এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
গেল বছরের অক্টোবর মাসে শিরোনামহীন ব্যান্ড থেকে বের হয়ে যান দলটির ভোকাল তানযীর তুহিন। তার আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত অবাক করে দেশের ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদের। পরবর্তীতের ‘শিরোনামহীন’-এর দলনেতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বেশ সমালোচিতও হন বাংলা রক মিউজিকের জনপ্রিয় এই গায়ক।
‘শিরোনামহীন’ থেকে বের হয়ে ‘আভাস’ নামে একটি ব্যান্ড গড়েন তুহিন। সেখান থেকে ‘মানুষ’ শিরোনামে একটি গানও উপহার দেন তিনি। তবে বিপত্তি বাঁধে মঞ্চে গান গাওয়া নিয়ে। নিজেদের নতুন গানের সঙ্গে এতোদিন ধরে ‘শিরোনামহীন’-এর কয়েকটি গানও পরিবেশন করে আসছিলেন তুহিন। যা সম্প্রতি বেআইনি ঘোষণা করেছে কপিরাইট বোর্ড।
শিরোনামহীনের সদস্যরা কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করেন, দলটির জনপ্রিয় গানগুলোকে বানিজ্যিকভাবে মঞ্চে পরিবেশন করে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন তুহিন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কপিরাইট অফিসের রেজিস্টারার জাফর রাজা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে তুহিনের গলায় মঞ্চে ‘শিরোনামহীন’-এর গান পরিবেশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বোর্ড।

শিরোনামহীন: বর্তমান
কপিরাইট অফিসের রেজিস্টারার জাফর রাজা চৌধুরী সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘শেষ দুটো শুনানিতে তুহিন নিজেও উপস্থিত ছিলেন। শিরোনামহীনের গানগুলো মঞ্চে পরিবেশন করার ব্যাপারে আমরা তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। কারণ সে যে কাজটি করছিলো সেটি বেআইনি।’
সারাবাংলার কাছে তানযীর তুহিন নিজেও খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন। তুহিন বলেন, ‘রায়ের কাগজ আমার কাছে এসেছে। আমি নিজেও শুনানিতে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু রায় আমার পছন্দ হয়নি। আমি আপিল করবো। আমাদের দেশে ভোকাল রাইট নেই। এছাড়া এখানে কিছু টাকা-পয়সার লেনদেনের ব্যাপারও রয়েছে। এখন নতুন করে একটা বোর্ড হবে। সেখান থেকেই হয়তো সঠিক রায়টি পাওয়া যাবে।’
আরও পড়ুন : শহীদ মিনারে সাইদুল আনাম টুটুলকে শেষ শ্রদ্ধা
‘শিরোনামহীন’-এর পক্ষে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘তুহিন ও তার নতুন ব্যান্ডকে আমরা সবসময় শুভকামনা জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আমাদের অনুরোধ ছিলো সে যেন আমাদের গানগুলো মঞ্চে না করে। সে অনুরোধটি রাখেনি। এখন তার এই কাজটিকে বেআইনি বলে কপিরাইট বোর্ড রায় দিয়েছে। আমরা রায়ে খুশী। আশা করছি তুহিন কপিরাইট বোর্ডের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।’
উল্লেখ্য, কপিরাইট অফিসে অভিযোগের পুর্বে বিষয়টি সামাজিক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক এসোসিয়েশন [বামবা] উভয় পক্ষ কে ডাকলে তুহিন নিজেও কিছু অভিযোগ তোলেন। ফলে সামাজিক নিস্পত্তির বিষয়টি বিপন্ন হয়।

শিরোনামহীন: অতীত
এ ব্যাপারে বামবা সভাপতি হামিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদেরকে প্রথমে একসঙ্গে থাকতে অনুরোধ করেছিলাম। সেটা তারা রাখেনি। পরে তুহিনকে বলেছি তার সুর করা গানগুলো মঞ্চে গাইলে কোন সমস্যা নেই কিন্তু দলটির অন্য সদস্যদের কথা ও সুরের গান যেন সে না গায়। কারণ কপিরাইট আইন সেটাকে নিষেধ করে। আমি এটা তাকে আগেই বলেছিলাম।’
শিরোনামহীন অভিযোগ করে আসছিলো তানযীর তুহিন কোনো লিখিত অনুমতিপত্র পেশ না করে এতোদিন শিরোনামহীনের অন্য সদস্যের কথা, সুরের জনপ্রিয় গান গুলো পরিবেশন করে আসছিলেন। যেখানে ‘হাসিমুখ’, ‘বন্ধ জানালা’, ‘পাখি’, ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’ গানগুলোর গীতিকার ও সুরকার জিয়াউর রহমান। ‘ক্যাফেটেরিয়া’ গানের গীতিকার জিয়াউর রহমান, সুরকার যৌথভাবে জিয়াউর রহমান, ফারহান এবং তুষার। ‘নিশ্চুপ আঁধার’ যৌথ গীতিকার জিয়াউর রহমান, ফারহান এবং সুরকার জিয়াউর রহমান, তুষার। কপিরাইট আইন অনুযায়ী গানের কপিরাইট মালিকানা সবসময় গীতিকার ও সুরকারের।
সারাবাংলা/টিএস/পিএম