ভারতের বিপক্ষে হারে শুরু বাংলাদেশের
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:২৬ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:৪২
আগের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, এবারের শুরুটাও হলো সেখান থেকেই। গত আসরের সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। আজ (বৃহস্পতিবার) দুবাইয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শুরুটা হলো সেই ভারতের কাছে হেরে। বাংলাদেশের দেয়া ২২৯ রানের লক্ষ্য ভারত টপকে গেছে শুবমান গিলের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে।ব্যাটারদের জন্য কঠিন উইকেট হলেও সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটের জয়ে আসর শুরু করল ভারত।
২২৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে পুরো ৫০ ওভারও লাগেনি ভারতের। শুরুতে রোহিত শর্মার ধুন্দুমার ব্যাটিংয়ের পর গিলের অপরাজিত সেঞ্চুরি আর লোকেশ রাহুলের ৪১* রানের ইনিংসে ৪৬.৪ ওভারে মাত্র ৪ উইকেটে সহজ জয় পেয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ লড়াইয়ের এই পুঁজিটুকুও পেত না, যদি তাওহিদ হৃদয় আর জাকের আলী অনিক রেকর্ড না গড়তেন। ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ১৫৪ রান তুলে নাম লিখিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে। রেকর্ড গড়া সেই জুটির পর জাকের ফিরলেও ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পান হৃদয়। পায়ে ক্র্যাম্প হলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছুঁয়ে ফেলেন নিজের প্রথম সেঞ্চুরি, তাও দলের দুঃসময়ে।
হৃদয়ের মানরক্ষার সেই সেঞ্চুরিতে কোনোভাবে ২০০ পেরিয়ে গেলেও সেই পূঁজি যে ভারতের মতো দলের বিপক্ষে যথেষ্ট না, সেটা ভারতের দুই ওপেনার বুঝিয়ে দিলেন শুরুতেই। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দুজন মিলে গড়েন ৬৯ রানের জুটি। তাসকিনের বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সাত চারে ৩৬ বলে ৪১ রান করেন রোহিত। তিনে নেমে কোহলিও খেলেন দেখেশুনে। যদিও ইনিংস খুব বেশি বড় করতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। রিশাদের বলে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
রিশাদ আজ দারুণ বল করেছেন, ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। তার দ্বিতীয় শিকার অক্ষর প্যাটেল। অবশ্য অক্ষরের আগে মোস্তাফিজের স্লোয়ারে কভারে ক্যাচ দেন শ্রেয়াস আইয়ার। ভারতের ব্যাটিং অর্ডারকে যা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে সেটা তখনই। এরপর আর কোনো বিপদই হতে দেননি ছয়ে নামা লোকেশ রাহুল আর গিল। ৯৮ বলে ৮৭* রানের জুটি গড়েন দুজন।
এই জুটির পথেই নিজের অষ্টম, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম আর টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন গিল। ইনিংসের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলেন তিনি। ১২৯ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ১০১ রানে। বলের হিসেবে এটিই তার সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ রানেই পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এক তানজিদ তামিম ছাড়া শুরুতেই ভারতের বিপক্ষে ব্যর্থ টপ অর্ডারের বাকিরা। সেই তানজিদের পর মুশফিককে ফিরিয়ে অক্ষর প্যাটেল জাগালেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। জাকের আলীর ক্যাচটা ধরতে ধরতেও ফেলে দিলেন রোহিত শর্মা। জীবন পেলেন জাকের। সেটা কাজেও লাগালেন দুর্দান্তভাবে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে তাওহিদ হৃদয়ের সাথে গড়েন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিরই ১৫৪ রানের রেকর্ড জুটি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি ছিল মার্ক বাউচার ও জাস্টিন কেম্পের। ২০০৬ সালের আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩১ রানের জুটি গড়েম দুজন। মোহালির সেই ম্যাচে ৪২ রানে পাঁচ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে বাউচার-কেম্প মিলে দলকে টেনে নিয়ে যান ১৭৩ পর্যন্ত।
আজ আরও বাজে অবস্থা থেকে দলের রেকর্ড জুটি গড়লেন হৃদয়-জাকের। ৩৫ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারানোর পর দুজন শুরু করেন ডিফেন্সিভ ব্যাটিং। ভারতের তিন স্পিনার কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল আর রবীন্দ্র জাদেজাকে সামলেছেন বেশ দক্ষতার সাথে। যদিও তাদের স্পিন-টার্নে বেশ ভুগেছেন দুজন, তবুও উইকেট দেননি। হৃদয় অবশ্য হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দেন নিজের ফিফটি ছোঁয়ার আগে। তবে হার্দিক সেই ক্যাচ মিস করায় তখন জীবন পাওয়াতে আরও সাবধানী ব্যাটিং করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
জাকের ছিলেন আরও সাবধানী। ২০৬ বল দৈর্ঘ্যের এই জুটিতে জাকের একাই খেলেছেন ১১৪ বল। নিজের দ্বিতীয় ফিফটি ছোঁয়ার পর আউট হয়েছেন মোহাম্মদ শামির ২০০ তম ওয়ানডে শিকার হয়ে। তাকে তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৬৮ রানে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ভাঙে সেই রেকর্ড জুটি।
শুধু চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই নয়। ভারতের বিপক্ষে যেকোনো দলের ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিও এখন হৃদয়-জাকেরের দখলে। একইসাথে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটেও সর্বোচ্চ রানের জুটি এখন এটি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল জাকের আলী আর মাহমুদউল্লাহর দখলে। ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৫০ঁ রানের জুটি গড়েন তারা। এর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি ছিল ৫০ রানের। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত মিলে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গড়েন সেই জুটি।
জাকের ফিরলেও সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়েন হৃদয়। ১১৮ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ১০০ রানের ইনিংস। হৃদয়-জাকেররে রেকর্ড গড়ার দিনে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন শামি। ১০ ওভারে ৫৩ রানে পাঁচ উইকেট নেন এই ডানহাতি পেসার।
সারাবাংলা/জেটি
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ তাওহিদ হৃদয় নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শুবমান গিল