বেন স্টোকস: মিস্টার ইনক্রেডিবল নাকি সিন্দাবাদ?
২২ জুলাই ২০২০ ০০:১৫
‘আমার মনে হয় সে মিস্টার ইনক্রেডিবল।’ বেন স্টোকস সম্পর্কে গতকাল কথাটা বলেছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়ক জো রুট। বলবেনই তো, ওল্ড ট্রাফোর্ডে কী খেলাটা-ই না খেললেন স্টোকস!
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ছিল স্টোকসের দুটি ইনিংস। দলের বিপদে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ১৭৬ রান করেছেন। শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড যখন বিপদে তখন উইকেটে গিয়ে স্টোকস যে ইনিংসটা খেলেছিল তার ওপর ভর করেই মূলত নিজেদের সংগ্রহকে সাড়ে চারশর ওপারে নিতে পেরেছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসেও স্টোকসের ব্যাট ছিল কার্যকর।
বৃষ্টির কারণে টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ম্যাচ জিততে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত রান তোলার প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। বেন স্টোকস চলে গেলেন ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে, ক্যারিয়ারে এর আগে যা কখনোই করেননি। কী আশ্চর্য, ক্রিজে গিয়েই বাজিমাত! ৫৭ বলে ৭৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলের কম সময়ে বেশি রানের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। মাঝে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত।
দুই ইনিংস মিলিয়ে তিন উইকেট পেয়েছেন। স্টোকসের তিন উইকেটই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিপক্ষের জুটি ভেঙেছেন। ফিল্ডিংয়েও নজর কেড়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। সীমানা পর্যন্ত বলের পেছনে দৌড়াতে দেখা গেছে তাকে। টেস্ট শেষ হতেই বড় একটা পুরস্কারও পেয়েছেন।
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতে শীর্ষে উঠে বসেছেন স্টোকস। ২০০৬ সালের পর প্রথম ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে এই অর্জনে নাম উঠল তার। ২০০৬ সালে সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ছিলেন টেস্ট অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। এতো কিছুর পর স্টোকসকে ইনক্রেডিবল বা অবিশ্বাস্য বললে তাতে দোষ কী!
অনেকে তাকে হয়তো ইংলিশ ক্রিকেটের ‘সিন্দাবাদ’ও বলবেন! কঠিন বিপদের সময়ে বা যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন অনেকবার দলকে তীরে ভিড়িয়েছেন ২৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। ক্রিকেটের উদ্ভাবক দেশটি একটা বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য বুভুক্ষ ছিল যুগের পর যুগ ধরে। ২০১৯ সালে ইংলিশদের সেই আক্ষেপ ঘুচার মূল কারিগরই স্টোকস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচটা জেতালেন তো স্টোকস একাই! নিউজিল্যান্ড যখন জয়ের সুবাস পাচ্ছিল তখন একপ্রান্ত আগলে রেখে ৮৪ রানের অসাধারণ এ ইনিংস খেলে হার ঠেকিয়ে দলকে সুপার ওভারে নিয়েছিলেন। স্টোকস সুপার ওভারে ৩ বলে ৭ রান করেছিলেন, নাটকীয় ভরা ফাইনাল জিতে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পায় ইংল্যান্ড।
তারপর মর্যাদার অ্যাশেজ সিরিজে আরেকবার ‘সিন্দাবাদ’ হলেন স্টোকস। সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে ১-০ তে এগিয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া লর্ডসে দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের একদম কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড যখন নবম উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া তখনও ৭৩. রানে এগিয়ে ছিল। বেন স্টোকসের সঙ্গে শেষ উইকেট জুটিতে ছিলেন ইংল্যান্ডের ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচ।
তারপর যা ঘটল সেটাকে ভুতুড়ে বলেছেন অনেকে। লিচকে নিয়ে শেষ উইকেটে ৭৬ রান তুললেন স্টোকস, তার মধ্যে লিচের অবদান মাত্র ১! ৭৪ রানই এসেছে স্টোকসের ব্যাট থেকে। ক্রিকটে রসিকদের বিস্মিত করে ইংল্যান্ডকে কাব্যিক এক জয় এনে দিয়েছিলেন স্টোকস।
চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও ইংল্যান্ডকে উদ্ধার করতে ‘সিন্দাবাদ’ হয়ে হাজির স্টোকস। করোনাভাইরাসের মধ্যে বহু আলোচনার পর যখন মাঠের ক্রিকেটে ফিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বসল ইংল্যান্ড। স্টোকস অবশ্য দুর্দান্তই খেলেছিলেন। দুই ইনিংসে ছয় উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৪৩ ও ৪৬ রান করেছিলেন। সেটাতে যথেষ্ট হলো না বলে দ্বিতীয় টেস্টে এগিয়ে এলেন একাই দলকে জেতাতে!
ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্টোকস এভাবে এগিয়ে না এলে উইজডেন ট্রফিটা পূনরুদ্ধারের সম্ভবনা সেখানেই শেষ হয়ে যেত ইংল্যান্ডের। কারণ গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে এই সিরিজ হেরে এসেছিল ইংল্যান্ড। ফলে চলতি সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে সমতা হলেও ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই থাকবে। সিরিজ জিতলেই কেবল ট্রফি পাবে ইংল্যান্ড। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে সেই সম্ভাবনা তৈরি করেছেন বেন স্টোকস।
কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে স্মরণীয় সব বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বুঝি নিয়মই বানিয়ে ফেললেন ইংলিশ অলরাউন্ডার!