রাতে শুরু হচ্ছে ইউরোর উত্তাপ
১১ জুন ২০২১ ০৯:২০
ক্লাব ফুটবলের মৌসুম শেষ হলো কিছুদিন আগে। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মৌসুম ধরেই ঘনঘন ম্যাচ খেলতে হচ্ছে ফুটবলারদের। মৌসুম শেষে তাই নিশ্চয় ক্লান্ত ফুটবলাররা। এর মধ্যেই একদিকে শুরু হচ্ছে কোপা আমেরিকা অন্য দিকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ২৪টি দল এবার ইউরোপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামবে। যার প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়াচ্ছে আজ রাতে।
শুক্রবার (১১ জুন) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় এবারের টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তুরস্কের মুখোমুখি হবে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি। ইউরো নিয়ে এদেশে আগ্রহের শেষ নেই। তবে কয়েক বছর আগেও দৃশ্যটা ছিল ভিন্ন। বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় ইউরোর জনপ্রিয়তা ছিল তলানিতে। তার বড় কারণ হয়তো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফুটবল নিয়ে মাতামাতি। এই দুই দলের ইউরোতে খেলা হয় না, খেলে কোপায়। ইতিহাসের দিক দিয়েও কোপা পিছিয়ে।
বয়সের দিক দিয়ে বিশ্বকাপ ও কোপার তুলনায় ইউরো শিশু। ১৯৬০ সালে শুরু হয় টুর্নামেন্টটি। প্রথম দিকে মাত্র চারটি দল খেলতে পারত এই টুর্নামেন্ট। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মাত্র চারটি দল নিয়েই আয়োজিত হয়েছে ইউরো। সেখান থেকে এবারের ইউরো খেলতে নামছে ২৪টি দল। ধীরে ধীরে দলের সংখ্যা যেমন বেড়েছে জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের প্রতিযোগিতাগুলোর এতে বড় অবদান।
এবারের ইউরো মাঠে গড়ানোর কথা ছিল গত বছরের জুন-জুলাইয়ে। কিন্তু সবকিছুর মতো ইউরোকেও বাধাগ্রস্থ করেছে মহামারী করোনাভাইরাস। ভাইরাসটির প্রকোপে এক বছর পিছিয়ে চলতি জুনে শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্টটি। ১১ জুন শুরু হওয়া টুর্নামেন্টটির ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ১১ জুলাই। তবে আনুষ্ঠানিক নামটা থাকছে আগের মতোই—ইউরো ২০২০। ব্যস্ত ক্লাব মৌসুম শেষে ফুটবলাররা স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত। তবে ইউরোর মতো টুর্নামেন্টে কেউ যে ছেড়ে কথা বলবেন না সেটা বুঝাই যায়।
কয়েক দিন আগে পর্তুগালের ফার্নান্দো কোচ সান্তোস বলেছিলেন, ‘এবারের ইউরো জেতার সমর্থ আছে সাত থেকে আটটি দলের।’ অনেকেই হয়তো একমত হবেন সান্তোসের সঙ্গে। তবে ফেভারিটদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে হয়তো ফ্রান্স। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলে নয়, দারুণ ব্যালেন্স দলটি দুর্দান্ত ফর্মেও আছেন। আক্রমণভাগে কিলিয়ান এমবাপে, অ্যান্থনিও গ্রিজমান, কিংসলে কোমান, অলিভিয়ের জিরুরা আগে থেকেই ছিলেন। ইউরোর দলে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন দারুণ ফর্মে থাকা করিম বেনজেমা।
মাঝমাঠে পল পগবার সঙ্গে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এনগোলো কান্তে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে তাক লাগানো ফুটবল খেলেছেন কান্তে। রক্ষণে আস্থা দিতে রাফায়েল ভারান, বেঞ্জামিন পাভারদের মতো তারকারা আছেন। রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণ মিলিয়ে ফরাসিরা বর্তমান সময়ের অন্যতম ব্যালেন্স টিম। বিশ্বকাপ জয়ের পর ইউরোতে অর্জনটা নিশ্চয় বাড়িয়ে নিতে চাইবেন ফরাসিরা।
সাম্প্রতিক ফর্মটা ভালো না গেলেও জার্মানি বরাবরই ভয়ঙ্কর। কোচ জোয়াকিম লো’কে নিশ্চয় বিদায়ী উপহার দিতে চাইবেন জার্মানরা। দলীয় সামর্থের বিচারে পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া ইউরোর দাবিদার। সাত বছর পর কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে নেদারল্যান্ডস। ফর্মে থাকা দলটি নিশ্চয় টুর্নামেন্টটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবে।
ইউরোতে অঘটন ঘটার একটা রীতি আছে। প্রায় প্রতিবারই বড়সড় অঘটন ঘটিয়ে বসে কোনো দল। এবার ডেনমার্ক, তুরষ্ক, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, ওয়ালসের মতো দলগুলো নিশ্চয় সেই আশাতেই আছে এবং তাদের সমার্থও আছে। অঘটন ঘটানোর পারদর্শীতা গ্রুপ পর্বেই দেখিয়েছে উত্তর মেসিডোনিয়া। সব মিলিয়ে এবারের ইউরো লড়াই জমে ওঠারই কথা।
বেশ কয়েকজন মহা তারকা এবার শেষ ইউরো খেলতে যাচ্ছেন। এই দলে বড় নাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বয়স ৩৬ চলছে, ফলে সিআর সেভেন যে আরও একটা ইউরো খেলবেন এমনটি ভাবা বাড়াবাড়িই। ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ, পর্তুগালের পেপে, ইতালির জর্জো কিয়েলিনি, লিওনার্দো বোনুচ্চি, ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেল বা পোলিশ তারকা রবার্ট লেভাডফস্কিরও শেষ ইউরো হতে পারে এটি। নিশ্চয় শেষ বেলায় স্মরণীয় কিছু করে যেতে চাইবেন তারা।
১১ জুলাই ফাইনালে কাদের হাতে শোভা পাবে ইউরো শিরোপা? এই মুহূর্তে এটা একশ কোটি টাকার প্রশ্ন। এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন দল প্রাইমমানি পাবে ১ কোটি ইউরো। সে হিসেবে প্রশ্নটাকে ১০০ কোটির টাকার বলাই যায়!