সাবিনাদের জন্য নেই বাফুফের কোনো উপহার!
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:২৫ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:০৩
হিমালয়ের দেশ থেকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নারী দল। তাদের জন্য লাখ লাখ ভক্ত সমর্থকরা ভিড় জমিয়েছিলেন গোটা ঢাকা শহরে। চ্যাম্পিয়নদের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দুই সহসভাপতি ব্যক্তিগতভাবে ৫০ লাখ করে নগদ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তবে যে ফেডারেশন লোগো গায়ে চড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়া জয় করে ফিরছে সাবিনারা, সেই ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে থাকছে না কোনো উপহার। বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন বোর্ড সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
গোটা ঢাকা শহর ছাদখোলা বাসে ঘুরে অবশেষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে পৌঁছেছে সাফ চ্যাম্পিয়নরা। সেখানে বাফুফে কর্মকর্তারা বরণ করে নেন ফুটবলার ও কোচিং কর্মকর্তাদের। বাফুফে ভবনের ভেতর কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে সে সময় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেই সংবাদ সম্মেলন শুরু হতে হতে বেজে যায় রাত ৮টা ৪৫।
সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন মেয়েদের অভিনন্দন জানান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের জন্য। সেইসঙ্গে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এভাবে সমর্থন দেওয়ার জন্য। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রশ্ন আসে বাফুফের পক্ষ থেকে চ্যাম্পিয়নদের জন্য কি পুরস্কার থাকছে? সেই প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, ‘বাফুফের কাছে কোনো টাকা নেই।’
কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘বাফুফে এই মেয়েগুলোর বাবা-মা, মানে পুরো পরিবার। আমরা ওদের ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দেখাশোনা করি। আমরা তাদের এখনও দেখব, ভবিষ্যতেও দেখব। আমরা দেখতেই থাকব। আর ফাইনান্সিয়াল বেনিফিটের যে কথা বলছেন সে ব্যাপারে বলতে চাই যে, আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই। কিন্তু আমরা টাকার ব্যবস্থা করব।’
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ দল দেশে পা রাখার আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এরপর মেয়েদের বিমানবন্দরে বরণ করতে গিয়ে বাফুফে সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারেরে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে, বাফুফে ভবনে অপেক্ষারত সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণা দেন তার স্ত্রী শারমিন সালামের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার।
এ ব্যাপারে বাফুফে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ফেডারেশন দিতে না পারলেও আমাদের দু’জন সহসভাপতি উভয়ই ৫০ লাখ করে মোট ১ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া আরও যে টাকা মেয়েদের জন্য আসবে সেই টাকা একসঙ্গে করে যা হবে সব ৩১ জনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে। এখান থেকে ১০ টাকাও বাফুফে নেবে না। এই পুরো টাকাটা খেলোয়াড়দের দিয়ে দেওয়া হবে। আর এই মেয়েদের আমরা সবসময় সমর্থন দিচ্ছি। আর আপনারাও চাইলে ওদের কাছে প্রশ্ন করতে পারেন যে, ওরা আমাদের নিয়ে খুশি কি না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ও ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এফসি) সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি জানান জাতীয় দলের মেয়েদের উঠে আসা বন্ধুর পথের কথা।
তিনি বলেন, ‘সেই ২০১২ সাল থেকে এই মেয়েদের নিয়ে কাজ শুরু করি আমরা। তখন আমাদের কোনো স্পন্সর ছিল না এবং কোনো টাকাও ছিল। সে সময় আমি এবং প্রেসিডেন্ট (কাজী সালাউদ্দিন) বৈঠক করি যে, মেয়েদের বছরব্যাপী ট্রেনিং ক্যাম্প করতে হবে। তখন প্রেসিডেন্ট বলেন, ট্রেনিং শুরু করো সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সেই সময় থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মেয়েদের জন্য যত খরচ হয়েছে সবই বহন করেছি আমি এবং প্রেসিডেন্ট সাহেব। যেখানে মেয়েদের প্রতিদিন খাওয়ার জন্যই ৩০-৩৫ হাজার টাকার দরকার পড়ে। সেইসঙ্গে মেয়েদের ট্রেনিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিটস এবং সরঞ্জামাদির খরচও আমরা বহন করেছি। ফুটবলকে ভালোবাসি বলেই এই কাজটি করেছি।’
চ্যাম্পিয়ন শিরোপাজয়ী দলের অধিনায়ক সাবিনা বলেন, ‘আমি প্রথমে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। যারা আমাদের এভাবে সম্মাননা জানিয়েছেন। আমি আমার প্রেসিডেন্ট স্যার এবং কিরণ আপা, গোলাম রব্বানী ছোটন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। আমার মনে হয় আমরা যে কষ্ট করেছি, আমাদের পেছনে যে ইনভেস্ট তারা করেছেন আমরা সেই ইনভেস্টের প্রতিদান এনে দিতে পেরেছি। আর এটার জন্য আমরা অনেক গর্বিত। আমাদের লক্ষ্য থাকবে দেশের মানুষকে এমন আরও সুন্দর মুহূর্তে এনে দেওয়ার। দেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আপনারা সবসময় পাশে ছিলেন আর আশা করি সামনেও আমাদের সমর্থন দিতে থাকবেন। আর দোয়া করবেন যেন আমরাও দেশকে আরও শিরোপা এনে দিতে পারি।’
এর আগে, বাফুফে ভবনের ভেতরেই সাংবাদিকদের সানজিদা বলছিলেন, ‘ভাবতে পারিনি ছাদখোলা বাসে আসবে। ছাদখোলা বাসে চড়ে আমরা ভবনে আসব। ঢাকা শহর ঘুরেছি। অনেক ভালো লাগছে। এর জন্য ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও বাফুফেকে অনেক ধন্যবাদ।’
ফেসবুকে নিজের স্ট্যাটাস নিয়ে বলতে গিয়ে হাসিমুখে সানজিদা বলেছেন, ‘আমার স্ট্যাটাস যে এত ভাইরাল হবে, কখনও ভাবিনি। যদিও আমার ফ্যান-ফলোয়ার আছে। তাদের জন্য লিখেছি। আমার মনে হয় না এতদূর এগিয়ে যাবে।’
এরপরই যোগ করলেন, ‘আসলে আমি কেন, আমরা কেউ-ই কখনও ভাবতে পারিনি বাংলাদেশের মানুষ এত ভালোবাসে, আমাদের এভাবে বরণ করে নেবে। প্রায় সবারই এটা প্রথম অভিজ্ঞতা। দেখে অনেক ভালো লাগছে।’
এর আগে, দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য নেপালের উদ্দেশে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ে তখনও প্রত্যাশার পারদ এত বেশি ছিল না। কিন্তু একে একে পাকিস্তান, ভুটান, ভারত ও ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে যখন শিরোপা জিতে বাংলাদেশ তখন থেকেই সবার অপেক্ষার প্রহর শুরু হয়। কবে, কখন আসবে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা— এই অপেক্ষায় বুধবার সকাল থেকেই ভক্তদের অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়। অবশেষে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশে ফেরেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দেশে ফিরেই সাবিনা-সানজিদারা দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দেশবাসীর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
সারাবাংলা/এসএস/পিটিএম
কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ সাফ চ্যাম্পিয়ন সাবিনা খাতুন