Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: অস্ট্রেলিয়া

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
১৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:২৩

অস্ট্রেলিয়া এবারের বিশ্বকাপ খেলবে ‘গ্রুপ-ডি’তে। তাদের‌ প্রতিদ্বন্দ্বীরা ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং তিউনিসিয়া।

বিশ্বকাপের মূল পর্বে অস্ট্রেলিয়ার আসতে বাছাই-পর্বে ২০টি ম্যাচ খেলতে ১০০৮ দিন অতিবাহিত করতে হয়েছে।‌‌ কিন্তু কাতারে তারা উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দেহ আছে। অক্টোবরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার ১৬ জন খেলোয়াড় কাতারের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে একটি ভিডিওতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যার মধ্যে তাদের অধিনায়ক ম্যাথু রায়ানও ছিল। শুধু তাই নয় ফুটবল অস্ট্রেলিয়া, খেলোয়াড়দের‌ ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়ার পেশাজীবী ফুটবলারদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী ও এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের দুর্ভোগের প্রতি নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স—

অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে, তবে প্রথম রাউন্ডের বাঁধা তারা একবারই অতিক্রম করতে পেরেছিল ২০০৬ সালে। সেবার তারা জাপান এবং ক্রোয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে ব্রাজিলের সাথে দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডে তারা ফ্রান্সেসকো টোটির ৯৫ মিনিটে করা গোলে ইতালির সাথে ০-১ গোলে হেরে গিয়েছিল, পরবর্তীতে সেই ইতালি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়লাভ করেছিল।

বিগত বিশ্বকাপগুলোতে তারা সর্বমোট ১৬টি ম্যাচ খেলে ২টিতে জয়, ৪টিতে ড্র এবং ১০টিতে হেরেছিল।‌‌ ২৭টি গোল হজম করার বিপরীতে তারা ১২টি গোল করতে পেরেছিল।

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৯টি ম্যাচ খেলেছেন মার্ক ব্রেসিয়ানো এবং টিম কাহিল।‌‌ ব্রেসিয়ানো খেলেন ৩টি বিশ্বকাপ। আর কাহিল খেলেন ৪টি বিশ্বকাপ। সর্বোচ্চ ৫টি গোল করেন টিম কাহিল।‌

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিপর্ব কেমন হয়েছে—

অস্ট্রেলিয়া এশিয়া অঞ্চলের গ্রুপ-‘বি’তে সৌদি আরব এবং জাপানের পিছনে থেকে তৃতীয় হয়েছিল। গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের ৮ পয়েন্টের ব্যবধান ছিল। ‌‌‌‌‌পরবর্তীতে গ্রুপ-‘এ’র তৃতীয় স্থান অধিকারী আরব আমিরাতের সাথে প্লে-অফ ম্যাচ ২-১ গোলে জিতে পেরুর সঙ্গে সর্বশেষ প্লে-অফটি খেলতে হয় এ বছরের জুনে।‌‌ পেরুর সাথে টাই-ব্রেকারে জয়লাভ করার পর সর্বশেষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে অস্ট্রেলিয়া।

বাছাই-পর্বের ফলাফল আশাব্যঞ্জক ছিল না। কারণ গ্রুপ-‘বি’তে ১০টি ম্যাচ খেলে তারা গোল করতে পেরেছিল মাত্র ৯টি।

এ বছর তারা ৯টি ম্যাচ খেলে ৫টিতে জয় পেয়েছে, ২টিতে ড্র এবং ২টিতে পরাজিত হয়েছে। ২টি ম্যাচ তারা পরাজিত হয়েছে জাপান এবং সৌদি আরবের কাছে। বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করার পর তারা মাত্র ২টি ম্যাচ খেলেছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং ২টিতেই জয়লাভ করেছে।

তার আগে ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিয়ে ছিল আরব আমিরাতের কাছে ০-১ গোলে পরাজিত‌ হবার মাধ্যমে।‌‌‌ ২০১৮ বিশ্বকাপে ডেনমার্কের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর থেকে পরবর্তী ৩০টি ম্যাচের একটিও তারা ইউরোপের কোন দেশের সঙ্গে খেলেনি।

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ সময়সূচি—

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম খেলা ফ্রান্সের সাথে ২৩শে নভেম্বর। ‌‌‌দ্বিতীয় দ্বিতীয় খেলা তিউনিসিয়ার সাথে ২৬শে নভেম্বর। ‌‌‌আর ৩০শে নভেম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ডেনমার্কের সঙ্গে।

কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড—

৫৯ বছরের কোচ গ্রাহাম আর্নল্ডকে কিছুটা লো-প্রোফাইল কোচ বলা যেতে পারে। তিনি বিশ্বকাপ বাছাই-পর্বের এক পর্যায়ে পদচ্যুত হবার উপক্রম হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ২০১৮ সালে যোগ দেওয়ার আগে বিভিন্ন পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার অনুর্ধ-২৩ বা মূল দলের সহকারী এবং কেয়ারটেকার‌ কোচ হিসেবে প্রায় ১৩ বছর যুক্ত ছিলেন।

তার ট্যাকটিকাল জ্ঞান ভালো তবে ২০১৮ সালের পর থেকে চড়াই-উৎরায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফ্রি কিক এবং ট্রানজিশনাল প্লে থেকে গোল করার উপর বেশ সজাগ থাকেন। তবে তাকে কিছুটা ভাগ্যবান বলতে হবে। কারণ যেই আরব আমিরাতের কাছে ২০১৯ এশিয়ান কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এবং পেরুর কাছে গত বিশ্বকাপে ০-২ গোলে‌ পরাজিত হয়েছিল সেই দুই দলকে প্লে-অফ রাউন্ডে বিদায় করে বিশ্বকাপে স্থান করে নিয়েছে। ‌

সেরা তারকা—

২৬ বছরের আজদিন হরস্টিককে এই প্রজন্মের সেরা অ্যাটাকিং মিড-ফিল্ডার হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি এ বছর ইতালির ভেরোনাতে চার বছর চুক্তির মেয়াদে যোগদান করেছেন। যার আগে খেলেছেন জার্মানির আইনট্র্খট ফ্রাঙ্কফুর্ট ক্লাবে, যাদের হয়ে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ২০২২ সালের ইউরোপা লিগ জয় করেছিলেন। তিনি এ পর্যন্ত নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং ইতালির ক্লাবগুলোতে ১০২টি ম্যাচ খেলেছেন। বসনিয়া এবং রোমানিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ থাকলেও তিনি অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নিয়েছেন ২০১৭ সালে। সৃজনশীল মিড-ফিল্ডার হিসেবে তিনি উন্মুক্ত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সেট পিসেও বেশ দক্ষ।‌‌

নেপথ্যের নায়ক—

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জ্যাকসন আরভিন কেমন একটা শিরোনাম হন না, কিন্তু সকলের কাছে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। মধ্য মাঠের বেশ গভীরে তিনি খেলে থাকেন, তথাপিও তিনি সেট পিসে বিপদজনক এবং শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতর আক্রমণে যোগ দিয়ে গোলের সুযোগ আদায় করে নেন। পুরো বাছাই-পর্ব জুড়ে তিনি একজন নির্ভরশীল খেলোয়াড় ছিলেন এবং এই মৌসুমে জার্মানির দ্বিতীয় বিভাগের দল সেন্ট পাওলিতে সহ অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ‌‌২৯ বছরের আরভিন একসময় সেলটিক যুবদলে ছিলেন এবং সেই সুবাদে স্কটল্যান্ডের হিবারনিয়ান ক্লাবে খেলেছেন ২০২১ সালে।‌‌

প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় যারা একসময় উদ্বাস্ত ছিলেন—

অস্ট্রেলিয়া দলে কিছু খেলোয়াড় আছে যারা এক সময় উদ্বাস্তু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৭ বছরের মিড-ফিল্ডার আওয়ার মাবিল, ২৫ বছরের রাইট-ব্যাক টমাস ডেং এবং ১৮ বছরের স্ট্রাইকার গারং কুওল অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন।

লা লিগার কাদিজে খেলা মাবিল‌ কেনিয়ার‌ উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করলেও তার পরিবার আসলে দক্ষিণ সুদান থেকে এসেছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলার সময় মাবিল বলেছিলেন, আমি একটি কুঁড়েঘরে জন্মগ্রহণ করেছি যেটি এখন আমার থাকা হোটেলের চেয়েও যথেষ্ট ছোট ছিল। তিনি এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৮টি গোল করেছেন।

ডেংও মাবিলের মত কেনিয়ার‌ উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করলেও তার পরিবার এসেছিল দক্ষিণ সুদান থেকে।‌‌ মাবিল তাই তার ছোটবেলার বন্ধু। তার অন্য ভাই-বোনেরা আছে উগান্ডাতে। ‌ আরেক ভাই দক্ষিণ সুদানের হয়েও ফুটবল খেলছেন। ডেং ক্লাব ফুটবল খেলছে জাপানে।

কুওলও জন্মগ্রহণ করেছেন মিশরে দক্ষিণ সুদানের উদ্বাস্তু হিসাবে। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। ১৮ বছরের কুওল আগামী জানুয়ারি ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেল ক্লাবে যোগদান করতে যাচ্ছেন।

তাছাড়া এই দলে জায়গা করে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ২৪ বছরের ডিফেন্সিভ মিড-ফিল্ডার কিয়ানু ব্যাকাস যিনি এখন ক্লাব ফুটবল খেলছেন স্কটল্যান্ডের সেন্ট মিরেনে।‌‌

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দল—

গোলরক্ষক: ম্যাথু রায়ান (এফসি কোপেনহেগেন), অ্যান্ড্রু রেডমাইন (সিডনি এফসি), ড্যানি ভুকোভিচ (সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্স)।

ডিফেন্ডার: আজিজ বেহিস (ডান্ডি ইউনাইটেড), বেইলি রাইট (সান্ডারল্যান্ড), থমাস ডেং (আইবিরেক্স নিগাটা), জোয়েল কিং (ওডেনসে বোল্ডক্লাব), নাথানিয়েল অ্যাটকিনসন (হার্টস), ফ্রাঁ কারাসিক (ব্রেসিয়া), হ্যারি সাউটার (স্টোক সিটি), কিয়ে রোলস (হার্টস)।

মিডফিল্ডার: মিলোস ডিজেনেক (কলম্বাস ক্রু), অ্যারন মুয় (সেল্টিক), জ্যাকসন আরভিন (সেন্ট পাওলি), আজদিন হরাস্টিক (হেলাস ভেরোনা), ক্যামেরন ডেভলিন (হার্টস), রিলি ম্যাকগ্রি (মিডলসব্রো), কিয়ানু ব্যাকাস (সেন্ট মিরেন)।

ফরোয়ার্ড: আওয়ার মাবিল (ক্যাডিজ), ম্যাথিউ লেকি (মেলবোর্ন সিটি), মার্টিন বয়েল (হাইবারনিয়ান), জেমস ম্যাক্লারেন (মেলবোর্ন সিটি), জেসন কামিংস (সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্স), মিচেল ডিউক (ফ্যাগিয়ানো ওকায়ামা), গারং কুওল (সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্স) এবং ক্রেইগ গুডউইন (অ্যাডিলেড ইউনাইটেড)।

সম্ভাব্য একাদশ—

গোলরক্ষক: ম্যাথু রায়ান;

রাইটব্যাক: নাথানিয়েল অ্যাটকিনসন;

ডিফেন্ডার: হ্যারি সাউটার, বেইলি রাইট;

লেফটব্যাক: আজিজ বেহিস;

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: জ্যাকসন আরভিন;

মিডফিল্ডার: অ্যারন মুয়, আজদিন হরাস্টিক, আওয়ার মাবিল;

ফরোয়ার্ড: মার্টিন বয়েল এবং জেমস ম্যাক্লারেন।

দলের শক্তিমতা ও দুর্বলতা—

যদি ইউরোপীয় ফুটবলে খেলার কথা বলি, তাহলে এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হচ্ছে তাদের গোলকিপার, ম্যাথু রায়ান। তার বেলজিয়ামের ক্লাব ব্রুগস‌ ও ইংল্যান্ডের ব্রাইটন প্রভৃতি ক্লাবে ২৩১টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তাদের ডিফেন্স লাইনটির গড় বয়স ২৫.৮ বছর। দলের সবচেয়ে বর্ষীয়ান ডিফেন্ডার হচ্ছেন লেফট ব্যাক আজিজ বেহিচ, যার বয়স ৩১ বছর কিন্তু ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫৩টি। ডিফেন্ডাররা গড়ে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৬.৮টি।‌‌ তাই এ দলটির ডিফেন্ডারদের অভিজ্ঞতা, বয়স এবং ম্যাচ সংখ্যা যেমনি কম তেমনি উঁচু দরের ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতাও বেশ কম। তাই আমার দৃষ্টিতে ডিফেন্স খুব দুর্বল।

দলে ৪ জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকলেও ২ জন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা জাতীয় দলে মাত্র ১টি করে ম্যাচ খেলেছেন। দলের মূল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জ্যাকসন আরভিন ছাড়া আরেকজন আছেন, মিলোস ডেজেনেক যিনি রাইট-ব্যাক ও সেন্টার-ব্যাকেও খেলতে পারেন। ডেজেনেক শীর্ষ সারির কোন ইউরোপের ক্লাবে না খেললেও রেডস্টার বেলগ্রডে ২০১৮-২০২২ সালে ৭৯টি ম্যাচ খেলেছিলেন।

মধ্য মাঠ ডিফেন্সের চাইতে কিছুটা ভালো বলা যাবে এই কারণে যে কিছু খেলোয়াড়দের যেমন, অ্যারন মুয় ও জ্যাকসন আরভিনদের অল্প বিস্তর হলেও ইংল্যান্ড বা জার্মানির মতো লীগে প্রথম (প্রিমিয়ার লিগ) ও দ্বিতীয় বিভাগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আজদিন হরস্টিক‌ এবং আওয়ার মাবিলের মত তরুণ, দক্ষ ও ইউরোপের শীর্ষ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় যোগ হওয়ায় মিডফিল্ডের শক্তি বেশ খানিকটা বেড়েছে।

স্ট্রাইকিং লাইন আপে টিম কাহিল বা হেরি কেওয়েলের মত প্রতিভাবান খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ায় এই মুহূর্তে নেই। এশিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই-পর্বে জাপান ও সৌদি আরবের সঙ্গে ৪টি ম্যাচ খেলে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১টি গোল করতে পেরেছে যেখানে তারা হজম করেছে ৫টি গোল। ওই ৪টি ম্যাচে তারা ৩টিতেই হেরেছে আর ড্র করেছে কেবলমাত্র ১টি ম্যাচে।

দলের ফর্মেশন ও কৌশল কি রকম হতে পারে—

অস্ট্রেলিয়া মূলত ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে খেললেও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শেষ দুটি প্লে-অফ ম্যাচে পেরুর সাথে ৪-১-৪-১ পদ্ধতিতে খেলেছে। ওই দুটো পদ্ধতিতে ২ জন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারদের খেলতে দেখা গিয়েছে। তবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে ফ্রান্স এবং ডেনমার্কের মত দলের সাথে রক্ষণাত্মক পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখা যেতে পারে।

এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা—

অস্ট্রেলিয়া টানা পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করলেও ২০০৬ সালে পর থেকে আর তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারেনি। এবার তাদের গ্রুপের প্রবল প্রতিপক্ষ হচ্ছে গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং সর্বশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালিস্ট ডেনমার্ক।‌

গত ২০১৮ বিশ্বকাপেও ফ্রান্স এবং ডেনমার্ক অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একই গ্রুপে ছিল। সেখানে ফ্রান্সের সঙ্গে ন্যূনতম ১-২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হলেও ডেনমার্কের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। তবে সেবার তারা শেষ পর্যন্ত পেরুর কাছে ০-২ গোলে পরাজিত হয়েছিল। এবারের গ্রুপে পেরুর পরিবর্তে তিউনিসিয়া থাকলেও ফিফা র‍্যাঙ্কিং-এ তিউনিসিয়া অস্ট্রেলিয়ার চেয়েছে এগিয়ে গেছে আট ধাপ।‌‌ তবে আমার কাছে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে তিউনিসিয়া পেরুর চাইতে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় এই সুযোগটা বেশি কাজে লাগাবে ফ্রান্স এবং ডেনমার্ক। তাই অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার সম্ভাবনা এবারও বেশ কম।

আমার দেখা অস্ট্রেলিয়ার সেরা ১৪ খেলোয়াড়—

অস্ট্রেলিয়ার বিগত বিশ্বকাপ গুলিতে খেলা খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে গঠিত ‘সেরা একাদশ’ (অতিরিক্ত সহ আছে ১৪ জন) আমার পছন্দের ঐতিহাসিক ৪-৪-২ ফর্মেশনের পরিবর্তে ৩-৫-২ পদ্ধতিতে (যেটা ক্ষেত্র বিশেষে ৫-৩-২ পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হবে) করা হল।

গোলরক্ষক:- মার্ক শোয়ার্জার (ম্যাচ: ১০৯; ইংলিশ লীগে খেলেছেন ৫৬১টি ম্যাচ যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬৬টি ম্যাচ খেলেছেন মিডলসব্রোতে আর ফুলহামে ১৭২টি ম্যাচ)।

রক্ষণ ভাগ: লুকাস নিল (ম্যাচ: ৯৬, গোল: ১; ইংল্যান্ড এবং তুরস্কের টপ লীগে খেলেছেন ৩১৮টি ম্যাচ, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮৮টি ম্যাচ খেলেছেন ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সে)।

ক্রেগ মুর (ম্যাচ: ৫২, গোল: ৩; স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে খেলেছেন ২২৩টি ম্যাচ, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭৪টি ম্যাচ খেলেছেন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো রেঞ্জার্স ক্লাবে)।

টনি পপোভিচ (ম্যাচ: ৫৮, গোল: ৮; ইংল্যান্ডের ক্রিস্টাল প্যালেসে খেলেছেন ১২৩টি ম্যাচ)।

মধ্যমাঠ:- মাইকেল জেডিনাক (ম্যাচ: ৭৯, গোল: ২০; মধ্য-মাঠের এই রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়টি‌ ইংলিশ লীগে খেলেছেন ২৩৫টি ম্যাচ, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬৫টি ম্যাচ খেলেছেন ক্রিস্টাল প্যালেসে আর অ্যাস্টন ভিলাতে ৭০টি ম্যাচ)।

ব্রেট এমার্টন (ম্যাচ: ৯৫, গোল: ২০;‌ ডাচ ও ইংলিশ লীগে খেলেছেন ৩৩৯টি ম্যাচ এবং গোল করেছেন ২৪টি। হল্যান্ডের ফেইনুর্ডে ৯২টি ও ইংল্যান্ডের ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সে খেলেছেন ২৪৭টি ম্যাচ। ডান পায়ের এই খেলোয়াড় প্রয়োজনে রাইট-ব্যাক হিসেবেও খেলবেন)।

স্কট চিপারফিল্ড (ম্যাচ: ৬৮, গোল: ১২;‌ সুইজারল্যান্ডের এফ.সি বাসেলে খেলেছেন ২৬৯টি ম্যাচ এবং গোল করেছেন ৬৯টি। বাম পায়ের এই খেলোয়াড় প্রয়োজনে লেফট-ব্যাক হিসেবেও খেলবেন)।

মার্ক ব্রেসিয়ানো (ম্যাচ: ৮৪, গোল: ১৩;‌ বাম পায়ের এই উইঙ্গারটি ইতালিয়ান লীগে খেলেছেন ৩৩০টি ম্যাচ এবং গোল করেছেন ৪৮টি – যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৩টি ম্যাচ খেলেছেন পার্মাতে এবং ১০৭টি খেলেছেন পালেরমোর হয়ে)।

হ্যারি কেওয়েল (ম্যাচ: ৫৮, গোল: ১৭; ইংল্যান্ড এবং তুরস্কের টপ লীগে খেলেছেন ৩৩৭টি ম্যাচ এবং গোল করেছেন ৭৯টি। ইংল্যান্ডের লিডস ইউনাইটেড এবং লিভারপুলে খেলেন ১৮১ ও ৯৩টি ম্যাচ যথাক্রমে)। তিনি হচ্ছেন আমার কাছে অস্ট্রেলিয়ার সর্বসেরা‌ খেলোয়াড়।

স্ট্রাইকার:- টিম কাহিল (ম্যাচ: ১০৮, গোল: ৫০;‌ তিনি ইংল্যান্ডের এভারটনে ২২৬টি ম্যাচে ৫৬টি গোল করেন)।

মার্ক ভিদুকা (ম্যাচ: ৪৩, গোল: ১১;‌ স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে খেলেছেন ২৭৭টি ম্যাচ এবং গোল করেছেন ১২২টি। সর্বোচ্চ ১৩০টি ম্যাচ খেলেছেন লিডস ইউনাইটেডে এবং‌ মিডলসব্রোতে ৭২টি ম্যাচ)।

অতিরিক্ত: রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার, মার্ক মিলিগান (ম্যাচ: ৮০ & গোল: ৬;‌ ইউরোপের টপ টায়ার লীগের মধ্যে স্কটল্যান্ডের হিবারনিয়েনে খেলেছেন মাত্র ২৮টি ম্যাচ)।

মিডফিল্ডার, টম রজিক (ম্যাচ: ৫৩, গোল: ১০;‌ ২৯ বছরের এই খেলোয়াড় এখনো জাতীয় দলের খেলছেন এবং তার বর্তমান ক্লাব হচ্ছে ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট ব্রমউইচ। তিনি স্কটল্যান্ডে সেলটিকের হয়ে ১৭৮টি ম্যাচে ৩২টি গোল করেছেন)।

স্ট্রাইকার: জন অ্যালোইসি (ম্যাচ: ৫৫, গোল: ২৭;‌ স্প্যানিশ লীগে ১৭৯টি ম্যাচে ৪৫টি গোল করেন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১২১টি ম্যাচ খেলেন ওসাসুনার হয়ে। এছাড়া ইংল্যান্ডে ১০১টি ম্যাচে ৩৬টি গোল করেন)।

সারাবাংলা/এসআইটি/এসএস

অস্ট্রেলিয়া কাতার বিশ্বকাপ কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ দল পরিচিতি ফুটবল বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর