বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: আর্জেন্টিনা
১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৭:১৭
আর্জেন্টিনার জন্য দিয়েগো ম্যারাডোনার পর যদি আরেকজন ফুটবল ঈশ্বর থাকেন তিনি হচ্ছেন লিওনেল মেসি। দিয়েগো ম্যারাডোনা একাই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বর্তমান আর্জেন্টিনা দল একতাবদ্ধ হয়ে খেলছে মেসিকে বিশ্বকাপ জেতাতে। কথাটা এই কারণে বললাম, আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা কাপ জেতা সহ গত ৩৫টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে।
এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা একটা অন্য ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে যেহেতু তারা অপরাজিত রয়েছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ। তবে কথা হচ্ছে এই ৩৫টি ম্যাচে যে তারা অপরাজিত রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ২টি ম্যাচে জয় ছিল ব্রাজিলের মত বড় দলের সাথে। এছাড়া ইউরোপীয় কোন পরাশক্তির সঙ্গে তারা কোন ম্যাচ খেলেনি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে ৩-৪ গোলের পরাজয়ের পর তারা প্রায় ৪৫টি ম্যাচ ইউরোপের কোন দলের সঙ্গেই খেলেনি!
আর্জেন্টিনার পক্ষে বেটিং রেট—
১) আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতবে: ১১/২
২) আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাবে: ৬/৪
৩) আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যাবে: ৪/৯
৪) আর্জেন্টিনা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে: ২/৫
৫) মেসি গোল্ডেন বুট জিতবে: ১২/১
আর্জেন্টিনা কতবারের জন্য বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে—
২২তম বারের জন্য হতে যাওয়া বিশ্বকাপে ‘লা আলবিসেলেস্তে’রা ১৭তম বারের জন্য বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। বিগত বিশ্বকাপগুলিতে খেলা ৮১টি ম্যাচের মধ্যে আর্জেন্টিনা ৪৩টি খেলায় জিতেছে এবং ২৩টিতে হেরেছে।
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের আগে কেমন প্রস্তুতি নিয়েছে—
বিশ্বকাপ বাছাই-পর্বে তারা ব্রাজিলের চেয়ে ছয় পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। ব্রাজিল গোল করেছিল ৪০টি আর আর্জেন্টিনা গোল করেছিল ২৭টি। গোল ব্যবধানে ব্রাজিল এগিয়ে ছিল ১৬ গোলে।
কিন্তু এ সব কিছু ছাপিয়ে গেছে আর্জেন্টিনা গত বছর ব্রাজিলকে ব্রাজিলের মাটিতে কোপা আমেরিকা ফাইনালে হারিয়ে দিয়ে। যেটা ছিল আর্জেন্টিনার ১৫তম কোপা আমেরিকা শিরোপা। সেই সাফল্যের পালকে আরেকটি নতুন সাফল্য যোগ হয়েছে এই বছরের জুন মাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ‘ফিনালিসিমা’তে ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইতালিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করার মাধ্যমে।
বিরুদ্ধবাদীদের মুখ বন্ধ করতে এবং নিজ দলের সমর্থকদের খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে বিশেষ করে তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। মেসি যদি এবারও বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হন তবে তিনি আর্জেন্টিনার জন্য ‘ট্র্যাজিডি কিং’ হিসেবেই চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি—
মাত্র ৪৪ বছর বয়সী কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি কি ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতা কোচ কার্লোস বিলার্দো হতে যাচ্ছেন? স্ক্যালোনি আগে কোন ক্লাব বা জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন না। এমন একজনকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর সবাই কিছুটা অবাক হয়েছিল। গত চার বছর তিনি যে সাফল্য অর্জন করেছেন তার অনেকটাই কিছুটা বিলার্দোর মত রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে করেছেন।
তার প্রধান গুণ হল তিনি তার দলকে একটি সুতোয় গাঁথতে পেরেছেন। যারা বেশ শান্ত, একতাবদ্ধ, একে অপরের জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে পারে এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এই মুহূর্তে তারা বেশ উজ্জীবিত একটি দল। তারা সকলেই জানে তাদের নিজ নিজ পজিশনে কার কি দায়িত্ব। হয়তোবা আর্জেন্টিনার আগের দলগুলো এবং তাদের কোচেরা এর চাইতেও বেশি শক্তিশালী বা আক্রমণাত্মক ছিল, কিন্তু সেই তুলনায় তাদের সফলতা ছিল না বললেই চলে।
স্ক্যালোনির প্রাথমিক চুক্তি ছিল ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকা পর্যন্ত যেখানে তারা তৃতীয় স্থান অর্জন করার পরে তাকে আরও দুই বছরের জন্য ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়। তারপর ইতিহাস সাক্ষী তিনি তার দলের হয়ে কি কি করেছেন – ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার শিরোপা এনে দিয়েছেন। তার অধীনে আর্জেন্টিনা আর ৩টি ম্যাচ অপরাজিত থাকলেই ইতালিকে পেছনে ফেলে ৩৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়তে সক্ষম হবে। আর এটা করলেই কাতার বিশ্বকাপে তার দল দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাবে অনায়াসে।
আর্জেন্টিনা ম্যাচের সময়সূচি—
সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের প্রথম ম্যাচ শুরু হবে ২২শে নভেম্বর। দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে মেক্সিকোর সঙ্গে ২৬শে নভেম্বর। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি তারা খেলবে ৩০ শে নভেম্বর পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
প্রধান তারকা—
দলের অধিনায়ক এবং নির্ভরশীলতার প্রতীক লিওনেল মেসি। তিনি ৩৫ বছর বয়সে তার পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন। এখনও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছেন, কিন্তু এটাই তার শেষ সুযোগ। ফলে ব্যক্তিগতভাবে তিনি কিছুটা চাপে থাকতে পারেন। তিনি একটু গতি এবং বিস্ফোরকতা হারিয়েছেন কিন্তু নতুন কোচের অধীনে দলে একটি আরামদায়ক জায়গা পেয়েছেন, যেহেতু তাকে আর আগের মত গোল করার প্রেসার একা নিতে হচ্ছে না। এতে তিনি বেশ খুশি কারণ এটি তাকে চাপমুক্ত হয়ে খেলতে সাহায্য করবে। এটি তার এবং জাতির জন্য মঙ্গলজনক। কোপা আমেরিকা জয় তার কাঁধ থেকে আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ভার তুলে নিয়েছে এবং এখন তিনি বিশ্বকাপ জিততে পারেন এই আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে।
তরুণ তারকা—
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা ২৪ বছরের, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ তার আক্রমণাত্মক খেলার কারণে ‘কসাই ‘ নামে পরিচিত। তিনি প্রাথমিকভাবে একজন সেন্টার-ব্যাক, যদিও লেফট-ব্যাক এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে সক্ষম। বল পায়ে রেখে খেলতে ভালোবাসেন কারণ তার বলের ওপর দখল বেশ ভাল। ২০২১-২২ মৌসুমে ডাচ লীগে গড়ে তিনি সবচেয়ে বেশি বাস দিয়েছিলেন। মার্টিনেজ দক্ষতার সাথে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেছেন এবং তার উচ্চতার অভাব পূরণ করেছেন। তার ক্রমাগতভাবে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের বিরক্ত ও হয়রানি করার অভ্যাস আছে।
ইন্টার মিলানে খেলা ২৫ বছরের স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজ, গত বছরের বিশ্বকাপ শেষ সময় মিস করলেও এ বছর জাতীয় দলের হয়ে আছেন ফর্মের তুঙ্গে। গতিশীল, দ্রুত, চটপটে এবং টেকনিক্যালি প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় ড্রিবলিংয়ের মাধ্যমে অনায়াসে বিপক্ষের সেরা ডিফেন্ডারকে বোকা বানাতে পারেন। পরিশ্রমী এই খেলোয়াড় কিছুটা নিচে নেমে এসেও খেলতে পারেন। উচ্চতায় কিছুটা খাটো হলেও এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোর অভাব মেটানোর জন্য তৈরি।
নেপথ্যের নায়ক—
অনেক বছর ধরে আর্জেন্টিনা তাদের রক্ষণভাগে স্থিতিশীলতা দিতে পারে এমন একজনকে খুঁজছিল। ২৪ বছরের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো কোচের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়া সেই ডিফেন্ডার যার উপর নির্ভর করে দল এখন আক্রমণে মনোযোগী হতে পারবে। রোমেরো এই জায়গায় কোচের আস্থাভাজন হতে পেরেছেন গত বছরের কোপা আমেরিকা থেকে। তিনি বর্তমানে টটেনহ্যাম ক্লাবে খেলছেন। তার আগে ইতালির আটলান্টায় খেলার সময় ২০২০-২১ সালে তিনি ইতালিয় লীগের সেরা ডিফেন্ডার বিবেচিত হয়েছিলেন।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্কোয়াড—
গোলরক্ষক: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরোনিমো রুলি (ভিলারিয়াল), ফ্রাঙ্কো আরমানি (রিভার প্লেট)।
ডিফেন্ডার: নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্টিয়েল (সেভিলা), ক্রিস্টিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম), জার্মান পেজেলা (রিয়াল বেটিস), নিকোলাস ওটামেন্ডি (বেনফিকা), লিসান্দ্রো মার্টিনেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), মার্কোস আকুনা (সেভিলা), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), জুয়ান ফয়েথ (ভিলারিয়াল)।
মিডফিল্ডার: রদ্রিগো ডি পল (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্টাস), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়াল বেটিস), আলেজান্দ্রো গোমেজ (সেভিলা), এনজো ফার্নান্দেজ (বেনফিকা), এক্সকুয়েল প্যালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন)।
ফরোয়ার্ড: অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্টাস), লাউতারো মার্টিনেজ (ইন্টার মিলান), জুইলান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), নিকোলাস গোনাজালেস (ফিওরেন্টিনা), জোয়াকিন কোরেয়া (ইন্টার মিলান), পাওলো দিবালা (এএস রোমা), লিওনেল মেসি (পিএসজি)।
দলের ফর্মেশন—
জিওভানি লো সেলসো, মধ্য মাঠের মূল কারিগর ছিলেন। ভিলারিয়ালের হয়ে খেলার সময় পায়ের পেশী ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন। তার অনুপস্থিতিতে, স্কালোনি ৪-২-৩-১ পদ্ধতির পরিবর্তে ৪-৩-৩ ফর্মেশন অবলম্বন করতে পারেন।
আর্জেন্টিনা সেরা একাদশে কে কে থাকতে পারেন—
গোলরক্ষক: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ,
রাইটব্যাক: নাহুয়েল মোলিনা,
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: নিকোলাস ওটামেন্ডি, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো,
লেফটব্যাক: নিকোলাস তাগলিয়াফিকো,
ডিফেন্সিভ মিড: লিয়ান্দ্রো পেরেদেস, গুইডো রদ্রিগেজ,
মিডফিল্ডার: রদ্রিগো ডি পল, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া,
স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসি এবং লাউতারো মার্টিনেজ।
বর্তমান দলের কে কেমন খেলবেন—
গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার জয়ের দৌড়ে তিনি ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। তিনি প্রতিরক্ষার কাজে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য পরিচিত। ক্লাব দলে ভালো-মন্দের মধ্যে দিয়ে গেলেও, শট-স্টপিং হোক বা বিপদ দূর করার জন্য তার লাইন থেকে নেমে আসা হোক, মার্টিনেজ জাতীয় দলের পক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে খুব কমই ভুল করেছেন।
ফুল-ব্যাক পজিশনে নিকোলাস ট্যাগলিয়াফিকো এবং নাহুয়েল মোলিনার মূল একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ট্যাগলিয়াফিকো আক্রমণ শানানোর জন্য ভালো অবদান রাখবেন। তিনি ওভারল্যাপ করে স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজের সাথে সংযোগ স্থাপন করবেন। পক্ষান্তরে মোলিনা কম আক্রমণাত্মক হলেও ট্যাকলিং ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। এছাড়া সে আক্রমণে যোগ দিলেও, বল হারালে দ্রুত ডিফেন্সে ফিরে আসার সক্ষমতা দেখিয়েছেন।
জিওভানি লো সেলসো ইনজুরির কারণে বাদ পড়লেও দলে আছেন রদ্রিগো ডি পল। ডি পল হয়ত ক্লাবে সেরা মৌসুম কাটাচ্ছেন না, কিন্তু জাতীয় দলে তিনি একজন ভিন্ন খেলোয়াড়। ডিফেন্স এবং অফেন্সের মধ্যে তিনি হচ্ছেন প্রধান সংযোগকারী। তার ডিফেন্স চেরা পাসেই কোপা আমেরিকা ফাইনালে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া জয় সূচক গোলটি করেছিলেন।
ঠিক পলের সাথে স্কালোনির দলে আছেন লিয়েন্দ্রো পেরেদেস এবং গুইডো রদ্রিগেজ, এই দুই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ড দলকে দারুন স্থায়িত্ব এনে দিয়েছেন।
আক্রমণ ভাগ আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় শক্তি। মেসি, ডি মারিয়ারা হচ্ছেন সেই শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। লাউতারো মার্টিনেজ নিয়মিত গোল পাওয়ায় সেই শক্তি আরও বহু গুণে বেড়েছে।
দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা—
আর্জেন্টিনা যে আক্রমণাত্মক প্রতিভা নিয়ে গর্ব করতে পারে তা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে তাদের অন্যতম শক্তির জায়গা। তার সাথে এবার যোগ হয়েছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডিফেন্স লাইন-আপ। আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ এবার বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। একই পজিশনে তাদের একাধিক বিকল্প খেলোয়াড় রয়েছে। ফলে কোচ ইচ্ছে করলে একেক ম্যাচে বিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা অনুসারে বিভিন্ন ফর্মেশনে ডিফেন্ডারদেরকে সাজাতে পারেন। ডিফেন্সের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হচ্ছেন ৩৪ বছরের নিকোলাস ওতামেন্দি, যাকে ইচ্ছে করলেই দলের বাইরে রেখে শক্তিশালী ডিফেন্স সাজাতে পারেন।
রদ্রিগো ডি পল, লিয়েন্দ্রো পেরেদেস এবং গুইডো রদ্রিগেজের তিনজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আছেন বিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করার পাশাপাশি আক্রমণ রচনার ক্ষেত্রেও ভালো ভূমিকা রাখবেন।
গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ তার ক্লাব দলের হয়ে মিশ্র প্রদর্শনী করেছেন এবং যদি তিনি ফর্মে না থাকেন তবে তাদের শেষ রক্ষণ লাইনটিতে সমস্যা হতে পারে।
তাই বলা যায় আর্জেন্টিনা এবার বেশ ব্যালেন্সড একটি দল নিয়েই বিশ্বকাপে যাচ্ছে।
আমার দেখা সেরা-২৩ খেলোয়াড় —
আর্জেন্টিনার সেরা-২৩জন বাছাই করলাম যাদের খেলা সরাসরি টিভিতে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
গোলরক্ষক:
সার্জিও রোমেরো (ম্যাচ: ৯৬। শীর্ষ স্তরের ক্লাবে মাত্র ১৯২টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন তবে জাতীয় দলে বেশ নিয়মিত ছিলেন)।
সার্জিও গয়কোচিয়া (ম্যাচ: ৪৪। ক্লাবগুলোতে খেলেছেন মাত্র ২২৬টি ক্লাব ম্যাচ – ১৯৯০ বিশ্বকাপ হিরোর সার্জিও রোমেরোর মতোই হতাশাজনক ক্লাব রেকর্ড ছিল)।
রক্ষণ ভাগ:
রাইটব্যাক:
জাভিয়ের জানেত্তি (ম্যাচ: ১৪৬ এবং গোল: ৫। খেলেছেন ৭১৪টি ক্লাব ম্যাচ এবং এর মধ্যে ৬১৪টি ম্যাচ খেলেছেন ইন্টার মিলানের হয়ে)। তিনি আমার দেখা আমার সেরা রাইট উইং ব্যাকদের একজন! পাবলো জাবালেতা (ম্যাচ: ৫৮। ক্লাবে ৪৪৮টি ম্যাচ খেলেছেন – ম্যানচেস্টার সিটির সাথে খেলেছেন ২৩০টি ম্যাচ)।
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার:
রবার্তো আয়ালা (ম্যাচ: ১১৬ এবং গোল: ৭। তিনি ৫০১টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন – লা লিগা এবং সেরি-এ তে ৩৭২টি ম্যাচ খেলেছেন, তবে সর্বোচ্চ ১৮৭টি ম্যাচ ভ্যালেন্সিয়ার সাথে ছিল)। ওয়াল্টার স্যামুয়েল (ম্যাচ: ৫৬ এবং গোল: ৫। ক্লাবে ৪৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন – রোমা এবং ইন্টার মিলানের সাথে ২৯১টি ম্যাচ খেলেছেন)। নিকোলাস ওটামেন্ডি (ম্যাচ: ৯২ এবং গোল: ৪। তিনি ৩৪ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দলের খেলছেন। তিনি ৩৫৯টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন – ম্যানচেস্টার সিটির সাথে ১৩৬ ম্যাচ খেলেছেন)।
লেফটব্যাক:
গ্যাব্রিয়েল হেইনজে (ম্যাচ: ৭২ এবং গোল: ৩। ক্লাবে ৩৯৯টি ম্যাচ খেলেছেন – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, মার্সেই ইত্যাদির সাথে ৩৩৭টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে পিএসজির সাথে ৯৯টি ম্যাচ রয়েছে)।
জুয়ান পাবলো সোরিন (ম্যাচ: ৭৫ এবং গোল: ১১। বার্সেলোনা ও পিএসজি সহ ৯টি ক্লাবে ২৮৯টি ম্যাচ খেলেছেন)।
মধ্যমাঠ:
ডিফেন্সিভ মিড:
দিয়েগো সিমিওনে (ম্যাচ: ১০৮ এবং গোল: ১১। ক্লাব পর্যায়ে ৫১৩টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন – ৪০০টি ইতালিয়ান এবং স্প্যানিশ ক্লাবের সাথে খেলেছে এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে সর্বোচ্চ ১৩৪টি ম্যাচ ছিল)। রবার্তো সেনসিনি (ম্যাচ: ৬০। ক্লাবে ৫২৯টি ম্যাচ খেলেছেন – ৩টি ইতালীয় ক্লাবে ৪৫৫টি ম্যাচ খেলেছেন; ২৪০টি এবং ১৯১টি উদিনিসে ও পারমার হয়ে)।
প্লে মেকার:
দিয়েগো ম্যারাডোনা (ম্যাচ: ৯১ এবং গোল: ৩৪। এই কিংবদন্তি ৪৯১টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৫৯টি গোল করেছেন – নাপোলির সাথে ১৮৮টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৮১টি গোল করেছেন)।
লিওনেল মেসি (ম্যাচ: ১৬৪ এবং এবং গোল: ৯০। তার বয়স ৩৫ বছর। তিনি এখনও জাতীয় দল এবং পিএসজির সাথে খেলছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৫৫৯টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন এবং ৪৮৭টি গোল করেছেন – বার্সেলোনার হয়ে ৫২০টি ম্যাচে ৪৭৪টি গোল করেছেন)।
জোয়ান রিকেলমে (ম্যাচ: ৫১ এবং গোল: ১৭। তিনি ৪৪৩টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন এবং ১০৮টি গোল করেছেন – ১৩৬টি ম্যাচ খেলেছেন বার্সেলোনা এবং ভিলারিয়ালের সাথে এবং ৩৯টি গোল করেছেন। কিন্তু তার যোগ্যতার ভিত্তিতে ইউরোপে তেমন সফল ছিলেন না৷ তিনি মাত্র ৩০ বছর বয়সে জাতীয় দল হতে অবসর নেন)৷ জুয়ান ভেরন (ম্যাচ: ৭২ এবং গোল: ৯। তিনি ৮টি ক্লাবে ৫১৫টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন এবং মাত্র ৬৮টি গোল করেছেন – ল্যাজিও, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, ইন্টার মিলান ইত্যাদির সাথে ২৫৫টি ম্যাচ খেলেছেন)৷ রাইট উইঙ্গার: জর্জ বুরুচাগা (ম্যাচ: ৫৭ এবং গোল: ১৩। ক্লাবে ৪৫৬টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ১১৬টি গোল করেছেন – উল্লেখযোগ্যভাবে ১৪০টি ম্যাচ ফরাসি দল নান্তেসের সাথে খেলেছেন এবং ২৭টি গোল করেছেন)৷ ম্যাক্সি রদ্রিগেজ (ম্যাচ: ৫৬ এবং গোল: ১৫। তিনি ৫৫৬টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং লিভারপুল সহ, যেখানে ১৬২টি গোল করেছেন – ২৩২টি লা লিগা ম্যাচে ৫৮টি গোল করেছেন)। লেফট উইঙ্গার: ক্লাউডিও ক্যানিজিয়া (ম্যাচ: ৫০ এবং গোল: ১৬। ৯টি ভিন্ন ক্লাবের সাথে ৩৫৯টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৯৭টি গোল করেছেন – সর্বোচ্চ ১০২টি ম্যাচ ইতালীয় আটলান্টার সাথে খেলেছেন এবং মাত্র ২৭টি গোল করেছেন)। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (ম্যাচ: ১২৩ এবং গোল: ২৫। তার বয়স ৩৪ বছর এবং বর্তমানে জাতীয় দল ও জুভেন্টাসের সাথে খেলছেন। তিনি এ পর্যন্ত ৪৬৫টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি ইত্যাদিতে এবং ৯৫টি গোল করেছেন – রিয়াল মাদ্রিদ এবং পিএসজিতে ১২৪ এবং ১৯৭টি ম্যাচ খেলেছেন)।
স্ট্রাইকার:
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (ম্যাচ: ৭৮ এবং গোল: ৫৬। তিনি ৪৪৪টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৭৮টি গোল করেছেন – ফিওরেন্টিনার সাথে সর্বোচ্চ ২৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৩৪৪টি ম্যাচ ইতালীয় সিরি-এতে খেলেছেন, যেখানে ১৯৯টি গোল করেছেন)। হার্নান ক্রেসপো (ম্যাচ: ৬৪ এবং গোল: ৩৫। ১৫৭টি গোল করেছেন ৪৫৩টি ক্লাব ম্যাচ থেকে – সর্বাধিক ৩৪২ ম্যাচ সেরি-এতে খেলেছেন পারমা, ল্যাজিও, ইন্টার মিলান, এসি মিলান ইত্যাদির সাথে এবং ১৭৩ গোল করেছেন। পারমার হয়ে সর্বোচ্চ ১৬২ ম্যাচ খেলেছেন)।
গঞ্জালো হিগুয়েন (ম্যাচ: ৭৫ এবং গোল: ৩১। তিনি ৩১ বছর বয়সে জাতীয় দল হতে অবসর নেন। ৫২৯টি ক্লাব ম্যাচে ২৭৯টি গোল করেছেন – রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ১৯০টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ১০৭টি গোল করেছেন এবং নাপোলি ও জুভেন্টাসের সাথে ২০৯টি ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে ১১৯টি গোল করেছেন)।
সার্জিও আগুয়েরো (ম্যাচ: ১০১ এবং গোল: ৪১। তিনি ৫০৮টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৮২টি গোল করেছেন। বিশেষত অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং ম্যানচেস্টার সিটির সাথে ১৭৫ এবং ২৭৫টি ম্যাচ খেলা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসআইটি/এসএস
আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দল কাতার বিশ্বকাপ কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ লিওনেল মেসি