ডোরাকাটা থাকলেও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে পুরো বাঘটাই চলে এসেছিল জার্সিতে। সবুজ স্ট্রাইপের ওপর হলুদ অক্ষরে বাংলাদেশ লেখা ছিল। জার্সির নিচের দিকে ছিল বাঘের মুখের একটা ছাপ। কলারে ছিল লালের মাঝে সবুজ, হাতেও ছিল লাল। জার্সির নিচের দিকেও ছিল লালের বর্ডার। সেবার মুশফিকের দুর্দান্ত পারফর্মে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে খেলতে পারেনি মাশরাফির নেতৃত্বে খেলতে যাওয়া অকুতোভয় টাইগাররা। পয়েন্ট ভাগাভাগিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ রানে হারলেও চতুর্থ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারায় টাইগাররা। পঞ্চম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লঙ্কান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলে মাশরাফির দলটি হেরেছিল ৩ উইকেটে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আম্পায়ারদের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের বলি হতে হয় টাইগারদের।
২০১৯ বিশ্বকাপ:
আগামী ৩০ মে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যেখানে বিশ্বসেরা দশ দলের একটি হয়ে অংশ নেবে টাইগাররা। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের জার্সি নিয়ে যা হয়ে গেল, ক্রিকেটের ইতিহাসে এমনটি হয়েছে কী না জানা নেই। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দেখানো এবারের বিশ্বকাপ জার্সিতে থাকছে সবুজ, লালের মিশ্রন। কলারে আছে গাঢ় সবুজ। হাতায় থাকছে লাল রঙ। বুকের মাঝামাঝি লালের ভেতরে থাকছে সাদা রঙে লেখা বাংলাদেশ। দেশের নামের নিচ থেকে জার্সিতে থাকছে গাঢ় সবুজের জ্যামিতিক স্ট্রাইপ। বাংলাদেশ এবার প্রথম পর্বে খেলবে ৯টি ম্যাচ। সেমি ফাইনাল আর ফাইনালে উঠতে পারলে ম্যাচের সংখ্যা নিশ্চিত বাড়বেই।
সারাবাংলা/এমআরপি
** আইসিসির অনুমতিতে জার্সির রঙ পরিবর্তন করা হচ্ছে: পাপন
** জার্সি নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই, সংসদে প্রধানমন্ত্রী
** টাইগারদের নতুন জার্সি তৈরির কাজ শুরু করেছে বিসিবি
** টাইগারদের বিশ্বকাপ জার্সি বদলাচ্ছে
** লাল-সবুজের থিম নেই টাইগারদের জার্সিতে
** বিশ্বকাপের জার্সি গায়ে মাশরাফিরা
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ জার্সি টাইগার বাংলাদেশ বিবর্তন বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ স্পেশাল স্পোর্টস স্পেশাল