বাংলাদেশের নায়িকাদের দুষলেন ভারতীয় প্রযোজক অশোক ধানুকা
৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩৩
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
অশোক ধানুকা, পশ্চিম বাংলার অন্যতম প্রভাবশালী সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের কর্ণধার। পশ্চিম বাংলায় সিনেমা প্রযোজনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সিনেমা প্রযোজনা করে আসছে। সহযোগী হিসেবে তারা পাশে পেয়েছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়াকে। একসঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটি নির্মাণ করেছেন ‘শিকারী’, ‘আশিকী’ ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’, ‘চালবাজ, ‘ভাইজান এলো রে’ সহ বেশিকিছু সিনেমা।
এদিকে সম্প্রতি এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি আর কোন যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ করবেনা। কিন্তু কেনো? সিনেমা মুক্তিতে বাধা থেকে শুরু করে জাজ মাল্টিমিডিয়ার অসহযোগীতার অভিযোগ এনছেন এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা। এছাড়া এখানে জড়িত রয়েছে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি। সেসব দ্বন্দ্ব আর অন্তরালের নানা কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।
- ‘এসকে ইন্টারন্যাশনাল’ যাত্রা শুরু করার প্রথমেই থেমে গেলো। আপনি বিভিন্ন বাধার কথা বলেছেন। এই বাধাগুলোর কথা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাই।
বাংলাদেশের অনেকে চাইছেন না যে, আমি ওখানে গিয়ে ব্যবসা করি। সিনেমা বানানো থেকে শুরু করে মুক্তি দেয়া পর্যন্ত অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। ধরুন, ‘চালবাজ’ মুক্তি দেয়ার কথা ছিল গত মার্চ মাসে। কিন্তু অনুমতি পেতে সময় লেগে যাচ্ছিল। এভাবে দেরি হতে হতে আমি রমজানের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে ছবি রিলিজ করলাম। যাক তবুও রিলিজ করতে পেরেছিলাম। এরপর চেয়েছিলাম ‘ভাইজান এলো রে’ রিলিজ করতে। তখন কোর্ট থেকে নির্দেশনা আসলো, উৎসবে ভিনদেশি সিনেমা রিলিজ করা যাবেনা। সেজন্য আমি সিনেমাটি রিলিজ করতে পারলাম না। ছবিটা দেড় মাস পরে মুক্তি পেয়েছে। কলকাতায় আগে মুক্তি পেল, তারপর বাংলাদেশে।
আরও পড়ুন : আইনি নোটিশ হাতে পেলেন তনুশ্রী দত্ত
- আপনি বলেছেন ‘এসকে ইন্টারন্যাশনাল’ থাকবে। পাঁচ বছর পর ভেবে দেখবেন কি করা যায়! এই পাঁচ বছরের পরিকল্পনাটা কি? কিভাবে এগোতে চান?
এখনো সেভাবে কোন পরিকল্পনা করিনি। আপাতত এটা নিয়ে কোন ভাবনা চিন্তা করছিনা। তবে এটা চূড়ান্ত যে, এখন বাংলাদেশে কোন সিনেমা করবো না।
- এসকে মুভিজ চাইলে তো ভিন্ন নামে সিনেমা প্রযোজনা করতে পারত!
এটার কোন দরকার মনে করিনা। আমি আমার আসল প্রতিষ্ঠানের নামে সবাইকে জানিয়েই করতে চাই। আমি কাজের বেলায় শতভাগ সৎ থাকতে চাই। কোন দুই নম্বরির মধ্যে আমি থাকতে চাইনা।
- এসকে মুভিজ নব্বই দশকেও বাংলাদেশের সঙ্গে সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। পরবর্তীতে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ সিনেমার মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেছেন। কোন ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে এসকে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণে আগ্রহী হলো?
আব্দুল আজিজকে আমার ভালো লেগেছিল। তাকে আমার ভালো লোক মনে হয়েছিল। সে সৎ একজন প্রযোজক। সেজন্য আমি এখন পর্যন্ত ১২ টি সিনেমা আব্দুল আজিজের সঙ্গে যৌথভাবে করেছি। এসব ছবিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে আমার দুটি সিনেমায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে। দুই দেশের সিনেমার উন্নয়ন করতে। এটা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি আমাকে সরে আসতে বাধ্য করল।
- যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলোর ব্যবসায়িক সফলতা কেমন ছিল?
সব সিনেমাই ভালো চলেছে। খারাপ চললে বা লোকসান হলে আমি আর সিনেমা বানাতাম না। তবে ‘ভাইজান এলো রে’ ও ‘চালবাজ’ সিনেমা থেকে টাকা তুলতে পারিনি। লোকসান হয়েছে।
- আপনি অভিযোগ করেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়া আপনার সিনেমা চালাতে আপত্তি তুলেছিল। বিষয়টি আসলে কি ?
জাজ মাল্টিমিডিয়া ‘ভাইজান এলো রে’ সিনেমাটি প্রদর্শনে আপত্তি করেছিল। অনেক অনুরোধ করে সিনেমাটি রিলিজ করেছি। খুব খারাপ লেগেছে বিষয়টিতে। ছবিটি শুক্রবার মুক্তি পাবে কিনা আমি জানতাম না! আমাকে বুধবার জানানো হয় যে, শুক্রবারে মুক্তি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন : প্রথমবারের মতো একসঙ্গে আদিত্য-তাপসী পান্নু
- তাহলে এটা নিশ্চিত, জাজের সঙ্গে এসকে মুভিজের দ্বন্দ্ব চলছে। তাই নয় কি?
আমি সবসময় একজন লোকের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ পছন্দ করি। কিন্তু জাজ মাল্টিমিডিয়া সবার সঙ্গে একাই কাজ করতে চায়। যতো প্রযোজক বাড়বে ততো মার্কেট ভালো হবে। প্রযোজক কম আসুক-এটা আমি কোনদিন চাইনি। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সিনেমা তৈরী হবে। যদি একটি লোক ছবি বানায়, তাহলে ছবি ভালো হবেনা। আমি আমার মতো, আপনি আপনার মতো ছবি বানালে সিনেমার ভিন্নতা থাকবে। কলকাতার সব প্রযোজকের সঙ্গে জাজ একাই কাজ করবে এটা ঠিকনা। এটা নিয়ে জাজের সঙ্গে আমার সমস্যা তৈরী হয়।
- জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে যে ক’টি সিনেমা বানিয়েছেন তাতে এসকে মুভিজ কতো শতাংশ অর্থলগ্নি করেছে?
এটা আমাদের ভেতরকার ব্যাপার। খোলাখুলি বলতে পারব না। এটা ব্যবসায়িক বিষয়। ডিটেইল বলাটা অনৈতিক হবে। আমি চাইনা বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে।
- বাংলাদেশে সিনেমা সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়েছে। নিশ্চয়ই পর্যবেক্ষণও করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের সিনেমার ভবিষ্যৎ কি?
পশ্চিম বাংলায় যে সকল সিনেমা নির্মাণ হয় সেগুলো খুবই উঁচু স্তরের। উঁচু স্তর বলতে, এখানে টেকনিক্যাল দিক থেকে সেট ডিজাইন, আর্ট ডিরেকশন সবকিছুতে মান বজায় থাকে। বাংলাদেশের সিনেমায় এমনটি দেখা যায় না। আমি বাংলাদেশে গিয়ে দেখলাম, একজন প্রযোজক আসা মানে লোকদের খাবার জুটে গেল। বাংলাদেশে সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে হবে। একটি সিনেমা হলে টিকিট বিক্রি হচ্ছে একশো টাকার ওপরে, সেখানে প্রযোজক ঠিকমতো টাকা পায় না। সরকারকেও সিনেমার প্রতি সু-নজর দিতে হবে। যতোদিন না এসব ঠিক হবে ততদিন বাংলাদেশের সিনেমা উন্নতি করবে বলে মনে হয় না। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে একসময় বাংলাদেশের সিনেমা শেষ হয়ে যাবে।
- প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়াকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জাজ মাল্টিমিডিয়াই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা বাংলাদেশে সিনেমা করছে। তারা ভালো করছে। আরও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আসা দরকার। এখন সেলিম খান সিনেমা বানাচ্ছেন। এটা ভালো খবর।
আরও পড়ুন : ‘জাজের সার্ভার বন্ধ হয়ে গেলে বাংলা চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে যাবে’
- পশ্চিম বাংলায় শাকিব খানের পরিচিতি কেমন?
আমি যখন শাকিব খানকে নিয়ে ‘শিকারী’ করি তখন পশ্চিম বাংলার মানুষ তাকে চিনত না। ওর মধ্যে অনেক প্রতিভা রয়েছে। বলিউডে যেমন সালমান খান রয়েছেন, বাংলাদেশের তেমনি শাকিব খান রয়েছেন। শাকিব যদি পশ্চিম বাংলায় নিয়মিত সিনেমা করতেন তাহলে অনেক ভালো করতে পারতেন।
- বাংলাদেশের নায়িকাদের নিয়ে কাজ করেছেন। কেমন মনে হয়েছে তাদের? কতটা সম্ভাবনাময়ী তারা?
বাংলাদেশের নায়িকারা দায়িত্বশীল না। অনেক নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু তাদের মধ্যে এটা দেখলাম না। তবে শাকিব-রোশানদের মধ্যে প্রচুর ডেডিকেশন ছিল। একটি সিনেমা করতে একজন নায়িকার মধ্যে যতোটা ডেডিকেশন থাকা দরকার ততোটা দেখিনি। ভালো করতে হলে অবশ্যই কাজের ক্ষেত্রে ডেডিকেশন লাগবেই। এটা ছাড়া এগোনো সম্ভব না।
ছবি:ইন্টারনেট
সারাবাংলা/আরএসও/টিএস
আরও পড়ুন :
আন্তর্জাতিক মুক্তির দিনেই বাংলাদেশে ‘ভেনম’
দেবী’র আনকাট সেন্সর, মুক্তি ১৯ অক্টোবর
হাতিরঝিল মঞ্চে ‘ওয়াটারনেস’
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মঞ্চে ‘গ্যালিলিও’
পুরস্কার নিজের কাছেই রাখছেন প্রকাশ রাজ
আরো দেখুন :
সারাবাংলা’য় আড্ডা। অতিথি : শিমুল মুস্তাফা। উপস্থাপনা : পলাশ মাহবুব